‘তথ্য গোপন করতে চাইলে গুজব ছড়াবেই’

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • আগস্ট ৬, ২০১৮

গণমাধ্যমকে সংবাদ পরিবেশনে বাধা দিয়ে গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা অনভিপ্রেত। কিন্তু এই ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। 

আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকেরা এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। লিখিত বক্তব্য পড়েন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস।

পরে এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গুজবে কান না দেওয়ার যে পরামর্শ দিয়েছেন, আমরা তাতে একাত্মতা পোষণ করছি। কিন্তু গুজবের সৃষ্টি হয় তখনই, যখন তথ্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়। তথ্য গোপন করার কারণে গুজবের উর্বর ভূমি তৈরি হয়। সরকার ও সরকারের বাহিনী কী কারণে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাধা দিয়েছে, কী কারণে ক্যামেরা ভেঙেছে, কী কারণে তাঁদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু সেটারই ফল হচ্ছে গুজব।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পরিশ্রম করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিল। প্রতিবাদের এমন ভাষা হতে পারে তা আমাদের অজানা ছিল। নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা দিয়ে তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তারা যে ৯ দফা দাবি পেশ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তা মেনে নেওয়ার কথা বলা হলেও শিক্ষার্থীরা তাতে আস্থা রাখতে পারছে না। এর বড় কারণ হলো, এ রকম আস্থা রাখার মতো কোনো কারণ বাংলাদেশে হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, পরে কোনো বাস্তবায়ন হয়নি।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আইনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাতে সড়কে সরকারের মন্ত্রী, ভিআইপি, সিআইপিরা যে ধরা পড়ছেন, সে কাজগুলো তো প্রচলিত আইনে অবৈধ। তাই নতুন আইন এলে যে তাদের দিয়ে নতুন কিছু হবে, সে আস্থা শিক্ষার্থীরা কীভাবে পাবে? কোটা আন্দোলনে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও উল্টো পথে গেছে, এই আন্দোলনের বেলায়ও যেকোনো কিছু হতে পারে।

আন্দোলনে জামায়াত-শিবির জড়িত, —সরকারের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যখনই কোনো দাবি ওঠে, তখনই সে আন্দোলনকে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন বলা হয়। স্কুলের যেসব শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছে, কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে তাদের রাজনৈতিক লেবেল লাগানো সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি তুলে ধরেন সাঈদ ফেরদৌস। দাবিগুলো হলো—শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন, যার প্রথম পদক্ষেপ নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ, গ্রেপ্তার ও আটক শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং সংকট নিরসনে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ফাহমিদুল হক, তানজীমউদ্দীন খান, আব্দুল মান্নান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিনা লুৎফা, অর্থনীতি বিভাগের রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, আইনুন নাহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রঃ প্রথম আলো 

আর/এস 

 

Leave a Comment