পিরিয়ড কি সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ?

  • রেজবুল ইসলাম 
  • ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮

প্রত্যেক মাসের একটি সময়ে মেয়েদের পিরিয়ড হয়ে থাকে। মেয়ে জ্বিন প্রাপ্ত সকল নারী এটার মুখোমুখি হয়।  পিরিয়ড একজন নারীর জন্যে যতই স্বাভাবিক ঘটনা হউক না কেন আদতে নারী পুরুষ কেউই এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনা। প্রায় সবাই পিরিয়ড, স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড নিয়ে এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগে। অশুচি, খারাপ, লজ্জার, অত্যন্ত গোপণ কোন 'রোগ' বলে মনে করে। আর পিরিয়ড যদি হয় পরিবারের কোন টিনএজ সদস্যের তবে তো কথাই নেই। তারা মনে করে পিরিয়ডের কথা প্রকাশ পেলে ইজ্জত চলে যাবে, পরিবারে অন্যান্যদের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না, অন্যরা কী মনে করবে বলে নিজেকে প্রায় লুকিয়ে রাখে। 

পেটে ব্যথা শুরু হলেও কাউকে বলতে পারে না। মারাত্মক পেট ব্যথায় অস্থির হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খাবে, পেটে চাপ দিয়ে রেখে ব্যথা সয়ে নেবার চেষ্টা করবে তবুও বলতে পারবেনা আমার একটু অষুধ লাগবে, একটা প্যাড লাগবে, অথবা এক খন্ড পরিষ্কার কাপড় লাগবে। ব্লিডিং হয়ে জামাকাপড় নষ্ট হলেও না। যেন পিরিয়ড হওয়া অসামাজিক কাজ! টিনএজদের এই মানসিকতা আমরা বড়রা'ই তৈরি করে দিয়েছি। তাদের মনে গেঁথে দিয়েছি পিরিয়ড খুব খারাপ জিনিস, গোপণ রোগ, পিরিয়ড হলে শরীর অপবিত্র থাকে, নাপাক থাকে, পিরিয়ড হলে রান্না ঘরে যেতে পারবে না, খাবার ধরতে পারবে না, নামাজ-পূজা করতে পারবে না। পরিবারের অন্যদের বুঝতে দিলে চলবে না যে পিরিয়ড শুরু হয়েছে! সব সময় লুকিয়ে, আড়ালে রেখে চলতে হবে।

লেখক 

এই পিরিয়ড নিয়ে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মানসিকতা অনেক বেশি কনজারভেটিভ। ওরা পিরিয়ডকে রোগ মনে করে। মনে করে নারীর প্রতি আল্লাহর অভিশাপ আছে বলেই পিরিয়ড হয়। শহরের তুলনায় গ্রামের নারীরা পিরিয়ডকে অনেক বেশী গোপন করে চলে। ওরা জানে না যে পিরিয়ড নারী শরীরের জন্যে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। মাতৃত্বের জন্যে পিরিয়ড হওয়া আবশ্যক। আমাদের দেশে শহুরে পরিবেশে যে সব মেয়ে বড় হয় তারা কেবল উন্নত সেনেটারী ন্যপকিন ব্যবহার করে। এখনও গ্রামের অনেক মহিলা প্যাড ব্যবহার না করে অপরিষ্কার কাপড় ব্যহহার করে। 

বিভিন্ন ফার্মেসীতে একটা গ্যাসের ওষুধ যত সহজে চাওয়া যায় সেনেটারী ন্যাপকিন অতো সহজে চাওয়া যায় না। দোকানে কোন কম বয়সী ছেলে থাকলে মিটকি মিটকি হাসে। এই মিটকি মিটকি হাসার ব্যাপারটা কিন্তু ওর দোষ না। দোষ সমাজের। যদি সব মেয়ে ওর কাছে গিয়ে বলতো প্যাড দাও। তাহলে ও কয়বার আর মিটকি মিটকি হাসবে ওর কাছেও জিনিসটা স্বাভাবিক মনে হবে। স্যানিটারি প্যাড নিয়ে এমন আচরণ করা হয় যেন এগুলো রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ বা তেজষ্ক্রিয় পদার্থ৷ কিনতে গেলে খবরের কাগজে মুড়ে গোপনে দেয়া হয় না হলে তার আলোতে সবাই ঝলসে যাবে। 

সম্প্রতি প্যাডম্যান নামক একটি মুভিতে এই ট্যাবু ভাঙতে প্যাড নিয়ে ছবি তুলে শেয়ার করার একটি ট্রেন্ড চালু করেছে। আমি মনে করি এটার দরকার আছে। ট্যাবু ভাঙার জন্য দরকার আছে।  এর পিছনে বলার জন্য অনেক মানুষ আসবে। এটা পাপ,  এটা করা যায় না । এটা সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। সব কিছু ভেঙে ফেলে যারা এগিয়ে আসছে তাদের জন্য রইলো শুভ কামনা। এবার ভাঙুক ট্যাবু। 

#Break_The_TABOO 
#There_is_nothing_to_be_ashamed_about_it
#Its_natural
#পিরিয়ড_লজ্জামুক্ত_হোক
#সবাই_এগিয়ে_আসুন

Leave a Comment