আপনার শিশু দেরিতে কথা বলছে ?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮

একটি নির্দিষ্ট বয়সে শিশুরা উপুড় হওয়া শেখে, বসা শেখে, হামাগুড়ি দেয়া শুরু করে, সেভাবেই একটি নির্দিষ্ট বয়সে তারা কথা বলা শুরু করে। ঐ বয়সে বা তার কিছু পরে যদি শিশুরা কথা বলা শুরু না করে তাহলে অবশ্যই বাবা-মা কে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সদ্য কথা বলা শিশুর মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ যোগাযোগের ভাষা ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা দ্রুত কথা বলতে শেখে। কিন্তু যদি কোনো শিশু ১৮ থেকে ২০ মাস পার হওয়ার পরও দিনে ১০টির কম শব্দ বলে বা ২১ থেকে ৩০ মাস পার হওয়ার পর দিনে ৫০টিরও কম শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে তাদের ‘লেইট টকিং চিলড্রেন’ বলা হয়।

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ যা হতে পারে:

(১) শিশু বংশগত কারণে দেরিতে কথা বলা শুরু করতে পারে।

(২) মস্তিষ্কের জন্মগত ত্রুটি। তপ্রসবকালীন জটিলতা।প্রসবোত্তর স্বল্পকালীন অসুখ যেমন – ভীষণ জ্বর, খিঁচুনি, জীবাণু সংক্রমণ, মস্তিকের 
ভেতর জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি শিশুর কথা বলার বাধা হতে পারে।

(৩) জিহ্বার ত্রুটির কারণে অনেক শিশু ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না।

(৪) শিশুর মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে শিশু দেরিতে কথা বলা শেখে।

(৫) শিশুর সামনে ঝগড়া করলে বা অত্যধিক উচ্চস্বরে কথা বললে নার্ভাসনেসের কারণে তাদের কথা জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।

শিশুর প্রথম বুলি : শিশুর কথা বলার শুরুটা হয় কিছু টুকরো টুকরো বিচ্ছিন্ন বর্ণ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। শিশু প্রথমে সাধারণত তা, কা, মা এসব বর্ণ উচ্চারণ করে, যার তেমন কোনো অর্থ থাকে না। ছয় থেকে আট মাস বয়সে ধীরে ধীরে এ বর্ণগুলো এক একটি শব্দে রূপ পায়।

আমাদের করণীয় : শিশু যখন থেকে কথা বলার চেষ্টা করা শুরু করবে, ঐ সময় পরিবারের সকলকেই শিশুকে বেশি সময় দিতে হবে। শিশুর আধো আধো বুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মা-বাবা এবং পরিবারে যদি অন্য কোন সদস্য থাকে তাদেরকেও তার সঙ্গে অনেক কথা বলতে হবে। স্পষ্ট এবং শুদ্ধ উচ্চারণে যতটা সম্ভব। শিশু কোনো কথা ঠিকভাবে বলতে না পারলে নিজের মতো করেই উচ্চারণ করে। এতে বাড়ির মানুষেরা অনেক সময় খুশি হয়ে থাকেন। এবং সবাই দেখা যায় আদরের শিশুটির সাথে তাল মিলিয়ে ভুল উচ্চারণেই শব্দগুলো উচ্চারণ করতে থাকেন। কিন্তু এতে করে কিন্তু ক্ষতিটা শিশুরই হয়। সে ভুল বললে বড়রা সেটা অবশ্যই ঠিক করে বলবে যেন শিশুটি শুনতে শুনতে ঠিক করে বলে।

শিশুকে কথা না বলতে পারা, বা ভুলভাবে বলার জন্য ধমক দেয়া যাবে না এতে শিশুর মধ্যে ভয় দানা বাঁধে এবং পরে সে কথা বলতে অনাগ্রহী হয়ে যেতে পারে। তার আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। শিশুর কথা বলা শেখার জন্য তার সঙ্গে বেশি করে কথা বলার কোনো বিকল্প নেই। শিশুকে বারবার শোনাতে হবে নানা ধরণের ছড়া বা ঘুমপাড়ানি গান। একসময় সে হয়তো নিজের মতো করেই ওগুলো বলতে চেষ্টা করবে। শিশুকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চেনাতে হবে। বিভিন্ন রঙিন বই নিয়ে বইয়ের ছবিগুলোর নাম স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে হবে। তাহলে শিশু শুনে শুনে দ্রুত কথা বলা শিখবে। শিশুরা শুনে শুনেই কথা বলা শেখে।

শিশুরা খেলতে খেলতেও অনেক কিছু শেখে। সঠিক খেলনা বাছাই করাও কিন্তু কথা বলা শেখানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।রঙিন বই এগুলো বেশ ভালো খেলনা। খেলনাগুলোর কোনটা কি রঙ সেগুলো বারবার শিশুকে বলবেন। মা রান্না করার সময় শিশুকে কাছে কিন্তু নিরাপদ দূরত্বে বসিয়ে বিভিন্ন সবজির নাম বলা, মশলার নাম বলা, রঙ চেনানো, এটাও কিন্তু কথা বলা শেখানোর জন্য ভালো একটা পন্থা। তবে সব চেষ্টা করা এবং শিশুর দুই বছর পার হবার পরেও কথা না বলে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্পিচ থেরাপির সহযোগিতা নেয়া ভালো।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment