অসময়ে তাজিনের চলে যাওয়া এবং কিছু সতর্ক বার্তা!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • মে ২৩, ২০১৮

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও টিভি উপস্থাপক তাজিন আহমেদ চলে গেলেন। মঙ্গলবার বিকাল চারটা ৩৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু এই অকালে তাজিনের চলে যাওয়ার বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করে আমাদের জন্য কিছু সতর্ক বার্তা দিলেন আর্মড ফোর্সেস ফুড অ্যান্ড ড্রাগস ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়ক (ডা.) খোশরোজ সামাদ। খোশরোজ সামাদ তিনি ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোপাইলে এক স্ট্যাটাসে এই প্রসঙ্গে  জানান,

১। চলে গেলেন তাজিন। রংধনুর দেশে, অসীমে চলে গেলে আর কেউ কোনোদিন ফেরে না। তিনিও ফিরবেন না। রেখে গেছেন পরিবারের সদস্য,সহকর্মী, অসংখ্য ভক্ত। তাজিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।মিডিয়া পাড়ায় উচ্চশিক্ষিত হিসেবে তিনি নন্দিত ছিলেন।

২।তিনি দীর্ঘদিন অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন। হঠাত করে শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করলে উত্তরাস্থ রিজেন্ট হাসপাতালে তাকে নেয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্ট – এ রাখা হয়। ‘ রেসপিরেটরী ফেইলিউর ‘ হয় তাজিনের, তারপর কার্ডিয়াক এরেষ্ট। সবশেষে চিকিৎসক কর্তৃক মৃত ঘোষণা।

৩।তাজিন জন্মেছিলেন ১৯৭৫ সালে। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২ বছর। মৃত্য মানুষের অনিবার্য পরিণতি। কিন্তু, সেই মৃত্যু হোক স্বাভাবিক, পরিণত বয়েসে। তাই এই মৃত্যুকে মেনে নেয়া কঠিন।আপাতভাবে অ্যাজমা প্রধানত একটি জেনেটিক রোগ। এই রোগ একবার হলে সাধারণত কোনোদিনই পুরোপুরিভাবে ভালো হয় না। নিয়মিত ওষুধ সেবন, ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা, এলারজি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা , ধূমপান না করা, উত্তেজনা পরিহার করা, নিয়ন্ত্রিত জীবন- যাপন করা, চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত ফলোআপ অ্যাজমাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অন্তত অ্যাজমার কারণে মৃত্যু যে কড়া নাড়বে না সেটি অন্তত প্রত্যাশা করা যাবে।

৪। নাটক, উপস্থাপনার সুবাদে তাজিন সাধরণ মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। ছিলেন ‘ নক্ষত্র ‘। উঁচু স্থান অর্জন করা যেমন কঠিন, রক্ষা করা আরো কঠিন। সেজন্য প্রায় যে কোনো পেশার পদস্থজনদের ‘অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তায়’ থাকতে হয়ে। মানসিক চাপ অ্যাজমাসহ ক্রনিক যে কোনো রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসকে বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ পরিহার করা, ‘ বায়োলজিক্যাল ক্লক ‘মেনে চলা এই ধরণের অসুখ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

৫। তাজিনের বয়স চল্লিশ ছুঁয়েছিলো। এই সময় দেহের ভিতরে অনেক অসুখের বীজ বাসা বাঁধতে পারে। এইসব অনেক রোগেরই লক্ষণ প্রকাশিত হয় না, অথবা যখন প্রকাশিত হয় তখন রোগটি জটিল আকার ধারণ করে প্রায় অনিরাময় যোগ্য হয়ে পরে। তাই, বছরে অন্তত দুবার এবং ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে বেশী ‘thoroughly checkup ‘ করা উচিৎ। দেখে নিন আপনার উচ্চরক্ত চাপ, ডায়াবেটিস আছে কি না। লিভার ফাংশান টেষ্ট করে জেনে নিন লিভার যথাযথ আছে কি না, ইউরিয়া – ক্রিয়াটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে ‘কিডনি’র অবস্থান জেনে নিন।

৬। হাই কোলেস্টেরল এই সময় কালে আরেক নীরব ঘাতকের নাম। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা জেনে নিন। ভালো-মন্দ বিভিন্ন ধরনের কোলেস্টেরল আছে। সেগুলির প্রোফাইল, রেশিও জানা ভালো। এই ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস বিশেষ গুরুত্ববহ। ‘রেডমিট’ কমিয়ে শাকসব্জি খাদ্য তালিকায় রাখুন। ফাষ্ট ফুডকে না বলুন। ভাত, শর্করাজাতীয় খাদ্য কমিয়ে ফল, দুধ, ডিম রাখুন। সোডা জাতীয় পানীয় পরিহার করে প্রচুর পানি পান করুন। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলেই অনেক অসুখকে ‘না’ বলা যাবে বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে প্রফুল্ল রাখবে ।

৭। পুরুষ হলে প্রষ্টেট গ্ল্যান্ড পরীক্ষা করিয়ে নিন, স্ত্রী হলে স্তন বা জরায়ুতে ক্যান্সার যে বাসা বাঁধে নাই সেটি নিশ্চিত হন। বুকে ব্যথা, ধরফর করলে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হোন। মনে রাখা দরকার ‘A stitch in time, saves nine’ তাই মরণঘাতি কোনো রোগও প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করে সুচিকিৎসার মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচান সম্ভব হতে পারে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে আধুনিক মানুষের যুগ যন্ত্রণা অনেক বেশী। খোদ আমেরিকায় মানসিক রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়োছে। তাই স্ট্রেস বা হতাশা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে সেটি লজ্জায় লুকিয়ে না রেখে মানসিক রোগের চিকিৎসককের স্মরণাপন্ন হন। মাদক, এলকোহল, বিড়ি সিগারেটের আরেক নাম ইচ্ছা মৃত্যু।

৮।’Prevention is better than cure’ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার চেয়ে প্রতিরোধে সচেষ্ট হোন। মাত্র চল্লিশ বছরে তাজিনের চলে যাওয়া আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখবার জন্য আরেকবার সতর্ক বার্তা দিয়ে গেল।

সূত্র : Zoombangla

Leave a Comment