বাংলাদেশি অধ্যাপকের নতুন দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • মে ২৪, ২০১৮

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন নতুন দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার করেছেন। এগুলোর নাম হলো নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া (Neumania nobiprobia) ও অ্যারেনুরাস স্মিটি (Arrenurus smiti)। এর মধ্যে ‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ নামটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নাম থেকে নেওয়া হয়েছে। আর ‘অ্যারেনুরাস স্মিটি’ নামক অমেরুদণ্ডী প্রাণীটির নামকরণ করা হয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত অ্যাকারোলজিস্ট হ্যারি স্মিথের নামে।

নতুন এ দুটি প্রাণীর সহ-আবিষ্কারক বেলাল হোসেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বেলাল হোসেন নোয়াখালীর বিভিন্ন পুকুর, খাল ও নদী থেকে মাইটসের নমুনা সংগ্রহ করেন। এতে সঙ্গী হন তাঁর ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের মো. সাইফুল ইসলাম। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী থেকে সংগৃহীত নমুনা প্রথমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারে শনাক্ত করা হয়। পরে ফলাফলের জন্য মধ্য ইউরোপের দেশ মন্টেনিগ্রোতে গবেষক ভ্লাদিমির পেসিকের কাছে পাঠানো হয়। ভ্লাদিমির নমুনাগুলো চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করেন ও সিদ্ধান্ত নেন।

মাইটস দেখতে কিছুটা মাকড়সার মতো। এরা প্রাণিজগতের আর্থোপড পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত। অধ্যাপক বেলাল ও তাঁর গবেষক দলের আবিষ্কৃত প্রাণী দুটি ওই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তাই এরাও আর্থোপড পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত প্রাণী। এদের আকার ২-৩ মিলিমিটার, দেখতে হালকা লাল ও হলুদ বর্ণের হয়। দুটি শুঁড় ছাড়াও এদের চার জোড়া সন্তরণ পা থাকে। এরা সাধারণত পুকুর, নদী বা খালের পানির ওপরের স্তরে ভাসমান উদ্ভিদের সঙ্গে ঝুলে থাকে। খাবার হিসেবে উদ্ভিদকণা গ্রহণ করে। তবে লার্ভা অবস্থায় এরা অন্য জলজ প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং ওই প্রাণী থেকেই খাবার সংগ্রহের কাজ করে থাকে। এরা জীবজগতের খাদ্যচক্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

প্রাণিজগতে সম্পূর্ণ নতুন এ দুই প্রজাতির আবিষ্কারের পেছনে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী বেলালের সঙ্গে সহগবেষক ছিলেন ভ্লাদিমির পেসিক, ভারতের তাপস চ্যাটার্জি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম এবং পোল্যান্ডের আন্দ্রেজেঝ জাওয়াল। চার দেশের পাঁচজন গবেষকের সমন্বিত গবেষণায় সম্পূর্ণ নতুন দুটি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়।

প্রজাতি দুটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য গবেষণার ফলাফল লন্ডন ও নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সিস্টেমেটিকস অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড অ্যাকারোলজিতে পাঠায় গবেষক দল। ১৫ মে ‘First records of water mites from Bangladesh (Acari, Hydrachnidia) with description of two new species by Vladimir Pesic, Mohammad Belal Hossain, Tapas Chatterjee, Md. Saiful Islam and Andrezej Zawal’ শিরোনামে সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

আবিষ্কার সম্পর্কে বেলাল হোসেন বলেন, প্রাণিজগতের প্রতিটি প্রাণীই ইকো সিস্টেমে তথা খাদ্যচক্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এদের একটির অনুপস্থিতিতে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। ফলে ইকো সিস্টেম তার স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জলরাশি অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। গবেষণার অপ্রতুলতা, মানবসৃষ্ট দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবিষ্কারের আগেই অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ থেকে উত্তরণ করা সম্ভব।’

এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নেফটাইস বাংলাদেশি (Nephtys bangladeshi) নামে অমেরুদণ্ডী পলি কীটের নতুন একটি প্রজাতি এবং দেশের বাইরে ব্রুনাইয়ের সমুদ্র এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়োপিসা ব্রুনেইয়েনসিস (Victoriopisa bruneiensis) নামে অমেরুদণ্ডী পলি কীটের নতুন দুটি প্রজাতি আবিষ্কার করেছিলেন এই শিক্ষক।

বেলাল হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে যুক্তরাজ্যের হাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ব্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সম্প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন।

সূত্রঃ প্রথম আলো 

আর/এস 

Leave a Comment