প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুর কারণ ও করণীয় কী?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • জুলাই ১২, ২০১৮

প্রসবকালীন শিশু মৃত্যু একটি দুঃখজনক  ঘটনা। যখন থেকে একজন মা বুঝতে পারেন তার পেটে কেউ একজন এসেছে তখন থেকেই তাকে নিয়ে নানান স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দেন। প্রসবের পর সেই স্বপ্নের শিশুর প্রাণহীন নিথর কচি দেহ মায়ের  শারীরিক মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহের পর প্রাণহীন সন্তানের প্রসব হলে তাঁকে মৃত শিশু প্রসব বলে। আর এর আগে হলে তাঁকে গর্ভপাত বলে। মৃত শিশু প্রসবের ৭০ শতাংশ কারণ সঠিকভাবে জানা যায় আর ৩০ শতাংশ কারণ আজো পর্যন্ত অজানা।

মৃত শিশু প্রসবের ব্যাপারটাকে মূলত দুটি ভাবে ভাগ করা যায়ঃ গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহ পর থেকে প্রসব-যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগে জরায়ুর মধ্যে শিশুর মৃত্যু। এক্ষেত্রে শিশুর গলিত দেহ প্রসব হয়, যাকে ম্যাসারেটেড স্টিলবর্ণ বলে। প্রসবকালীন সময়ে শিশুর মৃত্যু—এক্ষেত্রে টাটকা মৃত শিশুর প্রসব হয়, যাকে ফ্রেশ স্টিলবর্ন বলে।

জরায়ুর মধ্যে শিশুমৃত্যুর কারণ মূলত দু’প্রকারঃ মায়ের শরীরকেন্দ্রিক জটিলতার কারণে। যথা—গর্ভাবস্থার জন্য উৎপন্ন রোগ ও গর্ভকালীন মায়ের অসুখ-বিসুখের জন্য। শিশুর শরীরকেন্দ্রিক জটিলতা ও ক্রুটি-বিচ্যুতির জন্য।

মায়ের শারীরকেন্দ্রিক শিশুমৃত্যুর কারণ :  গর্ভাবস্থার জন্য উচ্চরক্তচাপ, প্রি-এক্লাম্পসিয়া, এক্লাম্পসিয়া বা গর্ভাবস্থার জন্য তড়কা। গর্ভের ফুলের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে শিশুর শিশুর শরীরে পুষ্টি ও অক্সিজেন যাতায়াত করে। গর্ভের ফুলে বিভিন্ন কারণে রক্তচলাচলে ব্যাঘাত ঘটার জন্য অপর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তচলাচল করে। ফলে শিশুর অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং মারা যায়।

গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণঃ এটা প্রধানত দুটি কারণে হয়—গর্ভের ফুল যখন জরায়ুর মধ্যে স্বাভাবিক স্থানে না থেকে অনেক নীচে থাকে, তাঁকে প্ল্যাসেন্টা প্রিডিয়া বলে। গর্ভের ফুল জরায়ু থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাঁকে অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ বলে। সাধারণত উচ্চরক্তচাপের জন্য এটা হয়।

মায়ের শরীরে গর্ভের পূর্বেই অসুখ বা গর্ভাবস্থাকালীন জটিল রোগসমূহ, যথা—উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ, মধুমেহ রোগ, অত্যাধিক রক্তাল্পতা, অত্যাধিক জ্বর, সিফিলিস ইত্যাদি। এছাড়াও বিরল কারণগুলি হল—লিভারের প্রদাহ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাম্পস, টক্সোপ্লাজমা ইত্যাদির সংক্রমণ।

শিশুর কারণে শিশু মৃত্যুর কারণ :  শিশুর জন্মগত ক্রটিপূর্ণ বা বা বিকালাঙ্গ গঠনের জন্য মৃত শিশু প্রসব হতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুর শারীরিক বিকাশ বহির্জগতে বাঁচার পক্ষে উপযুক্ত হয় না। তাই বহু ক্ষেত্রে মৃত সন্তান প্রসব যদিও মাতা-পিতা, আত্মীয়-পরিজনের অশ্রুবর্ষণের কারণ হয়, তবে তা যে বিকলাঙ্গ শিশুর জরায়ু থেকে নিঙ্কাশিত হওয়ার ঘটনা ও সেই বিকালাঙ্গ ও ক্রটিপূর্ণ গঠনের শিশু জীবিত থাকলে তা যে মাতা-পিতার গর্ভ-যন্ত্রণার কারণ হতে পারে তা যদি তাঁরা জানতে পারতেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ অশ্রু মুছে বলতেন, ‘সৃষ্টিকর্তা মঙ্গলময়’। এহেন শিশু কোনোক্রমে বেঁচে থাকলেও জরায়ু থেকে বের হওয়া মাত্র জরাগ্রস্ত হয়।

যেসব মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ, কিন্তু শিশুর পজিটিভ, সেক্ষেত্রে মায়ের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা শিশুর শরীরের লোহিত রক্তকণিকাকে ভেঙ্গে দেয়। ফলে শিশু অত্যধিক রক্তশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট ও হার্টের জটিলতার কারণে পেটের ভেতরেই মারা যায়। প্রসবের তারিখ অতিক্রম করে অনেক বেশিদিন শিশু যখন জরায়ুর ভেতর থাকে, তখন শিশুমৃত্যুর বিপদ বেড়ে যায়।

প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুর কারণ : প্রসবকালীন জরায়ু থেকে পৃথিবীর আলোর সন্ধানে শিশুর যাত্রা এতই সঙ্কটপূর্ণ, বিপদসঙ্কুল ও ঘটনাবহুল যে, সে-যাত্রাই তাঁর জীবনে অন্তিম যাত্রা হতে পারে।

- মায়ের রক্তাল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, যার জন্য গর্ভের ফুলের মাধ্যমে অপর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তচলাচল করে। ফলে শিশু অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যায়।

- প্রসবকালীন জরায়ুর অস্বাভাবিক সঙ্কোচন হলে গর্ভের ফুলের মধ্যে রক্তচলাচল অপর্যাপ্ত হতে পারে, ফলে অক্সিজেনের অভাবে শিশু মারা যেতে পারে।

- আম্বিলাইকাল কর্ড বা নাড়ি যখন শিশু প্রসবের পূর্বে বের হয়ে আসে অথবা শিশুর গলায় ফাঁসের মতো জড়িয়ে যায়, তখন মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে রক্তচলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ অক্সিজেনের অভাবের জন্য শ্বাসকষ্টে শিশু মারা যেতে পারে।

- যখন গর্ভযন্ত্রণার সময়ের পরিধি অনেক বেশি হয় ও কম ওজনের শিশুর প্রসব হয় অথবা মায়ের শ্রোণীর তুলনায় শিশুর মাথা বড় হয়, তখন প্রসবের সময় শ্বাসকষ্ট অথবা মাথায় আঘাত অথবা মস্তিঙ্কে রক্তক্ষরণের জন্য শিশু মারা যেতে পারে।

- শিশুর গঠনগত ও জন্মগত ক্রটি থাকলে শিশু মারা যেতে পারে।


সূত্র : গুগল 

Leave a Comment