বাচ্চাদের হোমওয়ার্কের চাপ বেশি দিচ্ছেন? জানেন এর ভয়াবহতা?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • আগস্ট ৫, ২০১৮

স্কুলজীবন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশুর কাঁধে শুধু বইয়ের ব্যাগই চেপে বসে না, চেপে বসে হোমওয়ার্ক নামের আরেকটি বস্তুও। সত্যি করে বলেন তো কখনো কোন শিশুকে দেখেছেন হাসি মুখে হোমওয়ার্ক করতে? শিক্ষকেরা ক্লাসে একটি গণিতের সমাধান দেন আর হোমওয়ার্ক দেন পাঁচটি। এতে অবশ্য অভিভাবকেরা সন্তুষ্ট নন। তাঁরা চান আরও বেশি বেশি বাড়ির কাজ। 

ক্লাসে কী পড়া হলো, না হলো সেটা বড় কথা নয়! হোমওয়ার্ক দেওয়া চাই রাশি রাশি। ফলে স্কুল খোলা থাকার সময় তো বটেই, গ্রীষ্মকালীন ছুটি, শীতকালীন ছুটি, ঈদের ছুটি, পুজোর ছুটি ইত্যাদি যেকোনো ছুটির সময়েও শিশুদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়ির কাজ। সমস্যাটা বিদেশেও আছে। এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম সাময়িকীর কিডস পাতায়। সেখানে একদল শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, অভিভাবক বলছেন, হোমওয়ার্ক দেওয়া উচিত; তা না হলে শিশুদের পড়ালেখা করার ধারাবাহিকতা রক্ষা হয় না। শিশুরা পড়ালেখার চর্চা থেকে দূরে সরে যায়। একধরনের ‘স্টাডি গ্যাপ’ তৈরি হয়। 

পরে যখন স্কুল খোলে, তখন ওই শিশুদের স্টাডি গ্যাপ পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয়। পড়ালেখায় মনঃসংযোগ করতে বেশি সময় লাগে। আর ছুটির মধ্যেও হোমওয়ার্ক করলে পড়ালেখার চর্চাটা অব্যাহত থাকে। অপরদিকে আরেক দল শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, অভিভাবক বলছেন, প্রতিদিন রুটিনমাফিক পড়ালেখা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই মাঝেমধ্যে স্টাডি ব্রেক প্রয়োজন আছে। তাঁদের যুক্তি, অবকাশের ফলে শিশু আরও পূর্ণ উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করতে পারে। তাই পড়ালেখার একঘেয়েমি কাটাতে মাঝেমধ্যে শিশুদের পরিপূর্ণভাবে ছুটি কাটাতে দেওয়া উচিত। এ সময় স্কুলের হোমওয়ার্ক না থাকাই ভালো।

কেন এই বিতর্ক? 

টাইম কিডসে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, বিতর্কের সূত্রপাত নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের প্রিন্সটন পাবলিক স্কুলের এক আইন থেকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আইন করে ওই স্কুলে হোমওয়ার্ক নিষিদ্ধ করেছে। ৫ নভেম্বর এএফপি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘হোমওয়ার্ক বন্ধে অভিভাবকদের হরতালের হুমকি’ শিরোনামে। বিস্তারিত পড়ে জানা গেল, ঘটনাটি ঘটেছে স্পেনে। সে দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সংগঠন স্প্যানিশ অ্যালায়েন্স অব প্যারেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (সিইএপিএ) এ হরতালের হুমকি দিয়েছে। সিইএপিএর প্রেসিডেন্ট হোসে লুই পাথস বলেছেন, শিশুদের পাঠক্রমবহির্ভূত অন্যান্য চর্চায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে ‘অবশ্যকরণীয় এই সাপ্তাহিক বাড়ির কাজ’।

আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) তাদের প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্টের (পিআইএসএ) আওতায় ২০১২ সালে একটি শিক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৩৮টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায়, যে দেশগুলোয় শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে স্পেন পঞ্চম। এ তালিকায় স্পেনের আগে রয়েছে রাশিয়া, ইতালি, আয়ারল্যান্ড ও পোল্যান্ড। বাড়ির কাজের গড় সময় সপ্তাহে ৪ দশমিক ৯ ঘণ্টা ধরে পিআইএসএর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেনে সপ্তাহে সাড়ে ছয় ঘণ্টা ‘হোমওয়ার্ক’ করতে হয়। ফিনল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় সবচেয়ে এগিয়ে। কিন্তু তাদের হোমওয়ার্কের পেছনে সপ্তাহে ব্যয় করতে হয় তিন ঘণ্টারও কম সময়। প্রতিবেদনটি এই বলে শেষ করেছে, স্পেনে শিক্ষার্থীদের ওপর হোমওয়ার্কের বাড়তি চাপ তাদের কোনো উপকারেই আসছে না। উল্টো গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষায় তারা অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পাচ্ছে।

সূত্র : গুগল 

Leave a Comment