পুরুষের চোখে ফিট থাকতে নিজের উদরকে কষ্ট দিচ্ছেন?

  • ওয়াহিদা সুলতানা 
  • ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮

বয়ফ্রেন্ড বলেছে,"তোমার কোমরের কাছে মাংস বেড়ে গেছে।ড্রেসগুলো কিন্তু ফিটিং হচ্ছে না।"

হাজব্যান্ড বলেছে," বিয়ের সময় তোমার যে ফিগারটা দেখেছিলাম ওটাই জোস্ ছিলো।কী মোটা হচ্ছো দিনে দিনে মনে হয় তিন বাচ্চার মা।ফিগারটা ঠিক রাখতে পারো না?"

এই কথাগুলো অনেক মেয়েই এ যাবৎ কালে শুনে ফেলেছেন আর লজ্জিত হয়েছেন। আমরা মেয়েরা প্রায়শই একটা বোকামো করি। আর সেটা হলো নিজেরা যতোই স্বাধীনচেতা সাজি না কেনো, ছেলেদের চোখে নিজেদেরকে আকর্ষনীয় এবং জিরো ফিগার করে শো আপ করতে আচ্ছা হারে ডায়াট কন্ট্রোল করে প্রায়শই নিজেদের ক্ষুধার্থ উদরকে সাজা দেই। আর এক পর্যায়ে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ি। অথচ দেখুন, ছেলেরা কি কখনো মেয়েদের কাছে নিজেদেরকে আকর্ষনীয় করতে শরীরের উপর স্টীম রুলার চালায়? কক্ষনোই না। বরঞ্চ বাড়ির উৎকৃষ্ট আর তোলা বাছা খাবারটা কিন্তু অনেক পরিবারে ওরাই খায়। আর আমরা মেয়েরা কি করি? 

কেউ কেউ আছেন যারা অলরেডি মা হয়েছেন তাদের কথা বলি। একটা সন্তান গর্ভে ধারনের পর স্বভাবতই মেয়েদের শরীরে একটা পরিবর্তন আসে। চাইলেই কি তার পেট, কোমর,বুক আবার আগের শেপে ফিরে আসে? কদাচিৎ কেউ কেউ তা ফিরে পেলেও না পাওয়াটাই কিন্তু স্বাভাবিক। হিন্দী ফীল্ম দেখে দেখে চোখ ধাঁধানো বাড়ির কর্তাটি যখন  সকলের অগোচরে স্ত্রীকে ওই নিয়ে ভর্ৎসনা করেন তখন সেটি কতোটা মানসিক আঘাত করে তা শুধু সেই স্ত্রীটিই অনুভব করেন। আর বয়ফ্রেন্ডরা যে গার্ল ফ্রেন্ডকে একটু মুটিয়ে গেলেই কি কি বলেন তা আর নাইবা বললাম।

লেখিকা 

আরেকটি বিষয় বলি,কোন কোন পরিবারে আমি দেখেছি হয়তো কখনো নাস্তার টেবিলে সাত সকালে ডিমের শর্টেজ রয়েছে। মা কিন্তু সব্জি দিয়েই রুটিটা খেয়ে নিচ্ছেন। ডিম বেচারা বাবা আর ভাইয়ের খাবারের থালারই সৌন্দর্য্য বর্ধন করে যায়। রাতের খাবারেও সেইম কাহিনী হয় প্রায়শই। সেজন্য স্বেচ্ছায় না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দেয়ার সত্যিই কোন মানে হয় না। কারণ, একজন পুরুষের চোখে নিজেকে আকর্ষনীয় আর সুন্দর করে তুলে ধরতে দিনের পর দিন আপনার ওই আধ পেটা খাবার আপনাকে অজান্তেই টেনে নিচ্ছে অপুষ্টির তালিকায়। এক সময় শরীরে এর একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে। যার ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

লক্ষ্য করুন তো কয়টি পরিবারের পুরুষ ঘরের মেয়ে সদস্যটি কিংবা স্ত্রীর অসুস্থতায় তার পাশে থেকে সেবা করেন? যেটা চাকরী করেও পুরুষের জন্য একটা মেয়ে কিন্তু ঠিকই করে যায়। তাহলে কোন যুক্তিতে আপনি তার চাহিদায় নিজেকে কষ্ট দিয়ে শুকাতে চাচ্ছেন? আপনি নিজের পেটকে ক্ষুধায় ছ্যাকা না দিয়ে পরিমিত খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর খুবই কম্পোলসরি যে বিষয় সেটি হলো এক্সারসাইজ। নিয়ম করে সুবিধা মতো সময়ে হাঁটুন। না পারলে ঘরে বসেই এক্সারসাইজ করুন। তাই বলে রোজকার নিয়ম মাফিক ত্যাগ স্বীকার করতে করতে দয়া করে আর এতোটা আত্মত্যাগী হবেন না, যা আপনাকে ক্ষুধার জ্বালা তাপ সহ্য সমেত অপুষ্টিতে অসুস্থ করে একেবারে হাসপাতাল অবধি পৌঁছে দেয়।

আগেও বলেছি, আবার বলছি। নিজেকে ভালোবাসুন ।নিজের জন্য সুন্দর থাকুন। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মতো পুরুষের চোখে নিজেকে আকর্ষনীয় করে তোলার প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। মূল কথা, যা করবেন নিজের জন্য করুন। নিজের সৌন্দর্য্য,নিজের সুস্থতা নিজের জন্য নিজেই নিশ্চিত করুন।
 

Leave a Comment