বাচ্চা নিতে কি অযথাই দেরি করছেন?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • এপ্রিল ১৯, ২০১৮

একজন নারীর জন্য মা হওয়ার অভিজ্ঞতার তুলনা আর দ্বিতীয়টি নেই। মা হতে চান না এমন নারীর সংখ্যা খুব কম। এমন হতে পারে যে কেউ স্বেচ্ছায় মা হতে চান না। আবার অনেকে মা হতে চান কিন্তু জীবনে এত কিছুতে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন যে মা হওয়ার সময়টা শুধু পিছিয়েই যায়। অনেকে আবার অনেক সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে গর্ভপাতও ঘটান। আজ না কাল করতে করতে সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হয়ে যায়। বয়স বাড়ার কারণে তৈরি হয় নানা শারীরিক সমস্যা। দেখা যায় চাইলেও পরে আর সন্তান ধারণ করতে পারছেন না নারী। সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পেশাগত প্রতিষ্ঠার জন্য মা হতে দেরী করার সিধান্ত যে সব সময় ঠিক এটা মনে করার কারন নেই। জীবনের কোনো কিছুই একদম ত্রুটিমুক্ত নয়। সব ঠিক হলে পরে বাচ্চা নেয়ার সিধান্ত তাই অনেকাংশেই ভুল। অনেক মা-ই পরে আফসোস করেন এই ভেবে যে আগেই মা হওয়া উচিত ছিল।  

বেশী বয়সে মা হতে গেলে শারীরিক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। বয়স ৩৫ পার হয়ে গেলে একজন নারীর শরীরের মা হওয়ার মতো উপযোগিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের মতো সমস্যাগুলো এ সময়েই দেখা দেয়া শুরু করে। বেশী বয়সে মা হওয়া নারীর জন্য ঝুকিপুর্ণও হতে পারে। এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নারীর শরীরের ডিম্বাণু কম ক্ষমতা সম্পন্ন হয় এ বয়সে এসে। তাই অনেকেই কনসিভ করতে চাইলেও করতে পারেন না। চিকিৎসকের শরানাপন্ন হতে হয় তখন।

আবার এটাও সত্য ২৫ থেকে ৩৫ মানুষের কর্মজীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়। কিন্তু মা হতে চাইলে দেরী করাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সুস্থ শিশু পেতে ৩০ এর ভিতরেই বাচ্চা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু কখন বুঝবেন আপনি তৈরি? ভেবে দেখুন মা হওয়ার জন্য বা পরিবারে নতুন সদস্যকে স্বাগতম জানাতে ঠিক কতটুকু প্রস্তুতি প্রয়োজন?

টাকাকড়ি : সব কিছুতেই খুব বেশী আড়ম্বরের ইচ্ছা থেকে বাচ্চা নেয়ায় দেরী করাটা একেবারেই উচিত না। বাচ্চা হওয়ার সময় যে অতিরিক্ত খরচ যোগ হবে সেটুকু অবশ্যই ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাচ্চা হলে ৫০০ লোককে দাওয়াত করে খাওয়াতে হবে নতুবা স্ট্যাটাস নষ্ট হয়ে যাবে এমন ভাবনা পরিহার করে ফেলতে পারলে ভালো। অথবা বাচ্চাকে সব চেয়ে দামী জামাটা এনে দিতে হবে বা সবচেয়ে ভালো হাসপাতালেই বাচ্চা জন্ম দিতে হবে এমন ভাবনাগুলো আপনার সময়ই নষ্ট করবে। বাচ্চা জন্মদানের ব্যাপারটা এমন জটিল কিছু নয়। নিজের সামর্থ অনুযায়ী সব চাহিদা পূরণ করার কথা ভাবতে হবে।  

শরীর : অনেক নারী মা হতে চান, কিন্তু শরীর নষ্ট হয়ে ভেবে দেরী করতে চান। কিন্তু ভেবে দেখা উচিত, বাচ্চা হওয়ার পর সে বাচ্চা লালন পালন করার সামর্থ্যও তো মায়ের থাকা চাই। যদি দেরী হয়ে যায় ‘নিব, নিচ্ছি’ করতে করতে পরে বাচ্চা পালতে গিয়ে কিন্তু গলদ্ঘর্ম হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। স্বাধীনতার প্রসঙ্গে কিছুটা ছাড় তো দিতেই হবে। টিভিতে বা পত্রিকায় নারী শরীরের যে ছবি আমরা দেখতে পাই তেমন স্লিম ফিট বডি অর্জন করা বা ধরে রাখার চেয়ে বাচ্চা নেয়ার ইচ্ছা থাকলে সেই কাজটাই কি করে ফেলা ভালো না?

উচ্চশিক্ষা : অনেক নারীকে উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষার কারণে বাচ্চা নিতে দেরী করতে দেখা যায়। পড়াশোনা শেষ করে বাচ্চা নিতে চান অনেকেই। বাচ্চা নিয়ে পড়তে চাইলেও পড়া যায়। এবং তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই এটা সম্ভব। বিদেশে গিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলে সেজন্য বাচ্চা নেয়া পেছানোর দরকার খুব কম। এসব ক্ষেত্রে বরং বিদেশে যাওয়াটাই পেছায়। এই কাগজ সেই কাগজ করতে করতে দেখা যায় যা এক বছরে হওয়ার কথা তা হয় দুই বছরে। বাচ্চা নেয়ার জন্য মনশতির করে নিয়ে ফেললে পরে বরং বাচ্চা সহই বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রায় সব দেশেই বাচ্চা সহ যেতে পারেন ছাত্ররা। এবং সেখানে বাচ্চাদের জন্য সুযোগ-সুবিধাও খুব ভাল থাকে। ডেকেয়ার সেন্টার বা বাচ্চার পড়াশোনার ব্যাপারেও উন্নত পরিবেশ আশা করতে পারেন। তাহলে আর উচ্চ শিক্ষার খাতিরে দেরী কেন! বরং লিটিল মাস্টারকে সাথে নিয়েই বিদেশ ঘুরে আসুন!

কর্মজীবন : চাকরির ব্যস্ততার কারণে বাচ্চা নিতে দেরী করা রীতিমত বোকামির পর্যায়ে পড়ে। চাকরি করলে ব্যস্ততা থাকবেই। বরং সময়ের সাথে সাথে সেটা বাড়বে। অভিজ্ঞ হলে অফিসও দায়িত্ব বেশী দিতে থাকবে। প্রমোশনের জন্য অপেক্ষা করাও বাচ্চা নিতে অহেতুক বিলম্বই ঘটায়। কারণ প্রমোশনের পর নতুন দায়িত্ব বুঝে শুনে নিতেও সময় লাগে। সময় চলে গেলে আর ফিরে আসে না কিন্তু! পারিপার্শ্বিক সব ঠিক থাকলে শুধু চাকরির ব্যস্ততা বা প্রমোশনের অপেক্ষা করা শুধু শুধুই সময় নষ্ট বলে মনে হবে পরে। সাধু সাবধান!

স্বাধীনতা : অনেক নারীই নিজস্ব স্বাধীনতার ব্যঘাত ঘটবে বলে বাচ্চা নিতে দেরী করতে চান। নিজের মতো সময় কাটানো, ঘুরে বেড়ানো এ ব্যাপারগুলো বাচ্চা হলে আর করা যায় না। এটা ঠিক স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে সেটা যতখানি দরকার ততটুকুই। বাচ্চা হলে স্বাধীনতা নষ্ট হয়ে যাবে এটাও পুরোপুরি ঠিক নয়। বরং ছোট্ট সোনামণির সাথেই ঘুরে বেড়ানো সময় কাটানো আরো আনন্দদায়ক হতে পারে। এভাবেও ভেবে দেখতে পারেন।

উচ্চাকাঙ্ক্ষা : ‘ফ্ল্যাটটা কিনে ফেলি এরপরই বাচ্চা নিয়ে নেব’ অথবা ‘গাড়ি কিনে এরপর বাচ্চা নেব’ এমন কথা প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। কবে ফ্ল্যাট কেনা হবে আর কবে গাড়ি কেনা হবে এরপর বাচ্চা হবে! এভাবেই মূল্যবান তিন চার বছর সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ধরণের উচ্চাংখাগুলোর কারণে বাচ্চা নিতে মোটেও দেরী করা উচিত নয়। বাচ্চা পালতে পরিশ্রম অর্থ দুটোর প্রয়োজনই আছে তার মানে এই নয় যে সেটার জন্য খুব বেশী মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিয়ের দু’তিন বছরের ভিতরেই বাচ্চা নিয়ে ফেলা উচিত। এতে দাম্পত্যের ভিতরেও ধারাবাহিকতা থাকে। পরিকল্পনা থেকে বাড়তি বিষয়গুলো ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বাচ্চা নিয়ে ফেলতে পারলে জীবনের বড় একটা ধাপ পার হয়ে যাওয়া যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চা নিতে দেরী করাও ঠিক থাকবে। বিয়ের পর থেকেই যদি দাম্পত্য জীবনে অশান্তি লেগে থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক ঠিক করে নিতে হবে আগে। এরপর বাচ্চা নেয়ার কথা ভাবাই ভালো। অহেতুক কারণে যেমন বাচ্চা নিতে দেরী করা ঠিক নয় তেমনি দাম্পত্য সম্পর্কের অবস্থা না বুঝে হুট করেও বাচ্চা না নেয়া ভালো।

তথ্য এবং ছবি : গুগল  

Leave a Comment