চুল ঝড়ে পড়া বা অ্যালোপেশিয়ার নানা কারণ! জানুন বিস্তারিত 

  • রেজবুল ইসলাম 
  • মার্চ ২৮, ২০১৮

আমরা সবাই জানি চুল পড়া সমস্যা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে চুল ঝরে পড়া সমস্যাকে অ্যালোপেশিয়া বলা হয়।

চুল ঝরে পড়ার ধরন : লক্ষণ ও কারনগত ভিন্নতা অনুযায়ী চুল ঝরে যাওয়ার বিভিন্ন ধরন দেখা যায়। নিচের আলোচনা থেকে চুল ঝরে পড়ার কিছু সাধারন ধরন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব।
 
নারী এবং পুরুষের মাথায় টাক পড়ার ধরন : পুরুষের ক্ষেত্রে টাক পড়া খুব সাধারন চুল ঝরে পড়ার একটি ধরন। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও এ সমস্যাটি হয়ে থাকে। এবং এথেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায় নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই। পুরুষের  টাকের ক্ষেত্রে  চুলের  এক  কিনারা  থেকে  শুরু  হয়ে  কপালের  পাশে  চুল   পাতলা  হয়ে উঠে  যায়। নারীদের সাধারনত  মাথার  তালুর  চুল পাতলা  হয়ে  টাক   সৃষ্টি  হয়।  নারী পুরুষের  টাকের  সমস্যাকে   অ্যান্ড্রোজেনিক বা  অ্যান্ড্রোজেনেটিক  অ্যালোপেশিয়া বলা হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিকভাবে টাক হয়ে থাকে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি প্রযোজ্য কিনা বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
 
অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা : অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা মূলত টাক হওয়ার একটি অংশ, যা ভালোও হয়। এটি যেকোন বয়সে হতে পারে, তবে টিনএজার এবং তরুনদের বেশী হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ২০ বছরের কম বয়সীদের হতে দেখা যায়। অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা রোগ প্রতিরোধজনিত সমস্যা থেকে হতে পারে। অনেকে বংশানুক্রমিক সমস্যা মনে করেন। তবে অনেকক্ষেত্রেই প্রায় এক বছর পর নতুন চুল গজাতে দেখা যায়।
 
স্ক্যারিং অ্যালোপেশিয়া : স্ক্যারিং অ্যালোপেশিয়া চুল পড়ার একটি জটিল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত । চুল ঝরে পড়ার সাথে সাথে অন্যান্যজটিলতাও সৃষ্টি হয় । এই ক্ষেত্রে মাথার ত্বকের লোপকূপ পুরোপুরি বিনষ্ট হয় । অর্থাৎ চুল উঠে গেলে আর নতুনকরে গজায় না । স্ক্যারিং অ্যালোপেশিয়ার ক্ষেত্রে লাইকেন প্ল্যানাস (এক ধরনের  চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি যা শরীরের বিভিন্নঅংশকে আক্রান্ত করে) এবং ডিসকয়েড লুপাস (হালকা প্রদাহের ফলে আঁশের মত দাগ সৃষ্টি হয় এবং চুল পড়ে ) –এ দু‘টি বিষয়কে দায়ী মনে করা হয় ।
 
অ্যানাজেন এফ্লুভিয়াম : অ্যানাজেন এফ্লুভিয়াম আপনার মাথার ত্বক, মুখমন্ডল এবং শরীরকে আক্রান্ত করতে পারে। এই ধরনের চুল পড়ার ক্ষেত্রে অতি সাধারন একটি কারন ক্যান্সারের চিকিৎসা (কেমোথেরাপি)।কেমোথেরাপি  থেকে  সৃষ্ট  এ  ধরনের চুল  পড়ার  সমস্যা  দূরীকরণে  এক ধরনের  ক্যাপ  পরিধান  করা  যায়, যা  মাথার  ত্বককে  ঠান্ডা রাখে । যদিও  মাথার  ত্বক  ঠান্ডায়  এটি  সবসময়  কার্যকর  হয়না  এবং   সর্বত্র    পাওয়াও   যায়না ।অ্যানাজেন  এফ্লুভিয়ামের  প্রভাবে  চুল  ঝরে  পড়ার  সমস্যাটি  অধিকাংশ ক্ষেত্রে   স্বল্পমেয়াদি । কেমোথেরাপি  বন্ধের কয়েক  মাস  পর  চুল  গজানো  শুরু  হয় ।

টেলোজেন এফ্লুভিয়াম : টেলোজেন এফ্লুভিয়াম চুল পড়ার একটি সাধারন ধরন যাতে অতিমাত্রায় চুল পড়ে ।  মাথার ত্বক থেকে চুল ঝরেযায়, মূলত ঔষধ বা বিষন্নতার কারনে হয়ে থাকে।এ ধরনের চুল পড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক মাসপরে অবস্থার উন্নতি হয় ।
গর্ভাবস্থায় চুল ঝরে পড়া সন্তান জন্মের পর নারীদের চুল ঝরে পড়তে পারে। এটি স্বাভাবিক ঘটনা, কারন গর্ভাবস্থায় কম মাত্রায় চুল পড়ে। স্বাভাবিকভাবে যে চুল ঝরে পড়ার কথা ছিল, সেগুলো সন্তান জন্মের পর পড়ে। আবার যে সকল নারীর PCOS এর সমস্যা আছে তাদের হরমোনজনিত তারতম্যের কারনে চুল পড়ে যায়।
 
চিকিৎসা : চুল ঝরে পড়ার সাধারন  কিছু ধরনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়না, যেমন– পুরুষের টাকেরক্ষেত্রে। কারন এটি বয়স বৃদ্ধির সাধারন অংশ এবং স্বাস্থ্যের উপর কোন ঝুঁকি সৃষ্টি করেনা ।তবে যে কোনধরনের চুল পড়া দুশ্চিন্তার কারন হতে পারে । যদি আপনি এটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন  তাহলে চিকিৎসকের(চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ নিতে পারেন । পুরুষের টাকের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যগত কারনে যদি আপনি চিকিৎসাকরাতে চান, তাহলে ফিনাস্টেরাইড ও মিনোক্সিডিল  নামক দুইটি ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন । মিনোক্সিডিলনারীর টাকের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত  হতে পারে।তবে মনে রাখতে হবে, এই চিকিৎসা সবার ক্ষেত্রে কার্যকরহয়না এবং এটি ততদিন কার্যকর থাকে যতদিন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয় ।

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটার চিকিৎসায় স্টেরয়েড ক্রিম, জেল বা মলম দ্বারাও কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা করা হয় ।একধরনের ইচ্ছাকৃত অ্যালার্জির মাধ্যমে আক্রান্ত  স্থানে নতুন চুল গজানো যায় । চুল ঝরে পড়ার সমস্যাদূরীকরণে সার্জিক্যাল কিছু উপায় রয়েছে- লেজার থেরাপি, চুল প্রতিস্থাপন ও নকল চুল স্থাপনের মাধ্যমে এইচিকিৎসা করা যায় । অতিরিক্ত সমস্যা হলে পরচুল ব্যবহার করা যেতে পারে।
 

Leave a Comment