গর্ভধারণে ফলিক এসিডের কার্যকারিতা কতটুকু জানেন ?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • এপ্রিল ৮, ২০১৮

যদি আপনি গর্ভধারণ করে থাকেন বা গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় আছেন, তবে আপনার জন্য ফলিক এসিড (ভিটামিন বি৯) বেশ দরকার।কেনো দরকার আগে সেই কারণগুলো জানুন - 

কারণ:

- ফলিক এসিড folic acid নিউরাল টিউব ডিফেক্টস (এনটিডি) প্রতিরোধ করে। এনটিডি ঘটিত সমস্যাগুলোর মধ্যে জন্মকালীন বাচ্চার মেরুদণ্ডের সমস্যা বা মস্তিষ্কের সমস্যাগুলো অন্যতম। এনটিডি সাধারণত গর্ভধারণের খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটে, এমনকি যখন গর্ভবতী নিজেও বুঝতে পারেন না তিনি গর্ভধারণ করেছেন। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০০ এনটিডি আক্রান্ত গর্ভধারনের খবর পাওয়া যায়।

- আমেরিকার সরকারি রোগ প্রতিরোধ সংস্থা নারীদের নিয়মিত ভিত্তিতে ফলিক এসিড গ্রহণের পরামর্শ দেয়। তাদের পরামর্শ হলো গর্ভধারণের এক মাস আগে থেকে শুরু করে কমপক্ষে ৩ মাস পর্যন্ত ফলিক এসিড গ্রহণ করা দরকার, যাতে এনটিডি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

- কিছু গবেষণা দাবি করে যে ফলিক এসিড বাচ্চার অন্যান্য অস্বাভাবিকতা রোধেও ভূমিকা রাখে।

- বাচ্চার রক্তের কোষ গঠন ও এনিমিয়া রোধেও ফলিক এসিড ভূমিকা রাখে। এছাড়া ডিএনএ’র গঠন, যথাযথ কার্যকরী থাকা ও ক্ষয়রোধের জন্যও ফলিক এসিড দরকারি।

কতটুকু ফলিক এসিড দরকার?

বিশেষজ্ঞরা গর্ভধারণের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহনের পরামর্শ দেন। আমেরিকান কিছু স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা আরো বেশি পরিমানে ফলিক এসিড গ্রহনের পরামর্শ দেয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত প্রতিদিন ১০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ফলিক এসিড গ্রহণ করা উচিত নয়।

কাদের বেশি ফলিক এসিড দরকার হয়?

যেসব গর্ভবতী নারী বা সম্ভাব্যগর্ভধারীণী ওবেসিটি বা শারীরিক স্থুলতায় আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে এনটিডি আক্রান্ত বাচ্চা জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদিও এর কারণ এখনও অজানা, তবুও আপনি যদি স্থুল স্বাস্থ্যের অধিকারী হন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফলিক এসিড গ্রহন করুন। এছাড়ও আপনার আগের গর্ভধারণ যদি এনটিডি আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনার বর্তমান ডাক্তারকে এটা জানান। কারণ কোন ব্যবস্থা না নেয়া হলে আপনার বর্তমান গর্ভস্থ বাচ্চাটিও একই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। আশার খবর হলো, উচ্চডোজের ফলিক এসিড গ্রহনের মাধ্যমে এই সম্ভাবনা হ্রাস করা যায়। তবে এটা করতে হবে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শে। যেসব মহিলা ডায়াবেটিস আক্রান্ত বা যারা মূর্ছা যাওয়া প্রতিরোধি ওষুধ গ্রহন করছেন, তাদের বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যা থাকলে ডাক্তারকে পরিষ্কারভাবে জানান।

কোন খাবারে ফলিক এসিড পাওয়া যাবে?

আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের শরীর প্রাকৃতিক উৎসের ফলিক এসিডের চেয়ে কৃত্রিম উৎসকেই বেশি পছন্দ করে এবং সহজেই শোষণ করে নেয়। বেশিরভাগ খাদ্যশস্য জাতীয় খাবারে কৃত্রিম ফলিক এসিড দেওয়া থাকে, তবে নারীদের শুধু এর উপর নির্ভর করা উচিত নয়। কারণ এধরণের খাবার তারা নিয়মিত খান না। ডাল, শুকনা বিচি, ঘন সবুজ সবজি যেমন ব্রকলি (অনেকটা ফুলকপির মতো), লেবু ও জুসে প্রাকৃতিক ভাবেই ফলিক এসিড থাকে। এসব খাবার ফলিক এসিড ট্যাবলেটের বিকল্প না। কারণ আমাদের শরীর ট্যাবলেট থেকে পুরো ফলিক এসিড শুষে নেয়, যেটা প্রাকৃতিক খাবারের ক্ষেত্রে করে না। এছাড়াও খাবার রান্নার সময় এই ভিটামিন হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ফলিক এসিডের অভাব কিভাবে বুঝব?

এর উপসর্গগুলো বেশ সুক্ষ্ম। সম্ভবত এসময় আপনার ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া, দূর্বলতা, জিহ্বায় ব্যাথা, বুক ধরফড় করা ও বিরক্তিবোধ হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে শরীরে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এসব অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব পূরন করতে পারেনা। তাই এসময় প্রি-ন্যাটাল মাল্টিভিটামিন গ্রহন করতে পারেন। অামাদের দেশে এধরনের মাল্টিভিটামিন নেয়ার চল না থাকলেও উন্নত বিশ্বে মাল্টিভিটামিন খুবই জনপ্রিয়। বিশেষকরে সন্তান-সম্ভবা নারীরা মাল্টিভিটামিন নিয়ে থাকেন এবং তারা জানাচ্ছেন এই মাল্টিভিটামিন তাদের গর্ভকালীন নানারকম শারীরিক কষ্ট থেকে সুরক্ষা দেয়।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

 

Leave a Comment