ডায়াবেটিস নিয়েও রাখতে চান রোযা? যা জানতে হবে!

  • আল আমীন
  • মে ১৩, ২০১৮

ডায়াবেটিস নিয়েও রোযা রাখতেই পারেন। এত চিন্তার কিছু নেই। রমজানে ডায়াবেটিস নিয়েও রোযা রাখা মানুষের পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ মিলিয়নেরও বেশি ডায়াবেটিস রোগী প্রতি রমযান মাসে রোযা করে থাকেন। তাহলে আর চিন্তা কেন? আপনি ডায়াবেটিস রোগী? এই রমযানে রোযা রাখতে আপনিও পারবেন।  রোযা রাখতে ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। তবে যেটা জানতে হবে, সেটা হলোঃ “টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী, গর্ভবতী ডায়াবেটিস, যারা দিনে তিন বা চারবার ইনসুলিন গ্রহণ করেন, যাদের সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করা স্বল্পতা) বা মারাত্মক হাইপারগ্লাইসেমিয়া কোমা (রক্তে শর্করা আধিক্যজনিত কোমা) হয়েছে, যারা হাইপোগ্লাইসেমিয়া সম্পর্কে সচেতন নন, ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্যান্য জটিলতা যেমন কিডনি, যকৃত, হৃদযন্ত্রের জটিলতা রয়েছে বা ডায়ালাইসিস করছেন ইত্যাদি। 

এছাড়া ইনসুলিন ও সালফোনিলইউরিয়া ওষুধ ব্যবহারকারীরা ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় পড়েন।“ আপনাকে আগে নিশ্চিত হবে আপনি এদের তালিকায় কিনা। যদি এদের তালিকায় থাকেন, তাহলে রোযা রাখা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং আপনার রোযা করা ঠিক হবে না। আর যদি এই তালিকায় না থাকেন, কিংবা এরকম কোনো সমস্যা আপনার না থাকে, তাহলে ডায়াবেটিস নিয়েও রাখতে পারবেন রোযা। তবে আপনার জন্য এ ব্যপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

রোযা থাকতে চাইলে আসতে পারে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, এবং খাদ্য গ্রহণের সময়েও তারতম্য ঘটতে পারে। তাই যেটা করবেন, তা হলো – দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের সময়সূচি বা উপাদান পরিবর্তিত হলেও ক্যালরির পরিমাণ যেন ঠিক থাকে, সে ব্যপারে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে সেহরীতে খাবার তালিকায় রাখবেন জটিল শর্করাসহ সব ধরনের উপাদান। কেননা এগুলো হজমে সময় লাগে বেশি, তাই বেশিক্ষণ পেটে থাকবে। এই খাবারই দিনভর সাহায্য করবে আপনাকে শক্তি জোগাতে। ইফতারে খেয়াল করবেন যেন একসঙ্গে প্রচুর খেয়ে না ফেলেন। বরং ধাপে ধাপে অল্প করে খাবেন। কারণ সারাদিন না খেয়ে থাকার পর, এই সময়ে এসে হঠাত বেশি খেলে পরিপাকজনিত জটিলতা তৈরী হতে পারে।  এড়িয়ে চলবেন মিষ্টি জাতীয় ও ভাজা-পোড়া তৈলাক্ত খাবার। বেছে নিবেন স্বাস্থ্যকর খাবার। যেমন কাঁচা বা সেদ্ধ ছোলার সঙ্গে শশা টমেটোর সালাদ, চিঁড়া-টকদই, ফল ইত্যাদি। শরবতের বদলে ডাবের পানি বা লেবুর পানি। একটি কি দুটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর রাতের খাবারে খেতে পারেন রুটি বা অল্প ভাত।

খাবারের আলোচনা গেল। এবার রইল ব্যায়াম। একজন ডায়াবেটিস রোগীর নিত্যকার কর্মের মধ্যে ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু রোযা রেখে ব্যায়াম কীভাবে করবেন, সেইটা চিন্তা করছেন তাই তো? এখানেও চিন্তার কিছু নেই। রোযা রেখে ব্যায়াম করতে গেলে আপনি শারিরীকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন, কিংবা অন্যান্য জটিলতাও দেখা দিতে পারে। সুতরাং এ সময়ে ব্যায়ামের ব্যাপারে শিথিলতা আনা যেতে পারে। তাছাড়া আপনি যদি তারাবীহ’র নামাজ পড়েন, তাহলে ব্যায়াম না করলেই হবে।

আরো সতর্কতা: ডায়াবেটিস নিয়ে রোযা রাখলে কিছু সমস্যা বা জটিলতা তৈরী হতে পারে। যেমন, 

১. রক্তে হঠাৎ শর্করাস্বল্পতা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া, ২. রক্তে শর্করা আধিক্য বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া, ৩. কিটোনিউরিয়া বা প্রস্রাবের সঙ্গে কিটোন নির্গত হওয়া এবং ৪. পানিশূন্যতা। আপনাকে যাতে এই ঝুঁকিগুলোর মধ্যে পড়তে নাহয়, সেক্ষেত্রে  সতর্কতা হতে হবে আপনার। আর সেজন্য যা করতে পারেন।  

“রোজা রেখে মাঝেমধ্যে বিশেষ করে প্রথম কয়েক দিন দিনের বেলা গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের শর্করা পরিমাপ করুন।  আলেমগণ ফতোয়া দিয়েছেন যে গ্লুকোমিটারে রক্ত পরীক্ষায় রোজা ভাঙে না। ইফতারের এক ঘণ্টা আগে ও দুই ঘণ্টা পর এবং মাঝেমধ্যে দুপুরবেলা রক্তে শর্করা দেখুন। দিনের বেলা কখনো রক্তে শর্করা ৪ মিলিমোলের কম বা ১৬.৭ মিলিমোলের বেশি হয়ে গেলে রোজা ভাঙতে হবে। সুতরাং সন্ধ্যার পর একসঙ্গে অনেক খাবার ও সহজ শর্করা বা চিনি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন না। এতে হঠাৎ করে শর্করা বেড়ে যেতে পারে।
আর পানিশূন্যতা এড়াতে সন্ধ্যার পর বেশি করে পানি, ডাবের পানি, জলীয় অংশ বেশি এমন খাবার গ্রহণ করবেন।

রোযায় ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে যা করবেন:

যেহেতু রোযার মাসে ডায়াবেটিসের ঔষধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচিতেও পরিবর্তন আসবে। নতুন খাদ্যসূচির সঙ্গে মিলিয়ে এই পরিবর্তন ঘটবে। তাই রমজানে আপনার ওষুধ বা ইনসুলিনের ব্যপারে কখন কী করতে হবে, তা আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে ক্লিয়ারলি জেনে নিবেন রোযা রাখার আগেই। এই তো হয়ে গেল মোটামুটি এক প্রস্তুতি! এবার আর চিন্তা কেন! রোযাও রাখুন, সুস্থ্যও থাকুন। সবার জন্য শুভকামনা রইলো।

Leave a Comment