মাতৃত্ব- পর্ব ২

  • সুদীপ্তা ভট্টাচার্য্য রুমকি
  • মার্চ ১১, ২০১৮

শ্বশুর,শাশুড়ির সাথে হাজব্যান্ডও যখন সেই বিকৃত আচরন করা কে নৈতিক দায়িত্ব মনে করে তখন মানসিকভাবে অসম্ভব বিপর্যস্ত অবস্থায় পতিত হয় সদ্য মা টি। জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনের মুহূর্তটি তখন ভয়াবহ কষ্টের সময় হয়ে দাড়ায়। আমার কাছে মনে হয় একটা মেয়েকে নাস্তানাবুদ করার মোক্ষম সময় হল প্রেগন্যান্সি এবং পোস্ট প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড।মেয়েটির নিজের প্রতিও নিজের বিতৃষ্ণা,অবহেলা জাগিয়ে তোলা সম্ভব এই সময়টায় তার প্রতি দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে ।সে তখন সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে হাপিয়ে ওঠে। নিজেকে খুব অসহায় ভাবে। প্রত্যেকটা প্রেগন্যান্সি স্বতন্ত্র ,স্বতন্ত্র প্রতিটা শিশুও। অমুকের কোন সমস্যাই হয়নি প্রেগন্যান্সি তে, তমুকের বাচ্চা পারলে জন্মের দিন থেকেই হাটা, চলা,কথা বলা সবই করে ফেলেছে এই সমস্ত উদ্ভট উদাহরণ,কথায় কথায় তুলনা সদ্য মা কে শুধু বিপর্যস্তই করে না তার মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি করে।

আমি একজন মহিলা কে চিনি যিনি নিজের পুত্রবধূর স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সি কালীন শারীরিক অসুবিধাগুলোকে প্রাক বৈবাহিক সময় থেকেই বিদ্যমান ছিল এই প্রচারণায় সদা তৎপর থাকতেন।একটু খোজ নিয়ে জানলাম ওনার একবোনের ক্লাস নাইনে কিডনিজনিত সমস্যায় একটা কিডনি অপারেশন করে বাদ দিতে হয়েছিল আর আরেক বোনের সন্তান জন্মের এক বছরের মাথায় হার্টের ছিদ্রজনিত কারনে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়েছিল। নিজে আবার কথায় কথায় বলতেন সন্তানের জন্মের সময় থেকেই লো প্রেশার হয়ে গেছে আর হাড় মড়মড়ে রোগ তো ফ্রি। এর থেকে একটা জিনিস বুঝলাম নিজেদের যেহেতু এই অবস্থা ছিল তাই উনি কল্পনাও করতে পারেন না কোন মেয়ের সুস্থ-সবল অবস্থায় বিয়ে হতে পারে। তিনি জোরজবরদস্তিতে মেয়েটিকে রোগী প্রমাণিত করতে চাইতেন। বিনা কারনে ইচ্ছামত অপমান করতেন সবকিছু নিয়ে সদ্য মা টি কে।

আর উনাদের মত এত বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা যদি উনার বউ এর থাকতো তাহলে তিনি তার পুত্রবধূর বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করতেন না তার স্ববিরোধী নীতি অনুযায়ী। আমি মনে মনে ভাবলাম, ওনার শাশুড়ি যদি ওনার মত এধরনের মানসিকতার হতেন তাহলে উনি হয়তো বুঝতেন মানসিক নির্যাতন কি জিনিস। আর একজন পুরুষেরও হাজব্যান্ড হওয়ার আগে ভাবা উচিৎ,সর্বাবস্থায় পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি মেয়ে কে নিজের জীবনে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করছেন তার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আপনি সক্ষম কি না। তার একার নয় আপনাদের সন্তানটি কে জন্ম দিতে গিয়েই সে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যায়। তার সেই ত্যাগ কে সম্মান করতে যেদিন শিখবেন সেদিনই বিয়ে ও সন্তান জন্ম দেয়ার নাম নেবেন। অন্যের বিশ্বাস,আস্থা,নির্ভরতা নিয়ে হাডুডু খেলার সুপ্ত বাসনায় বুক বেধে দয়া করে ওমুখো হবেন না। পরিবার মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলেও দুর্ভাগ্যবশত বিয়ের পর অনেক মেয়েই শ্বশুরবাড়ি নামক পরিবারে সেই সহমর্মিতা,নিরাপত্তাটুকুই পায় না। নিজের পরিস্থিতিও কাউকে শেয়ার করতে পারে না পরবর্তী অবস্থার কথা চিন্তা করে। ডাঃ তার কথা তার মত করে বলবে,যে সাফার করার সে করবে, যতদিন না সমাজের মানুষ সচেতন হবে,যা চলছে তা চলবে!!​​​​​​​

 

 

 

 

 

Leave a Comment