গল্প : হরেক রকম বড়া ( তৃতীয় পর্ব )

  • ফারজানা আক্তার 
  • ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০

গল্প : হরেক রকম বড়া ( তৃতীয় পর্ব )

কবির হাসান বুদ্ধিমান ছেলে। রাবেয়ার হাবভাব দেখে বুঝে ফেলেছে রাবেয়া তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। রাবেয়াও কবির হাসানের তুলনায় কোনদিক থেকে কম নয়। দারুন মেধাবী ছাত্রী।

পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটিতেও নিজের জাত চিনিয়েছে রাবেয়া। কি মায়াবী চেহারা আর বাচ্চাদের মতো করে কথা বলতো। বাচ্চাদের মতো করে যখন রাবেয়া কথা বলতো তখন রাবেয়ার চেহারার মায়া আরো কয়েকশগুন বেড়ে যেতো।

রাবেয়ার সাথে সময় কাটাতে কবির হাসানের ভালো লাগতো। সেই ভালোলাগা একসময় ভালোবাসতে পরিণত হয়।

মেয়ে বাসায় বসে তার শিক্ষকের সাথে প্রেম করছে। এই বিষয়টি খুব বেশিদিন অজানা ছিলো না রাবেয়ার মা কুলসুম খানমের। কুলসুম খানম ছাত্রী আর শিক্ষকের প্রেমের কথা জানার সাথে সাথে তাদের আলাদা করে দিলেন।

কবির হাসান তার টিউশনি হারায়। কুলসুম খানম নিজের স্বামীর কাছে নিজের মেয়ের প্রেমের কথা গোপন করে যান। স্বামীর সামনে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করান কবির হাসান এখন পড়ানোর সময় কম দেন। দেরিতে আসেন আর তাড়াতাড়ি যান।

কুলসুম খানমকে বেশি একটা মিথ্যা কথা বলতে হয় নি। কারণ রাবেয়ার বাবা আকবর খান নিজের পরিবার থেকে নিজের ব্যবসায়ের দিকে বেশি মনোযোগী। তবে মেয়ের ব্যাপারে তিনি আবার অন্ধ।

ঘরে ঢুকেই আগে মেয়ের খোঁজখবর নিবেন। মেয়ের বেশকিছু বিষয় উনি নিজের হাতে ধরে ধরে খেয়াল রাখেন। শিক্ষক হিসেবে কে আসলো কে গেলো তাতে তার কিছু যায় আসে না। মেয়ের পড়াশোনার পুরো খেয়াল কুলসুম খানম রাখেন আর মেয়ের পোশাক, বেড়ানো, চাওয়া পাওয়ার খেয়াল আকবর খান রাখেন।

কুলসুম খানম ভেবেছিলেন মেয়েকে শিক্ষকের কাছ থেকে আলাদা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই তিনি পরে এই বিষয়ে আর তেমন মনোযোগ দেন নি। কিন্তু তার মেয়ে তো ভালোবাসার মানুষের জন্য নাছোড়বান্দা।

গোপনে কবির হাসানের সাথে রাবেয়া ঠিকই যোগাযোগ রাখে। হুট করে তারা দুইজন সিদ্ধান্ত নেয় তারা পালিয়ে যাবে। দূরে কোথাও গিয়ে বিয়ে করবে, দুইজন সুখের সংসার করবে।

যেই ভাবা সেই কাজ! একদিন স্কুল থেকে পালিয়ে গেলো রাবেয়া। কবির হাসানের হাত ধরে সুখের সংসার করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রাবেয়া পালিয়ে গেলো।

কয়েকদিন হোটেলে থেকে রাবেয়া আর কবির হাসান ছোট্ট একটি বাসা নিয়ে তাদের সংসার জীবন শুরু করলো। রাবেয়া পালানোর সময় তার মায়ের সব গহনা, রাবেয়ার নিজের গহনা আর মায়ের আলমারি থেকে ক্যাশ টাকা নিয়ে পালিয়েছিলো।

কবির হাসান রাবেয়াকে বলে দিয়েছিলো বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কিছু টাকা পয়সা নিয়ে বের হতে। গত মাসের টিউশনির কোন টাকা কবির হাসান পায় নি। তাই তার হাত একদম খালি। রাবেয়া কবির হাসানের কথামত কাজ করেছিলো।

হোটেলে যে কয়দিন ছিলো রাবেয়া আর কবির হাসানের দিন ভালো কেটেছিলো। সংসার জীবন শুরুর দিন কবিরের সেই জবাবে রাবেয়া খুব কষ্ট পেয়েছিলো।

পরে রাবেয়া ভেবেছিলো কোন কারণে হয়তো কবিরের মন খারাপ তাই এভাবে বলেছে। পরে হয়তো তাকে সরি বলবে! কিন্তু সেই সরি আর কখনো রাবেয়া কবিরের মুখে শুনে নি।

'এই দেখো পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনিয়াপাতা, পুঁইপাতা সব কাটা হয়ে গেছে। তোমার কি চিংড়ি মাছ বাছাই করা হলো? ' রফিক সাহেব রাবেয়াকে ডাক দিয়ে বললো।

'এইতো আমারো শেষ। তুমি চুলায় কড়াই বসাও। আমি সব মাখিয়ে নিচ্ছি। ' রাবেয়ার জবাব।

রফিক সাহেব গুনগুন করে গান গাইছে আর রান্নাঘরে কাজ করছে। এই লোকটা বড়া খেতে এতো ভালোবাসে। ডালের বড়া, মাছের বড়া, মাংসের বড়া, বিভিন্ন ধরনের শাকের বড়া।

কত ধরনের বড়ার সাথে যে রাবেয়ার পরিচয় হয়েছে এই সংসারে এসে। রফিক সাহেব নিজে নিজে বড়ার রেসিপি বানায়। মাছ মাংসের প্রতি তার তেমন আগ্রহ নেই। তার আগ্রহ সব এই বড়ার প্রতি। একদিন রফিক সাহেব বড়া খেতে খেতে রাবেয়াকে বলছে তিনি একটা রেস্টুরেন্ট দিবেন। রেস্টুরেন্টের নাম দিবেন হরেক রকম বড়া। নানান ধরণের বড়া পাওয়া যাবে তার রেস্টুরেন্টে।

রাবেয়া শুনে হাসতে হাসতে শেষ। বলে কি এই লোক! রেস্টুরেন্টের নাম হবে হরেক রকম বড়া! সেখানে সবাই বড়া খেতে আসবে। এই কথা এখনো মনে আসলে রাবেয়া বেগম হাহাহা করে হেসে উঠেন।

রাবেয়া বেগম এখন হাসেন। মুখ প্রাণ খুলে হাসেন। ছোটবেলাও এভাবে মন প্রাণ খুলে হাসতেন। মাঝখানের কতগুলো বছর তিনি হাসতে ভুলে গিয়েছিলেন। হাসি তার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো। যে মানুষটার সাথে ভালো থাকবেন বলে তিনি ঘর ছেড়েছিলেন, সেই মানুষটা আসলে তাকে ভালোবেসে না, বরং তার সম্পত্তিকে ভালোবেসে তাকে নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন।

গল্পঃ হরেক_রকম_বড়া

চলবে...

 

Leave a Comment