বন্ধ্যা দম্পতির জন্য বিকল্প সহজ কিছু সমাধান

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮

একটি শিশুর সাথে আসলে নতুন করে বেঁচে ওঠে বাবা-মাও। সন্তানের পথচলাই হয়ে ওঠে তাদের জীবনের পথ। জীবন আবার অর্থবহ হয়ে ওঠে মানুষের কাছে সন্তানের আগমনে। যারা সন্তান চান কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে স্বামী বা স্ত্রীর ভিতরে কোনো সমস্যার কারণে সন্তান ধারণ করতে পারেন না তাদের সমবেদনা জানানোর ভাষা হয়তো এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। যারা এ পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যান একমাত্র তারাই বোঝেন শিশুহীন একটি পরিবার মাঝে মাঝে আসলে কতটা শূন্য আর নিষ্প্রাণ। মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন প্রতিটা দম্পতি তাদের ভিতরে একটি শিশুকে চায়, তাকে লালন পালন করে পৃথিবীতে রেখে যেতে চায় তার চিহ্ন। 

প্রাকৃতিক কিছু ব্যাপার থাকে যা আমরা এড়াতে পারি না। বাচ্চা ধারণ করতে না পারাও তেমনই একটি ব্যাপার। এরকম দৃষ্টিভঙ্গিও থাকা জরুরী। যারা সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের হতাশ হওয়া যাওয়ার কারন নেই একেবারেই। মেনে নিয়েও জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়। আর অন্য উপায়েও মা-বাবা হওয়ার সুযোগও রয়েছে। মা-বাবা হওয়ার জন্য লাগে সুন্দর একটি মন। শুধুমাত্র শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর ব্যাপার নয় এটি।এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত। এছাড়া পরিবারে একটি শিশুকে স্বাগত জানানোর আরো উপায় রয়েছে। 

টেস্ট টিউব বেবি : বন্ধ্যা দম্পতিদের জন্য টেস্ট টিউব বেবির অপশন বেশ নতুন। অনেকে মনে করেন টেস্ট টিউবে হয় বুঝি বাচ্চা। ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। এ পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রাণু আর নারীর ডিম্বানুকে ল্যাবে নিষিক্ত করা হয়। তারপর তা প্রতিস্থাপিত করা হয় নারীর গর্ভে। এবং মায়ের গর্ভেই বাচ্চাটি বড় হয় এবং সময়মতো ভূমিষ্ট হয়। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে ইতোমধ্যেই অনেক বন্ধ্যা দম্পতি বাচ্চা লাভ করেছেন। বাংলাদেশেও এখন এই পদ্ধতিতে বাচ্চা নেয়া যায়।   

সারোগেসি : স্বামী স্ত্রীর ভিতরে যদি স্ত্রী কোনো কারণে বাচ্চা ধারণে অক্ষম হন তাহলে অন্য কোনো নারীর গর্ভে বাচ্চা ধারণ করিয়ে নিলে তাকে সারোগেসি বলে। যদিও এ পদ্ধতি আমাদের দেশে সেভাবে দেখতে পাওয়া যায় না। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। অনেকেই সারোগেট মাদার হন সেখানে। আবার অনেকে এ পদ্ধতিতে বাচ্চা ঘরেও আনছেন। 

দত্তক : দত্তক হলো কোনো শিশুকে লালন পালনের দায়িত্ব নেয়া। আমাদের দেশে এমন অনেক শিশু আছে যাদের মা-বাবা নেই। তেমন কোনো বাচ্চাকে দত্তক নিতে পারেন বন্ধ্যা দম্পতিরা। তবে আমাদের দেশের আইনে দত্তক প্রসঙ্গে তেমন কিছু নেই। চাইলে কেউ অভিভাবক হতে পারেন শিশুর। কিন্তু অভিভাবক হওয়া আর দত্তক নিয়ে বাচ্চার পিতা-মাতা হওয়া এক নয়। দত্তক সংক্রান্ত আইন প্রননয় নিয়ে অবশ্য অনেক দিন ধরেই কাজ চলছে। কারণ পালিত সন্তান অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এখানে অনাথ শিশুর সংখ্যাও কম নয়। নিজের পেটের বা ঔরসজাত না হলেও দত্তক নেয়া সন্তানকে সুশিক্ষায় লালিত পালিত করলে সে নিজের সন্তানের চেয়েও আপন হয়ে উঠতে পারে। এভাবে বন্ধ্যা দম্পতিদের সন্তানের আকাঙ্ক্ষা মিটতে পারে সহজে। 

চিকিৎসা : বন্ধ্যা দম্পতিদের জন্য নানা রকম চিকিৎসাও কিন্তু রয়েছে। সেগুলো করার কথা ভাবতে পারেন। একটু সময় নিয়ে চেষ্টা করলে ভালো ফল আসতেও পারে। শরীরের যত্ন নিন। ইয়োগা করা সাঁতার কাটা এমন অনেক অভ্যাসের মাধ্যমে নিজের অনেক কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব। মানুষের শরীর একটি জাদুর মতো। কি থেকে যে কি হয়ে যায় সেটা হতাশ হয়ে বসে থাকলে বুঝতে পারবেন না। আশাকে বাঁচিয়ে রাখুন, নিজেও বেঁচে থাকুন।

বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক রকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যা পুরোটাই কুসংস্কার। কেউ তো আর ইচ্ছা করে বন্ধ্যা হয়ে যায় না! এটা প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। অবুঝ মানুষের কথা ভেবে মন খারাপ করে তো লাভ নেই। ভেবে দেখুন তো প্রতিদিন কত মানুষ মারা যায় শুধু যুদ্ধে। এমন একটা পৃথিবীতে বাচ্চা ধারণ করতে না পারা অনেক ছোট একটা সমস্যা। আমরা জানি যে বাচ্চা হচ্ছেনা এমন দম্পতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিক চাপ এবং হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেন না। আপনিও এমন অবস্থায় থাকলে ঘাবড়াবেন না। আপনার দরকার কাউন্সেলিং। একজন প্রফেশনাল কাউন্সেলর আপনাকে সামাজিক চাপ উপেক্ষা করা এবং আপনার নিজের লাইফ থেকে শক্তি খুঁজে নিতে সাহায্য করতে পারবেন।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment