শিশুদের গলায় কিছু আটকে গেলে কী করবেন?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ৮, ২০১৮

সাধারণত ছোট্ট শিশুদের যেসব খেলনা দেওয়া হয় সেগুলো খুব ছোট হয় না, মাথা সূচালো বা ধারালো থাকে না। শিশুদের খেলনা কেমন হবে, এই বিষয়টি যারা খেলনা প্রস্তুত করেন তারা জানেন। শিশুর খেলনা তৈরির বিষয়ে খেলনাটি বয়সভেদে শিশুর জন্য কতটুকু নিরাপদ তা বিশেষভাবে চিন্তা করা হয়। শিশুর খেলনা নিয়ে অনেক গবেষণা করা হয় উন্নত বিশ্বে। উদ্দেশ্য একটাই খেলনাটি যেন শিশুর জন্য নিরাপদ হয়। এ কারণে অনেক খেলনার গায়েই লেখা থাকে, খেলনা কোন বয়সের শিশুর জন্য প্রযোজ্য। ছোট্ট শিশুর খেলনা নিয়ে নিরাপত্তার কথা খেলনা প্রস্তুতকারীরা ভাবলেও অনেক অভিভাবকই বিষয়টি নিয়ে ততটা ভাবেন না। এতে অনেক সময়ই ছোটখাটো সমস্যার সৃষ্টি হয়।  সাধারণত যেসব বস্তু গলায় আটকে যায়

*শিশুদের ক্ষেত্রে – পয়সা, খেলনার অংশবিশেষ ইত্যাদি

*বড়দের ক্ষেত্রে – মাংসের হাড়, মাছের কাঁটা, কৃত্রিম দাঁত ইত্যাদি।

*প্রবীণদের ক্ষেত্রে – বড় মাংস পিণ্ড, কৃত্রিম দাঁত ।

*অসাবধনতা বশত – ব্লেড, সেপটিফিন, পেরেক , সুই 

গলার যে স্থানটি আটকে যায়:

•অন্ননালি বা ইসোফেগাসের শুরুতে যে স্ফিংটার বা স্থিতিস্থাপক পথবন্ধনী থাকে সেখানটায়। সাধারণত বড় জিনিস যেমন – পয়সা, কৃত্রিম দাঁত এই অংশে আটকায়।

• ইসোফেগাসের নিচের অংশে। এই অংশে সাধারণত ছোট জিনিসগুলো আটকায় যেমন- হাঁড়, কাঁটা ইত্যাদি। তবে কোনো বস্তু কোথায় আটকাবে তা বলা মুশকিল।

যেকোনো স্থানে যে কোনোটি আটকাতে পারে। তবে অন্ননালির যে অংশগুলো বেশি সরু কিংবা আঁকাবাঁকা সেই সব অঞ্চলে এ ধরনের জিনিস বেশি আটকায়।

গলায় কোনো জিনিস আটকে গেলে কী হয়?

• ব্যথা : কোথায় আটকালো সেই অঞ্চলভেদে ব্যথা হবে। অন্ননালির ওপরের দিকে আটকালে ব্যথা হবে গলায়, মাঝপথে আটকালে ব্যথা হবে গলার নিচে বুকের সবচেয়ে ওপরের দিকে। আর নিচের দিকে আটকালে বুকের মাঝে ব্যথা হবে।

• ঢোক গিলতে অসুবিধা : এ বিষয়টি নির্ভর করে গিলে ফেলা বস্তুর আকার আকৃতি ইত্যাদির ওপর।

• গলার ভেতরে লালার উপস্থিতি : ওপরের দিকে আটকালে সাধারণত লালা প্রথমত গলায় জমতে থাকে এবং গলা দিয়ে নিচে নামতে না পেরে মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে। 

• শ্বাসকষ্ট : কারো কারো শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। গলার স্বর পরিবর্তন হয়। শ্বাসনালির ওপরের অংশ ফুলে যাওয়ার জন্য এমনটি হয়।

কীভাবে বোঝা যায় গলায় কিছু আটকালো : প্রথমত ঘটনার ইতিহাস সংগ্রহ করতে হবে। কোনো কিছু খেয়ে ফেলল কি না সে বিষয়ে সন্দেহ থাকতে হবে। কৃত্রিম দাঁতের ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশি বৃদ্ধরা অনেক সময় রাতে ঘুমের মধ্যে হয়তো খুলে রাখতে ভুলে যান। রাতে হয়তো গিলে ফেলেন। এটি হয়তো আর ডাক্তারকে বলতে চান না। ডাক্তার সন্দেহবশত এক্স রে করালে দেখা যায় অন্ননালিতে কৃত্রিম দাঁত আটকে গেছে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। মা- বাবা কেউই বাচ্চা যেসব জিনিস নিয়ে খেলে সে বিষয়ে বলতে চান না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কেউ কেউ উল্টো  বলেন, না না আমার ছেলে / মেয়ে খুব শান্ত, ও কিছু মুখে দেয় না । কিন্তু বিষয়টি শিশু শান্ত বা অশান্ত, তার ওপর নির্ভর করে না।
স্বভাবসুলভভাবেই শিশুরা এ সময় বিভিন্ন জিনিস মুখে নেয়, গিলে ফেলে, নাকের মধ্যে ঢোকায়, কানের মধ্যে ঢোকায়। এটি অস্বাভাবিক বা অতি দোষের কিছু নয়। বড়দের ক্ষেত্রে বিষয়টি অসাবধাণতা বশত হলেও শিশুরা কাজটি শিশুসুলভ স্বাভাবিক আচরণ থেকেই করে থাকে।  এ সময় রোগীর উপসর্গ যেমন –

•গলাব্যথা। গলাব্যথার জন্য শিশু সব সময় কাঁদতে থাকে।

• কোনো কিছু গিলতে না পারা

• ঢোক গিললে ব্যথা পাওয়া

• শ্বাসকষ্ট হওয়া

• শিশুদের ক্ষেত্রে- কোনো কিছু খেতে না চাওয়া। আর এই খেতে না চাওয়ার কারণে শিশু ক্রমশ অসাড় হয়ে যায়। 

গলার কোনো কিছু আটকালে কী করবেন : গলায় কোনো কিছু আটকালে তা নিজে নিজে বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়। তাতে বিপত্তি বাড়বে। গলায় কিছু আটকে আছে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখে কোনো কিছু খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দিয়ে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত হলে মুখের ভেতর দিয়ে সেটি বের করে আনতে হবে। অনেক সময় এ জন্য অজ্ঞান করার দরকার হয়। বের করতে দেরি হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে অন্ননালির নিচের দিকে আটকালে অনেক সময় বুক কেটে বের করতে হয়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ

Leave a Comment