আরও সিকিউরিটি চাওয়ার সময় এসেছে ​​​​​​​: পাপন

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১৫, ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় অর্ধশত মুসল্লি নিহত হয়েছেন। ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু মসজিদের বাইরে একজন মহিলার সতর্ক বার্তায় ও গুলির শব্দ শুনে সেখান থেকে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার ও অন্যান্যরা কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসে। এই ঘটনায় চারদিকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সিরিজের শেষ টেস্টটি বাতিল করেছে। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন হামলার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন এখন থেকে কোনো দেশে সফরে গেলে আরো বেশি নিরাপত্তা চাওয়ার সময় এসেছে।

নিরাপত্তার বিষয়ে : ‘আমরা যখন বিদেশে যাই। যে দেশেই যাই। বিশেষ করে এই ধরনের দেশে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, যখন যাই, তখন আমাদের দেশে যেই ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হয় সেই ধরনের নিরাপত্তা থাকে না টিমের জন্য। সেটা একটা জিনিস। আর একটা কথা আমরা বলে এসেছি যে এমন ঘটনা কিন্তু যে কোন জায়গাতেই হতে পারে। কাজেই আমার মনে হয় প্রত্যেকটা দেশকেই এখন সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকটা টিমকেই আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। ওদের হয়তো ধারনা থাকতে পারে এটা হয়তো আমাদের দেশে হতে পারে। বা এই সাবকন্টিনেন্টে হতে পারে। ওদের এখানে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই জিনিসটা কিন্তু এখন আর নেই। সিকিউরিটি যেই রকম থাকার কথা ছিল বা আমরা যেমন দিয়ে থাকি, ধারে কাছেও ছিল না। এবং এটা এখানে না। শুধু এখানে না, আমরা যেই জায়গাই সফর করতে যাই আমরা তেমন কোন সিকিউরিটি দেখি না। এই ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তিনটা গ্রুপে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। 

ওখানে প্র্যাকটিসে গিয়েছিল সবাই। ওখানে তো লোক ছিলই। লিয়াজোঁ টিমের একটা অফিসার থাকে। ওদের একটা গ্রুপ গিয়েছিল মধ্যাহ্ন ভোজে। আরেকটা গ্রুপ মাঠেই ছিল। আরেকটা গ্রুপ নামাজের জন্য যাচ্ছিল। ওই মসজিদের সাথে যেই গ্রুপটা ছিল ওদের সাথে কেউ ছিল না। লিয়াজোঁ কমিটি যাদের থাকার কথা ওরা সবাই মাঠে ছিল। ওখানে আমাদের অন্যান্য প্লেয়াররা ছিল, তাদের সাথেই ছিল। সুতরাং যেহেতু তিনটি গ্রুপ হয়ে গেছে, আগে থেকে নামাজে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানিয়েছে কিনা সেটা দেখতে হবে। কিন্তু এটা হয়েছে যখন ওদের সাথে কোন নিরাপত্তারক্ষী ছিল না।’

আরও সিকিউরিটি চাওয়ার সময় এসেছে : ‘আমাদের দেশে কেউ যখন আসে, তখন ওরা যেই ধরনের সিকিউরিটির কথা বলে, যেই ধরনের সিকিউরিটি দিতে হয়, আমরা এখন পর্যন্ত এমন কিছু পাইও নাই। সত্যি কথা বলতে আমরা এটা নিয়ে জোরাজোরিও করি নাই। অন্যান্য দেশেও দেখেছি কেউ করেও না। আপনি যদি পুরা জিনিসটা দেখেন, নিউজিল্যান্ড কিন্তু, আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে এমন কোন ধারনাই তাদের নাই। মানে আছে না যে, এই ধরনের কিছু ঘটলে কি হতে পারে বা কি করতে হবে। ওইখানে পুলিশ যেই সময়টা লেগেছে, এটাই তো অবাক করার মতন। আমার মনে হয় না আমাদের দেশে বা আশেপাশের কোন দেশে এমন কিছু হলে পুলিশ আসতে এত সময় লাগত। তো অবশ্যই আমার মনে হয়েছে ওরা হয়তো অপ্রস্তুত ছিল। এখন হয়তো এই ব্যাপারে আরও সতর্ক হবে। তবে অন্যরা কি করবে জানি না। তবে আজকের ঘটনার পর এটা নিশ্চিত, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখন থেকে যেই দেশেই আমাদের দল যাক না কেন, আমাদের মিনিমান রিকয়ার্ড সিকিউরিটি এনশিউর করতে হবে। এটা যারা দিতে পারবে তাদের ওখানেই আমরা খেলতে যেতে পারব এছাড়া খেলতে যাওয়া সম্ভব না।

যা হয়েছিল : ‘আমাদের ওই গ্রুপটা যখন মসজিদের কাছে যাচ্ছিল, ঠিক মসজিদের সামনে ছিল বাস, তখন সামনে একটা গাড়ি ছিল। গাড়ি থেকে বের হয়ে একজন মহিলা বলছিল ওদিকে যেও না। এর মাঝেই তারা গুলির আওয়াজ পায়। তারপর তারা দেখে যে দুইজন মসজিদ থেকে হয়ে আসছে। এমন যদি হত ওরা আগে এসে গিয়েছে, তাহলে তো আমাদের প্লেয়াররা মসজিদের ভেতরে থাকার সম্ভাবনা ছিল। আল্লাহ অশেষ রহমত সেই জিনিসটা হয়নি। দ্বিতীয় হচ্ছে যে বাসটাও ওখানে ছিল না। আপনারা ভিডিও তে দেখেছেন পরে কিন্তু সে বের হয়েও মেরেছে। আমাদের প্লেয়াররা সামনে থাকলে তখনও আক্রমণ হতে পারত। সেদিক থেকে আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের প্লেয়াররা বেঁচে গেছে। সেখান থেকে ওরা পার্ক হয়ে সোজা চলে যায় স্টেডিয়ামে। আমাদের কিছু বাংলাদেশি সাংবাদিক আটকা পড়েছিল স্টেডিয়ামে। আমরা সাথে সাথে নিউজিল্যান্ড বোর্ডের সাথে আলাপ করেছি, তারা ২০ মিনিটের মাথায় পুলিশ দিয়ে তাদেরকে নিয়ে এসেছে। আমার জানা মতে সকলেই নিরাপদে আছে।’

সিকিউরিটি পারসন সব সময় রাখা দরকার কিনা : ‘আজকের এই ঘটনার পর সব বদলে যাবে। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। এখানে সমস্যা আপনাকে বলি। যদি সিকিউরিটি পারসন পাঠিয়েও দেই এখান থেকে আর তিন গ্রুপ হয় তবে যে গ্রুপ মসজিদে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে যদি যায় তাহলে অন্য গ্রুপের সঙ্গে যদি ঘটে? তখন কি হবে? আমাদের সমস্ত কিছু সামলে নিয়ে দেখতে হবে। কি দরকার? কোন দেশে যখন আমরা খেলতে যাচ্ছি ওই দেশ থেকে কি প্রয়োজন, আমাদের তরফ থেকে কি প্রয়োজন সেটা দেখতে হবে। আমার ধারণা যতটুকু সম্ভব এখন এটা করবে। কারণ, এতদিন আমাদের এটা করা যে দরকার তা মনেই হয়নি, প্রয়োজনই হয়নি। অন্য দেশেরও একই অবস্থা। এমন না যে অন্যরা নিরপত্তা পাচ্ছে আমরা পাচ্ছি না তা না।’

সরকারি পর্যায়ে কথা হয়েছে কিনা : ‘আমি প্রথম যেটা করেছি। যখন শুনেছি ওরা হোটেলে এসে পড়েছে। আমাদের পরারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার উনাকে ফোন করেছি। যে আমাদের দলটাকে যত দ্রুত সম্ভব আমি বাংলাদেশি নিয়ে আসতে চাই। এখন তো ওখানে লকডাউন আছে। কোথাও কিছু চলছে কিনা, এয়ারপোর্ট চালু আছে কিনা সেটাও তো আমরা জানি না। আমি ওকে বলেছি আমরা এখান থেকে টিকেট কাটার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু ওদের ওখান থেকে বের করে প্লেনে উঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য সাহায্য করব। উনি বলেছে আমি এক্ষুনি ব্যবস্থা নিচ্ছি, সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

বিশ্বকাপের নিরাপত্তা : ‘আইসিসি ইভেন্টে নিরাপত্তা কিন্তু আইসিসি নিশ্চিত করে দেয়। ওটার একটা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করে। তারপরও আমার ধারণা বিদেশে এমনিতে যে ধরণের নিরাপত্তা দেখি আমাদের মনে হয় পর্যাপ্ত না, কারণ আমরা তো এরচেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা দেই। কারণ, আমরা যেটা করি সেটা অনেক অনেক বেশি। ইংল্যান্ডে যেহেতু এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে আগে।’

তৃতীয় টেস্ট : ‘এখানে বেসিক্যালি জিনিসটা সিমপল। কিন্তু এখন নিউজিল্যান্ডে যেই পরিস্থিতি। সেখানে খেলার কোন সম্ভাবনাই নেই। সেই জন্য দুই বোর্ডের মধ্যেই আমাদের আলোচনা হয়েছে এবং আমরা খেলাটাকে ক্যানসেল বা কল্ড অফ করেছি।’

সূত্র : রাইজিংবিডি 

Leave a Comment