থ্যালাসেমিয়া রোধে কী করবেন, জেনে নিন
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- জুন ৯, ২০১৮
রক্তের রোগ থ্যালাসেমিয়া। শিশু মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রধাণতম কারণ এটি। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭ হাজারেরও বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যেহেতু এটি একটি জিনগত রোগ। তাই বংশ পরম্পরায় এই রোগটি পরবর্তী প্রজন্মেও অব্যহত থাকতে পারে। এই রোগের কারণেই রক্তে তৈরী হয় ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন। ফলশ্রুতিতে রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙ্গে যায়। তবে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই থ্যালসেমিয়া রোগ নির্ণয় করা যায়। আজ আমরা থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেবো। থ্যালাসেমিয়া প্রধাণত ২ প্রকার। যথা, ১। বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর, ২। বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর।
বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর ঃ যদিও থ্যালাসেমিয়া বলতে সাধারণত থ্যালাসেমিয়া মেজরকেই বুঝায়। বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর এর ক্ষেত্রে বাবা-মা উভয়েরই জিনে সমস্যা থাকে এবং তা বংশ পরম্পরায় সন্তানের মাঝে প্রকাশ পায়। অর্থাত, বাবা-মায়ের এই রোগ থাকলে তাদের সন্তানদেরও হয়ে থাকে।
বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর: এক্ষেত্রে বাবা অথবা মা যেকোন একজনের দেহে ত্রুটিপূর্ণ জিন থাকে। এরা মূলত রোগী নয় বরং রোগের বহনকারী। কোন ধরণের উপসর্গ ছাড়াই এরা সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারে। মাঝে মাঝে এদের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে কোন ধরণের চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন নেই। সাধরণত স্বাভাবিকভাবেই তা সেরে যায়।
কীভাবে বুঝবেন?
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত জন্মের প্রথম মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে। এরপর ধীরে ধীরে তার শরীরে রক্তস্বল্পতা তৈরী হয় যা পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করে। শিশুর বয়স এক বছর হওয়ার আগেই তার মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকে।
আপনার শিশুর থ্যালাসেমিয়া হয়েছে কিনা, সেটা বোঝার প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে:
• শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
• অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া
• স্বাভাবিক কাজ-কর্মে অনীহা প্রকাশ
• খেলা-ধূলার প্রতি আগ্রহ না থাকা
• একা একা ঝিম মেরে বসে থাকা
• খাবারে অরুচি এবং অনীহা তৈরী হওয়া
• শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে
• চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
• প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যাওয়া
• পেট ফুলে যাওয়া
• পেটে চাকা অনুভূত হওয়া
• কখনো কখনো পেটে ব্যথা হতে পারে
• ঘন ঘন অসুখ-বিসুখ হওয়া
• শরীরের তুলনায় মাথা বড় হওয়া
• সমবয়সী অন্য বাচ্চাদের তুলনায় শারীরিক বৃদ্ধি কম হওয়া
খেয়াল করুন, আপনার শিশুর মধ্যে এমন কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা। এমনটি হলে মোটেও অবহেলা নয়। যথাসম্ভব দ্রুতই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
কী করবেন?
থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রধান চিকিৎসা মূলত শরীরে রক্ত দেওয়া বা ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা। আক্রান্ত শিশুকে ১ থেকে ২ মাস পরপর রক্ত দিতে হয়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে ফ্রেশ লোহিত রক্ত কণিকা পরিসঞ্চালন করা উত্তম। পাশাপাশি শিশুর দেহে আয়রনের আধিক্য কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শমত ওষুধ দেয়া হয়। সচেতন হোন থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার কিছুটা হলেও কমানো যেতে পারে।
বিয়ে করতে যাচ্ছেন? আগেই জেনে নিন, আপনার হবু সঙ্গী বা সঙ্গিণী এই রোগে আক্রান্ত কিনা। প্রয়োজনে পরীক্ষা করিয়ে নিন পাত্র কিংবা পাত্রী থ্যালাসেমিয়া জিন বহন করছে কিনা। মনে রাখতে হবে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে থ্যালসেমিয়া জিন বহনকারী হলে তাদের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা ২৫ ভাগ। কিন্তু স্বামী বা স্ত্রী যেকোন একজন থ্যালাসেমিয়া জিন বহনকারী হলে স্বাভাবিক বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ এবং থ্যালাসেমিয়া জিন বহনকারী শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। এক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্ম নিবে না।
রক্ত পরিসঞ্চালনেই মুলত থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রধান চিকিৎসা। কিন্তু অনেক সময়ই রক্ত সংগ্রহ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরী। স্বাভাবিক ও সুস্থ মানুষদের ৩ থেকে ৪ মাস পরপর রক্ত দানে উৎসাহিত করার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগ জনিত শিশুদের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সূত্র : গুগল