জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড!

  • রেজবুল ইসলাম 
  • মার্চ ১, ২০১৮

জরায়ুর পেশির অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে যে টিউমারটি হতে দেখা যায় তা হলো ফাইব্রয়েড বা সায়োমা। সাধারণত প্রজননক্ষম বয়সে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের টিউমার দেখা দেয়। ফাইব্রয়েড এক ধরনের নিরীহ টিউমার, এটি ক্যান্সার নয়। টি ইউটেরিন মায়োমা (Uterine Myoma) ফাইব্রো মায়োমা, লাইওমায়োমা নামেও পরিচিত। জরায়ু টিউমার বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। ছোট টিউমার দেখতে মটরশুটির দানার সমান এবং বড় আকারের টিউমার কখনো কখনো বড় তরমুজের সমান হতেও দেখা যায়। টিউমারের আকার সময়ের সঙ্গে বড় বা ছোট হতে পারে বা কখনো মিলিয়ে যেতেও দেখা যায়। বড় ফাইব্রয়েড এর কারনে জরায়ুর আকার পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং তা ব্লাডার এবং পরিপাকতন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মূলত মহিলাদের জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে। জরায়ুর পেশিতে ও ভেতরের ত্বকে, ফেলোপিন টিউবের মুখে, ব্রডলিগামেন্ট ও ডিম্বাশয়ের পাশে ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হতে পারে।

কেন হয়ঃ জরায়ুর পেশির অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে যে টিউমারটি হতে দেখা যায় তা হলো ফাইব্রয়েড বা সায়োমা। সাধারণত প্রজননক্ষম বয়সে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের টিউমার দেখা দেয়। ফাইব্রয়েড এক ধরনের নিরীহ টিউমার, এটি ক্যান্সার নয়।অনেক সময় গাত্রে বা জরায়ু গহ্বরে নানা ধরনের টিউমার সৃষ্টি হতে পারে। এর আকার মটরকলই থেকে আধা কেজি পর্যন্ত এবং এক সাথে ৮-১০টি পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কোনো টিউমার থেকে পুঁজ রক্ত বের হতে পারে আবার কোনো কোনো টিউমার থেকে এ জাতীয় স্রাব নাও হতে পারে। একে Fibroma Myoma/Fibroid Myoma বলে।

বন্ধ্যাত্ব সমস্যার জন্য টিউমার অপারেশন করার আগে কিছু শর্ত পূরণ করা জরুরী। বন্ধ্যাত্বের জন্য অন্য  কোন কারণ আছে কিনা তা দেখে নেওয়া, হিস্টারো স্যালফিংগোগ্রাম  বা ল্যাপারোস্কপি করে ফেলোপিয়ান টিউব (ডিম্বনালী) খোলা কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে , স্বামীর শুক্রানু বা বীর্য নরমাল থাকতে হবে। জরায়ুতে টিউমার থাকা অবস্থায় গর্ভধারণ হয়ে থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা কোন অসুবিধা করে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের কারণে মা এবং সন্তানের বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে,যেমন- গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে বিশেষ করে  টিউমারটি যদি সাব মিউকাস হয়। কারণ সাব মিউকাস টিউমার জরায়ুর ভিতরে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রুণ এবং প্লাসেন্টার স্থাপনকে বাধাগ্রস্থ করে। প্লাসেন্টা যদি টিউমারের উপর অবস্থিত হয় তবে অনেক সময় প্লাসেন্টা সেপারেশন হয়ে অ্যান্টি পারটাম হেমোরেজ (রক্তপাত) হতে পারে।  এছাড়া বাচ্চার ওজন কম হওয়া, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা), সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়া ইত্যাদি জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রেগন্যান্সির কারণে এই টিউমারেরও কিছু পরিবর্তন হয় যা জটিলতা তৈরি করে। যেমন, জরায়ু বড় হবার সাথে সাথে টিউমারের আকার ও সাইজ পরিবর্তন হতে পারে। অনেক সময় টিউমারের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়ে অথবা পানি জমা হয়ে পেটে প্রচন্ড ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
ফাইব্রয়েডের কারণে অনেক সময় নরমাল ডেলিভারির পথ বাধাগ্রস্থ হয় এবং সিজারের প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়াও ডেলিভারির সময় এবং এর পরবর্তীতে অধিক রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে এবং সাবধানতা অবলম্বন করার  দরকার হয়।

অনেক মায়েরা এ সময় জানতে চান সিজারের সময় টিউমার ফেলে দেওয়া যায় কি না। এটি নির্ভর করে টিউমারটি কোথায় অবস্থিত এবং এর আকার আকৃতির উপরে। জরায়ুর বাইরের দিকের টিউমার (সাব সেরাস টিউমার) ফেলে দেয়া গেলেও অন্যান্য টিউমার অপসারণ করা হয় না কারণ এ সময় অধিক রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। আবার ডেলিভারির পর অনেক টিউমার আকারে ছোট হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কোন অপারেশন নাও লাগতে পারে।

Leave a Comment