প্রসব বেদনা সহনীয় করার কিছু পূর্ব প্রস্তুতি ( ভিডিওসহ )

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮

বাচ্চা প্রসব একটি জটিল ও কষ্টকর প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যারা সন্তান প্রসব করেছেন তারাই জানেন সন্তান প্রসব কতটা জটিল এবং ব্যথাদায়ক। কি কি উপায়ে এই ব্যথা কিছুটা এড়ানো যায় তা জানা জুরুরি। চলুন তাহলে জেনে নিন :

গর্ভধারণের শুরু থেকে বাচ্চা জন্মদানের সময় পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপেই আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাচ্চা জন্মদানের সবথেকে সাধারণ পদ্ধতি হলো যোনিপথে প্রসব। প্রসব বেদনার পর্যায়কে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগগুলো হলো :  পানি ভাঙা ও গর্ভাশয় খুলে যাওয়া, নিম্নগমন ও শিশুর জন্ম এবং গর্ভফুল বের হয়ে আসা। প্রসবের পূর্বের শারীরিক প্রস্তুতিই বাচ্চা প্রসবের প্রক্রিয়াকে সহজ করতে পারে। 

প্রসবের সময় যতটা সম্ভব শান্ত থাকবেন। শান্ত থাকার কারণে আপনার মাথা থেকে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে, এবং এটি ব্যথা কমাতে অনেকটাই সাহায্য করবে এবং জরায়ুকে ভালো কাজ করতে সাপোর্ট দিবে। দুশ্চিন্তার কারনে শরীরের শক্তি অনেকটা কমে যায়। তাতে আপনি অনেক বেশি দুর্বল অনুভব করবেন। প্রসবের সময় কিভাবে শান্ত থাকবেন তার দুইটি টিপস দেওয়া হলো : 

- আপনার শরীরকে আপনিই ভালো বুঝতে পারবেন। তাই সবার আগে নিজের শরীরকে বুঝার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, যখন কোন কারণে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি তখন কারো কারো দাঁতে দাঁত লেগে যায়, কারো কাঁধ বা ঘাড়ের উপর প্রেশার পড়ে। এতে শরীরের পেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই কোন অবস্থায় উত্তেজিত হাওয়া যাবে না। 

- প্রসবের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশগুলো শক্ত হয়ে যায়। তাই আপনাকে শরীর শিথিলীকরণ জানতে হবে। তাহলে আপনি কিছুটা স্বস্তি পাবেন।  সাথে আপনার সঙ্গী বা যে আপনার সাথে সারাক্ষন থাকে তাকেও সকল বিষয় অবগত রাখবেন।  তাতে করে প্রসবের সময় সে আপনাকে অনেকটা সাপোর্ট দিতে পারবে। 

আপনার নিজের মতো করে একটি আরামদায়ক অবস্থা বের করুন। বসেও থাকতে পারেন, আবার এক পাশ ফিরে শুয়েও পড়তে পারেন। ইচ্ছে হলে পছন্দের গানও শুনতে পারেন। আপনার শরীরের সকল ভাজকে সহযোগীতা করতে বালিশ ব্যবহার করুন। আপনার ডান হাত দৃঢ়ভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে লম্বা শ্বাস নিন। হাত কাঁধ বরাবর তুলে হাতের পেশীগুলো শক্ত করুন। আপনি এবার একটি লম্বা, দীর্ঘ, শ্বাস ফেলুন এবং হাতের মুঠি নরম করে মাংশপেশী শিথিল করুন। আপনার হাতের মাংশপেশী শিথিল হওয়া অনুভব করুন। খেয়াল করুন কিভাবে শ্বাস ছেড়ে দেওয়া আপনাকে শিথিল হতে সাহায্য করে। প্রত্যেকবার শ্বাস ফেলার সাথে সাথে বেশী করে শিথিল হোন বা রিলাক্স করুন। একইভাবে অপর হাত এবং পায়ের রিলাক্সেশন করুন। আপনার কাঁধ উপরের দিকে আপনার কান বরাবর তুলুন। এটি কিভাবে আপনার ঘাড় ও গলার পেশী শক্ত করে তা অনুভব করুন। এখন শ্বাস ছাড়ার সাথে সাথে আপনার কাঁধকে শিথিল করুন। একইভাবে আপনার যৌনাঙ্গের এবং পায়ুপথের চারপাশের মাংসপেশী শক্ত করুন যেমনটি আপনি মুত্র প্রবাহ আটকাতে করে থাকেন। এবার শ্বাস ফেলার সাথে সাথে শিথিল করুন (এই মাংসপেশীগুলো আপনার শ্রোণীতলের অংশ)। আপনার নিতম্বের মাংশপেশীগুলোকে একসাথে চাপ দিন। তারপর শ্বাস ছাড়ার সাথে সাথে ছেড়ে দিন। আপনার চোয়াল দৃঢ়ভাবে চেপে ধরুন, আপনার মুখমন্ডলের এবং মাথার খুলির মাংসপেশী শক্ত করুন। এখন শ্বাস ছাড়ুন এবং শিথিল হোন।

মানসিক চাপে থাকার সময় মানুষ দ্রুত শ্বাস নিয়ে থাকে। আপনি এর বিপরীত কাজটি করার চেষ্টা করুন , অর্থাৎ লম্বা এবং ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রসবের সময় শ্বাস নেওয়ার ব্যাপারে সাবধান হলে :

- এটি আপনার দুশ্চিন্তা দূর করবে এবং শরীর শান্ত রাখতে সাহায্য করবে। 

- জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণভাবে খোলার আগে যে ধাক্কার অনুভব হয় তার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করবে যা আপনার প্রসবের প্রথম ধাপের শেষের দিকে অনুভূত হবে।

- প্রসবের সময় বাচ্চার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে। 

- ধীরে এবং গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করুন যা আপনার কাছে আরামদায়ক মনে হবে। যখন আপনি শ্বাস ছাড়বেন,আপনার ফুসফুস থেকে বাতাস বের করার সাথে সাথে, আপনার শরীর থেকে দুশ্চিন্তা বের করে দিন। এটি করার সময় আপনি দৃঢ় শব্দ, দীর্ঘশ্বাস অথবা গোঙ্গানো শব্দ (‘আহ’ বা ‘হুম’) করতে পারেন।

প্রসবের সময় শারীরিক অবস্থানের পরিবর্তন আপনার ব্যথা সামলাতে অনেকটা সাহায্য করবে। কিন্তু প্রসবের সময় উঁচু হয়ে বসা বা আপনার হাত এবং হাঁটুর উপর ভড় দিয়ে উপুড় হয়ে থাকা আপনার জন্য কঠিন হবে যদি না আপনি অভ্যস্ত হন। গর্ভাবস্থায় এগুলোর অনুশীলন করা ভালো।

দেয়ালের দিকে তাকিয়ে, দেয়াল থেকে প্রায় ৩০ সে.মি. দূরে দাঁড়ান। দু বাহু দেয়ালে রেখে শরীরকে উপরিভাগ সামনের দিকে ঝোঁকান। এবার একপায়ের হাঁটু ভাজ করে আরেক পা পেছনের দিকে এক মিটারের মত দূরে নিন। আপনার শরীরের ভড় আপনার বাহু এবং সামনের পায়ের উপর থাকবে। আপনার পেছনের পায়ের পেশীতে প্রসারন বা স্ট্রেচ অনুভব করবেন। এই অবস্থান ধরে রাখুন এবং প্রসারণের মাঝে শ্বাস নিন। অন্য পা দিয়ে পুনরায় এই চর্চা করুন।

কাঁধ ঘুরানোর ব্যায়াম দাঁড়িয়ে বা চেয়ারে আরাম করে বসে করতে পারেন। আপনার প্রত্যেক কাঁধে আপনার আঙ্গুলগুলো রাখুন এবং পিছনের দিকে আপনার কনুই বৃত্তাকারে ঘোরান। এটি আপনার পাজরের খাঁচার চাপও সহজ করবে। 

সর্বশেষ, প্রসব সম্পর্কে জানুন। সাথে কাছের যে কাউকে রাখতে পারেন। যতটা সম্ভব নিজেকে শান্ত রাখুন। 

ভিডিও : 

তথ্য : fairy land

 

Leave a Comment