নারীবাদের দোহাই দিয়ে কেনো পুরুষবিদ্বেষ আর নোংরামি?

  • তানজিলা আক্তার 
  • ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮

কিছুদিন আগে "নারীরা সমঅধিকার চায়, সমদায়িত্ব পালনে বিমুখ" হেডলাইনে একটা লিখা লিখি। লেখাটা মোটামুটি সাড়া পেলো। সাথে কিছু মানুষ লেখাটার বিপরীতে কথা বললো। প্রথমতই আমার মনে হয়েছে যে নারীবাদী বা নারীবাদ নিয়ে অনেকের ধারনা নেই। আসলেই নারীবাদী জিনিসটা কি এটাই অনেকে জানেনা। পাঠক আপনারা কী জানেন নারীবাদী আর পুরুষবিদ্বেষ আলাদা? 

আপনাদের কয়েকটি আলাদা আলাদা ঘটনা তুলনা করে দেখাবো। মনে আছে ২০১৬ সালে সিলেটে খাদিজাকে নৃশংস ভাবে কুপিয়েছিলো বদরুল নামের এক ছেলে। সারাদেশ সেই ঘটনায় শিউরে উঠে। কুপানোর পরে খাদিজাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আরেক ছেলে, তার নাম ইমরান। পাঠক এই ঘটনা আপনি নিজেই বিশ্লেষণ করুন এক ছেলে কুপালো, আরেক ছেলে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। বলুন সব ছেলে খারাপ? 
ইডেন কলেজের ছাত্রী লাভলী ছুড়ি দিয়ে জখম করলো আলামিন নামের এক ছেলেকে, এই তো মাস দেড়েক আগের ঘটনা। এখন বলেন পৃথিবীর সকল নারী ভালো? 

আমার মনে আছে তখন আমি টেনে পড়ি, বাসায় ফেরার পথে একটা ছোট রাস্তা পার হতে পারছিলাম না, আমাকে ঐ পাশ থেকে একটা হিজরা বললো, "আসো তোমায় পার করে দেই।" আমি ভীত মুখে তার দিকে তাকালাম, সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "ভয় পেয়ো না। আসো পার করে দেই।" আমি তার হাত ধরে পার হলাম। অনেকদিন পর জানলাম ঐ হিজরাটা কাজ করে খায়। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়াকালীন সময়ে মামাতো ভাইকে নিয়ে মামী আসলো বাসায়। হিজারারা বাসায় এসে টাকা তো নিলোই বাসার সবকিছু উল্টাপাল্টা করে রেখে গেলো। এখন বলুন সব হিজরাই খারাপ বা ভালো?

বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে ছেলে হলে খুব খুশি, মেয়ে হলে গোমড়া মুখ অস্বাভাবিক নয়। আমরা বৈষম্যের শিকার। চরমভাবে শিকার। আমি মাঝেমাঝে দেখি আমার বন্ধুর পকেটে টাকা আছে, তবুও তাকে আবার বাসা থেকে টাকা দেয়। কিন্তু বন্ধুর বোনকে সেই তুলনায় কম টাকা  দিচ্ছে । 

আমি এবার বাণিজ্য মেলায় গিয়েছিলাম আমার অফিসের কিছু কাজে। ওখানে এক ফুটপাতের দোকানদারের সাথে গল্প করতে করতে জানলাম যে একই কাজে মেয়ে আর ছেলের ভিন্ন বেতন। একদম একই কাজ, সময়ও এক কিন্তু বেতনটা ভিন্ন। কিন্তু কেনো? কারন মেয়ে বলে তাই। এটা অনেক জায়গায় হয়। নারীবাদ অর্থ নারীর অধিকার আদায়ে কাজ করা। নারীর শিক্ষা, নারীর খাওয়া-পরা, বাকি কাজের অধিকার আদায় করা। 
পুরুষবিদ্বেষ অর্থ পুরুষসমাজের প্রতি বিদ্বেষ। অর্থাৎ পুরুষ সমাজকে না দেখতে পারা, এককথায় ঘৃণা করা। নারীর অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমাদের সমাজের কথিত নারীবাদীরা কি পুরুষবিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছে না? এ প্রশ্নটি আমি পাঠক সমাজকে ছুঁড়ে দিলাম। একজন নারী পুরুষকে ঘৃণা না করেও চলতে পারে, পুরুষকে ঘৃণা না করেও তার অধিকার আদায় করতে পারে। অধিকার আদায় করতে গিয়ে পুরুষ-নারী আলাদা দেয়াল তুলে দেয়াটা কী কোনোভাবে সমাজের জন্যে কাম্য? 

স্বয়ং চার্লস ফুরিয়ে কী এই কথা বলেছে ? কিংবা বেগম রোকেয়া নারী। উনারা কোথাও কি লিখেছেন যে পুরুষদের ঘৃণা করো? আমার তো মনে পরে না। আমরা যে সময়টা ব্যয় করছি পুরুষবিদ্বেষে, সেই সময়টা গ্রামের একটা বাল্যবিবাহ থামাতে পারি এবং তা পুরুষকে সাথে নিয়েই। একজন পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা একটা পথশিশুকে রাস্তা থেকে তুলে ভর্তি করাতে পারি স্কুলে। সংসারে মা হলো প্রাণ। কিন্তু বাবা? বাবা কি কিছুই করেনা? আপনার বোন সব করে। ভাই কিছু করে না? আপনি যদি শিখান বাবা, ভাই ছাড়া দুনিয়ার সব পুরুষ খারাপ। তবে আমি আমার বাবা আর ভাইকে বাদ দিয়ে সকল পুরুষকে ঘৃণা করবো, সাথে আপনার বাবা, ভাইকেও। কারন আপনার বাবা ভাই আপনার, আমার না। আমার কাছে তারা অন্য পুরুষ। নারীবাদ এমন নয় যে পৃথিবীর সকল নারী নিষ্পাপ আর সকল পুরুষ চরিত্রহীন, লম্পট। নারীবাদ মানে অধিকার আদায় করা। সুবিধাবাদী মানুষদের জন্যে সত্যিকারের নারীবাদীরা হাত গুটিয়ে নিচ্ছে আর আমাদের যেই মেয়েদের সত্যিকারের আমাদের সাহায্য দরকার তারা বঞ্চিত হচ্ছে। 

আর ছেলেদের জন্য বলবো আপনারা যেমন সবাই লুইচ্চা না, তেমন সব মেয়েই সুবিধাবাদী না। ভুল মানুষের সাথে দেখা হলে সেটা সমগ্র জাতির দোষ নয়। সকাল বেলা এক টেবিলে বসে নাস্তা করার সময় আপনার পরিবারের সাথে আলোচনা করুন। সবাই এক না। অতঃপর আমি এমন পৃথিবী বানাতে চাইনা যেখানে আমার মেয়ে সকল পুরুষকে ঘৃণা করুক। আর পুরুষ আপনিও এমন পৃথিবী রাখবেন না যেখানে আপনার মেয়ে এক জীবনে মেয়ে হওয়ার আফসোস করবে, সূর্যোদয় থেকে বঞ্চিত জীবন কাটাবে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment