বন্ধাত্ব এড়াতে ওভুলেশন বা ডিম্বোস্ফোটন সম্পর্কে ধারণা রাখুন।

  • রেজবুল ইসলাম 
  • ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮

একজন পুরুষের প্রতদিন শুক্রাণু উৎপাদন করতে পারে। এদিকে নারী প্রায় ১০ থেকে ২০ লক্ষ্য ডিম্বানু নিয়ে জন্ম গ্রহন করে এবং তার অল্প কিছু মাত্র জীবনকালে অবমুক্ত করে।  আবহাওয়ার পার্থক্যভেধে নারীর ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সে প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়। পিরিয়ড শুরু হবার সময়কালে মাত্র ৩ লক্ষ ডিম্ব সক্রিয় থাকে, তার পুর্বেই বেশিরভাগ ডিম্বানু নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। 

ওভুলেশন কী: ওভুলেশন বা ডিম্বোস্ফোটন সে সময়টাকে বলে যখন ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু অবমুক্ত হয়ে ফেলপিয়ান টিউবে অবস্থান করে এবং নিষিক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।প রবতীতে তা ক্রমশঃ গর্ভাশয়ের এর দিকে অগ্রসর হয়। তার এই যাত্রাপথে যদি কোন শুক্রানু দ্বারা ডিম্বানুটি নিষিক্ত হয় তবে তা গর্ভাশয়ে গিয়ে বসে যাবে। যাকে আমরা নারীর গর্ভধারন বলি। আর যদি ডিম্বানুটি কোন পুরুষের শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত না হয়, তবে তা বিচূর্ন হয়ে কিছু রক্তকনিকা সহ মাসিক ঋতুচক্রের সময় নির্গত হয়ে যাবে। এসময় জরায়ুর দেয়ালও নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রতিস্থাপিত হওয়ার সুবিধার জন্য পুরু হয়ে ওঠে। যদি গর্ভধারণ না ঘটে তবে তাও মাসিক ঋতুচক্রের সময় বেড়িয়ে আসে।

ওভুলেশন বা ডিম্বোস্ফোটনের পাঁচ দিন আগে থেকে ওভুলেশনের দিন পর্যন্ত সময়কে সবচাইতে বেশী উর্বর সময় ধরা হয়ে থাকে যদিও শেষ তিন দিন গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশী। ওভুলেশন নির্ণয়ের কোন অব্যর্থ পদ্ধতি নেই। তবে কিছু কিছু পদ্ধতিতে এর সময় সম্পর্কে ধারনা করা যায়। এ সময়ের মধ্যে মিলিত হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ডিম্বস্ফোটনের সঠিক সময় নির্ধারণ সম্ভব না, যদি না আপনি ফার্টিলিটি সচেতন হোন। অধিকাংশ নারীর মাসিক শুরুর ১০-১৬ দিন আগে ডিম্বস্ফোটন হয়।

আরও পরিস্কার করে বলতে গেলে মাসিকের প্রথম দিন থেকে একজন নারীর মাসিক চক্র গণনা করা হয়। এর কিছুদিন পর তার ডিম্বাস্ফোটন হয় এবং তার ১০-১৬ দিন পর তার আবার মাসিক হয়। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মাসিকের গড় চক্রকাল হচ্ছে ২৮ দিন অন্তর অন্তর। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর কিছু বেশি অথবা কম সময়েও মাসিক হতে পারে, যা অস্বাভাবিক নয়। ডিম্বোস্ফোটন ঠিক কখন হয় তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়, তবে এটা বলা ভুল হবে যে সব মহিলারই মাসিক চক্রের ১৪ দিনের দিন ডিম্বোস্ফোটন হয়। যে মহিলাদের মাসিক নিয়মিত হয় এবং মাসিক চক্র ২৮ দিন তাদের বেলায় এটি সঠিক, তবে যে মহিলাদের মাসিক চক্র এর থেকে ছোট, বা লম্বা বা অনিয়মিত, তাদের বেলায় এটি প্রয়োজ্য নয়। আপনার মাসিক চক্র যদি ৩৫ দিনের হয়, তাহলে আপনি উর্বর থাকবেন আপনার মাসিক চক্রের ১৯ দিন থেকে ২৫ দিনের আশেপাশে, ১৪ দিনের দিন নয়। আবার আপনার মাসিক চক্রি যদি ছোট হয়, ধরুন ২৩ দিন, তাহলে আপনার হয়তো ডিম্বোস্ফোটন হবে আপনার মাসিক চক্রের ৭-১৩ দিনের মধ্যে এবং আপনি সেই সময়টুকু উর্বর থাকবেন।

আগে যেমন বলা হয়েছে, একজন মহিলার শরীরে শুক্রানু ঢোকার পর তা ৪-৫ দিন বেঁচে থাকে। আপনি যদি গর্ভবতী হতে চান, তাহলে আপনাদেরকে এক-দুই দিন পর পর মিলিত হতে হবে। এর ফলে আপনার যখনই ডিম্বোস্ফোটন হয়ে ডিম্বাণু নি:সরণ হোক না কেন, সব সময়ই শুক্রানু আপনার ডিম্বোনালীতে থাকবে এবং আপনার ডিম্বানুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। যে মহিলাদের মাসিক চক্র অনিয়মিত তাদেরকে এই পদ্ধতি মেনে চলতে বলা হয়। আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি গর্ভবতী, তাহলে গর্ভধারণের লক্ষণসমূহ জেনে নিন, এবং কি কি টেস্ট করে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন তা জানুন।

গর্ভাবস্থা যেভাবে এড়িয়ে চলবেন : আপনি যদি গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলতে চান, তাহলে বিভিন্ন রকমের গর্ভনিরোধ পদ্ধতি আছে যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন। আপনাদের মত দম্পতির জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা জেনে নিন। কনডম হচ্ছে একমাত্র গর্ভনিরোধ পদ্ধতি যা গর্ভাবস্থা এবং যৌনরোগ সংক্রমণ দুটোই প্রতিরোধ করে। ঠিক কখন আপনার ডিম্বোস্ফোটন হবে তা সঠিকভাবে জানা কষ্টকর ব্যাপার। তাই আপনি যদি গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলতে চান, অনিরাপদ মিলন করার জন্য মাসিক চক্রে কোন নিরাপদ সময় ঠিক নেই। যে নারী গর্ভবতী হতে চাইছেন না, তার অনিরাপদ মিলনের ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। যে মহিলার মাসিক চক্র ছোট তিনি মাসিকের সময় সহবার করলেও তার গর্ভাবস্থার ঝুঁকি থাকে। এর কারণ পুরুষের শুক্রানু একজন নারীর ডিম্বনালীতে প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত বেচেঁ থাকতে পারে। এবং যে মহিলার মাসিক চক্র ছোট তার শরীরে মাসিক শেষ হওয়ার পরপরই ডিম্বোস্ফোটন হতে পারে। 

আপনার যোনীপথে যে লালা নি:সরণ হয়, তা মাসিক চক্রের সাথে সাথে বদল হয়। যখন আপনার ডিম্বোস্ফোটনের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন এই লালা পাতলা এবং পিচ্ছিল হয়ে যায়, অনেকটা ডিমের সাদার মত। আপনার শরীরের তাপমাত্রা ০.৪-০৬ ডিগ্রি ফারেন হাইট বেড়ে যায় যখন আপনার ডিম্বোস্ফোটন হয়। আপনি যদি ৪ থেকে ৫ মাস এই সব লক্ষণসমূহ তীক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করেন এবং আরও আরও যে শারীরিক লক্ষণ হয়, সেই সব যদি দেখেন-যেমন তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি, তাহলে আপনি নিজেই মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন আপনার কখন ডিম্বোস্ফোটন হচ্ছে।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment