ইউনাইটেড হাসপাতাল: আইএসও সনদ নিয়ে ভেজালে রমরমা

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ২২, ২০১৮

আইএসও সনদপ্রাপ্ত ইউনাইটেড হাসপাতাল। তবে ভেতরে ভেজালে ঠাসাটাসি। যেখানেই হাত দেওয়া হয় সেখানেই ভেজাল। ল্যাব কক্ষের কোনও জিনিসপত্রের ঠিক নেই। কি কোথায় পড়ে আছে তার ইয়ত্তা নেই। যে ওষুধ নরমালে থাকার কথা সেই ওষুধ জমে আছে, কেউ দেখার নেই। অথচ কক্ষগুলোতে কর্মকর্তা কর্মচারি গিজগিজ করছে। চার ঘণ্টার অভিযান শেষে নকল ওষুধ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ রিঅ্যাজেন্ট রাখার দায়ে রাজধানীর আইএসও সনদপ্রাপ্ত ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। সেই সাথে হাসপাতালটিকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলোর মেয়াদ আগামী ১ এপ্রিল শেষ হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ল্যাব ও ফার্মেসীতে রাখা মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ না সরালে ফের অভিযান চালানো হবে।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরোয়ার আলম চার ঘণ্টার ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তাকে সহযোগিতা করেন র‌্যাব-১ এর একটি বিশাল টিম ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডাক্তার দেওয়ান মো. মেহেদি হাসান। ওষুধ প্রশাসনের দুজন কর্মকর্তাও এ অভিযানে সহযোগিতা করেন। অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে সরোয়ার আলম বলেন, এই হাসপাতালটির এক মাত্র ল্যাবে ঢুকে যা দেখেছি তা দেশের প্রথম সারির হাসপাতালের কাছে মোটেই কাম্য নয়। সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড পাওয়া গেছে যার মেয়াদ গত ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর আজ প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। ল্যাবের প্রত্যেকটা ফ্রিজে দেখা গেছে, ফ্রিজের ৩০ শতাংশ রিঅ্যাজেন্ট ও ওষুধ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। ৫০ শতাংশ ওষূধ আছে যেগুলোর মেয়াদ আগামী৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল শেষ হবে।

সরোয়ার আলম বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডের ভেতরে ওষুধের জেনারেল স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ র‌্যাক ভর্তি করে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় যে, অপারেশনের পর সেলাইয়ের যে সুতা ও সুচ ব্যবহার করা হয় সেগুলোর মেয়াদ আছে মাত্র ৭ দিন। যেগুলো কমপক্ষে এক বছর মেয়াদ থাকতেই ব্যবহার করতে হয়। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আরও বলেন, এখানে যারা দায়িত্বে আছেন তারা এসব নজরদারি করেন না। এরা সেবার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এরা আন অথোরাইজড অ্যাজেন্টদের কাছেও কম টাকায় ওষুধ ক্রয় করেন। যে সব ওষুধে বারকোড মেলে না। মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নাই। ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইএসও মানদন্ডে ঠিক হতে না পারলে, আমরা আইএসও কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করব।

অভিযানে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডা. দেওয়ান মো. মেহেদি হাসান বলেন, সেলাইয়ের সুতা ও সুচের মেয়াদ যতই শেষের দিকে যায় ততই ইনফেকশনের ঝুকি বাড়তে থাকে। এসব ম্যাটারিয়াল আগেই শেষ করতে হয়। নতুবা ফেলে দিয়ে নতুন করে ক্রয় করতে হয়। আর ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্ষেত্রে তো এসব একদম টলারেট করা উচিত নয়। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মেহেদি হাসান বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব কেমিক্যাল দিয়ে রোগীর বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে ফলাফল ভিন্ন আসে। প্রথম অবস্থায় রোগী হয়তো বুঝতে পারে না। পরে যখন জানতে পারে তখন দেশের চিকিৎসা সেবার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তখন তারা দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে যান। আর রোগীর যে ক্ষতি হয় তা হয়তো টাকার বিনিময়েও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। জীবনটাই বিসর্জন দিতে হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ ডা. জাহিদ মাহমুদ অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, ভূল করে এসব কেমিক্যাল রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ যথা সময়ে সরিয়ে ফেলার।

সূত্র : সারাবাংলা 


 

Leave a Comment