আপনার শিশুর দাঁতের পরিচর্যা ঠিকমতো করছেন তো ?

  • ফারজানা আক্তার 
  • এপ্রিল ২, ২০১৮

আমাদের সবারই রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে নাস্তার পরে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। আমরা সকলে এই কথা জানি কিন্তু মেনে চলি কয়জন? আমরা বড়রাই ঠিকমতো এই নিয়ম মেনে চলি না, সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের কথা তো বাদই দিলাম।  তাই সকল বাবা মায়ের উচিত তাদের সন্তানদের দাঁতের প্রতিও যত্নবাদ হওয়া। আজ জানাচ্ছি বাচ্চাদের দাঁতের যত্নের কিছু কথা - 

গর্ভে থাকাকালীনই শিশুর দাঁত উঠতে থাকে। দাঁতের মাড়ি ভেদ করে আসতে সময় লাগে। তাই দাঁত দেখা না গেলেও এর পরিচর্যা শুরু করতে হয় প্রথম থেকেই। প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পর শিশুর দাঁতের মাড়ি কোমল কাপড় বা গজ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এতে শিশু দাঁতে ক্ষয় রোগ থেকে রক্ষা পাবে।

বাচ্চাদের দাঁতগুলোকে প্রাইমারি টুথ বা মিল্ক টুথ বলা হয়ে থাকে। বাচ্চাদের বয়স যখন সাড়ে ৫ বা ৬বছর হয় তখন বাচ্চাদের প্রাইমারি টুথগুলো পড়া শুরু করে। দাঁতগুলো নিচের মাড়ি থেকে পড়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে উপরের মাড়ি থেকেও দাঁত পড়ে। ১০ থেকে ১২ বছরে মধ্যে বাচ্চার সব প্রাইমারি টুথগুলো পড়ে পার্মানেন্ট টুথগুলো মাড়িতে উঠে যায়।  যখন বাচ্চাদের দাঁত পড়ার সময় আসবে তখন বাবা মাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে।  বাচ্চাদের দাঁতগুলো ঠিকমতো নড়ছে কিনা! ঠিকমতো না নড়লে বাচ্চাকে বলতে হবে দাঁত নাড়ার জন্য।  এই সময় আপেল, পেঁয়ারার মতো শক্ত ফলগুলো খেতে দিতে হবে।  তবুও যদি কাজ না হয় তাহলে তখন একটু ডেন্টিস্ট এর কাছে বাচ্চাকে নিয়ে যেতে হবে। নিদিষ্ট সময়ে যদি প্রাইমারি দাঁতগুলো না ফেলা হয় তাহলে পার্মানেন্ট দাঁতগুলো ঠিক জায়গায় না উঠে তখন দাঁতগুলো আঁকাবাঁকাভাবে উঠে।  এটাই আঁকাবাঁকা দাঁত উঠার অন্যতম একটি কারণ। 

অনেক বাবা মা বলেন বাচ্চার দাঁতে পোকা হয়েছে।  মেডিকেল ভাষায় একে বলা হয় দাঁতের ক্ষয় রোগ। দাঁতের ক্ষয় রোগ যদি শুরুর দিকে থাকে তাহলে দাঁতটা ফিলিং মেটারিয়ালস দিয়ে ফিল করে দেওয়া হয়। যদি দাঁতের এই ক্ষয় রোগটা মজ্জা পর্যন্ত চলে যায় তখন মেডিকেল ভাষায় পালপেকটোমি (pulpectomy) চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। এই চিকিৎসার পর বাচ্চা সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়।  দাঁতে তখন আর কোনো সমস্যা থাকে না। 

গবেষণায় দেখা গেছে, ৮-১৫ বছরের শিশুদের ৫৩-৭৭ ভাগ এ রোগে ভোগে। সঠিক সময়ে যত্ন না নিলে এ রোগ থেকে দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সহজেই। শিশুরা মিষ্টি জাতীয় খাবারের ভক্ত। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারই এমন হওয়ার মূল কারণ। মিষ্টি খেলে মুখে ব্যাকটেরিয়া হয় বেশি। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে যায়। এ খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়া দাঁতের চারপাশে প্লাক তৈরি করে। প্লাকের ব্যাকটেরিয়া মিষ্টি জাতীয় খাবারকে এসিডে পরিণত করে। যে কারণে দেখা দেয় দাঁতের ক্ষয়। এজন্য শিশুদের মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেতে দেয়া যাবে না।

শিশুর ব্রাশ হবে ছোট। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। ফ্লোরাইড দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। তাই বলে বেশি পরিমাণে টুথপেস্ট দেয়া যাবে না। কারণ, এ ফ্লোরাইড আবার বেশি হলে দাঁতে হলদে ভাব দেখা দেয়। শিশুর ছোট টুথব্রাশের চার ভাগের তিনভাগ পরিমাণ টুথপেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিতে হবে। ঐতিহ্যগতভাবে আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করি। এতে কোনো ভালো ফল পাওয়া যায় না। রাতে খাবারের পর খাদ্যকণা জমে থাকলে তাতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে দাঁত ক্ষয় করতে পারে। শিশুকেও এভাবেই ব্রাশ করা শেখাতে হবে। ব্রাশ করতে হয় ১-২ মিনিট। সব দাঁতে যেন ব্রাস পৌঁছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উপর ও নিচে ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশের উল্টো পিঠ দিয়ে জিহ্বা ও তালু পরিষ্কার করতে হবে। অনেক শিশু টুথপেস্ট গিলে ফেলে। এটা কিন্তু ভালো নয়। দাঁত ব্রাশ হয়ে গেলে অতিরিক্ত টুথপেস্ট কুলকুচি করে ফেলে দেয়া শেখাতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানির টুথপেস্ট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্যবহার করা ভালো। এক টুথব্রাশ ২-৩ মাসের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। 

Leave a Comment