আপনার সন্তান কি খুব চঞ্চল? জানুন করণীয় কী 

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮

শিশুরা অকারণে চঞ্চল। কিন্তু এমনটি যদি হয় তারা চঞ্চলতার সীমা ছাড়িয়ে ক্ষতিকারক ভাঙ্গনের দিকে যাচ্ছে , এমনটি যদি হয় যে তাদের এই চঞ্চলতার সঙ্গে আনন্দের কোন যোগ নেই, তারা নিজেরা তো পাচ্ছে না কোন আনন্দ অন্যকেও আনন্দ বিলাচ্ছে না। তবে সে চঞ্চলতা চপলতাকে সন্দেহের চোখে দেখতে হবে।

স্বাভাবিকভাবে ৩ থেকে ৭ বছরের বাচ্চাদের দেহমনে অতিরিক্ত শক্তি থাকে। উৎসাহ থাকে অপরিসীম ফলে তারা একটু অস্থির থাকে। তবে আস্তে আস্তে বাচ্চারা এই অস্থির সময়কে কাটিয়ে ওঠে এবং শান্ত হয়। কিন্তু এমনটি যদি হয় স্বাভাবিক চঞ্চলতাকে ছাড়িয়ে যায়, তবে আমরা সন্দেহ করব, যদি এমনটি হয় কখনই সে স্থির নয় তাকে আমরা সন্দেহ করব। সাধারণত শতকরা ১০ থেকে ১৫টি বাচ্চা এই এডিএইচডি রোগে ভোগে। ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি ভুগে থাকে।

রোগের অনেক লক্ষণ সাধারণত ৪ বছর বয়সের আগেই প্রকাশিত হয়; তবে অবশ্যই ৭ বছরের আগে। যদিও এই বয়সে তার জীবনে অত প্রভাব ফেলে না, প্রভাব ফেলে সে যখন হাইস্কুলে ওঠে, তখন। এডিএইচডি Attention deficit hyperactivity disorder (ADHD) একা একা থাকতে পারে অথবা অন্য রোগের সঙ্গে যেমন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, অস্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে পারে।

এই অস্থিরতায় পরিবারের প্রভাব থাকে। যেসব পরিবারে এটপিক রোগ যেমন হে ফিবার, এ্যাকজিমা, এ্যাজমা, রোগের প্রকোপ থাকে সেসব পরিবারের সদস্যদের এই অস্থিরতা রোগটা বেশি হতে পারে। যে বাচ্চা ছোটবেলায় ম্যানিনজাইটিসে ভুগেছে তার ক্ষেত্রে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। যে বাচ্চা মাথায় আঘাত পেয়েছে তার ক্ষেত্রে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। যে মা এ্যালকোহল ও সিফারেট / টোব্যাকোতে আসক্ত এবং গর্ভে থাকাকালে এই আসক্তির প্রভাবে পরবর্তীতে বাচ্চার মধ্যে এই এডিএইচডি রোগ বেশি দেখা যায়।

সতর্ক হতে হবে কখন? 

সাধারণত ২ প্রকার লক্ষণ খুব বেশি দেখা যায়। একটা হলো অতিঅস্থিরতা এবং আরেকটি হলো অতি অমনোযোগিতা।

অমনোযোগিতার লক্ষণঃ

- কোন কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ জানার বিষয়ে আগ্রহ কম বা পারে না। 

- পড়ালেখা এবং খেলায় মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ। 

- এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে সহসা স্থানানত্মরিত হয়। 

- টিভি চ্যানেল মিনিটে মিনিটে পরিবর্তন করতে চায়। 

- কথা শুনতে একদম অনাগ্রহ। 

- উপদেশ ভুলে যায়। 

- স্কুলের কাজ অগোছালো এবং অযত্ন ও ভুলে ভরা। 

- সহসাই অন্যত্র তাড়িত হয়। 

- যে কাজগুলোয় মনোনিবেশ দরকার সে কাজগুলো করতে ব্যর্থ হয়। 

- সব সময় ছোটখাটো জিনিস হারাতেই থাকে। 

অস্থিরতার লক্ষণঃ

- সব সময় চিৎকার করতে থাকা। 

- সব সময় হাত-পা চলছে ও ক্লাসরুমের সিট ছেড়ে উঠে পড়ছে বার বার। 

- অযথা দৌড়াদৌড়িতে লিপ্ত অথবা অকারণ সিঁড়ি বেয়ে উঠছে কিংবা নামছে। 

- বড় বেশি কথা বলতে থাকে। 

- কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট নয়, সব সময় এটার বায়না, ওটার জন্য বায়না। 

- আপনাকে ক্লান্ত করে কিন্তু সে ক্লান্ত হয় না। 

- রাতে বার বার ঘুম ভেঙ্গে যায়। 

অতি আবেগের লক্ষণঃ 

- সে বিপদ কোনটি তা বোঝে না। 

- প্রশ্নের আগেই উত্তর দিয়ে দেয়। 

- তার পালা আসার জন্য অপেক্ষার পক্ষপাতি সে নয়। 

- শৃঙ্খলাকে ভেঙ্গে ফেলে। 

- চিন্তা ভাবনা ছাড়া কাজ করে। 

- অল্পতেই মনোযোগ শেষ। 

- নিষেধ নামক শব্দটি তার খুবই অপছন্দের। 

কি করতে হবে এই রোগে?

এসব লক্ষণ যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে দেখা যায় তবে সাবধান হন এবং শিশু ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করুণ। কোন সিটি স্ক্যান বা কোন পরীক্ষাতে কিছু পাওয়া যাবে না। আপনার বাচ্চার আইকিউও কম হবে না।

এডিএইচডি কি পুরোপুরি সেরে যেতে পারে?

না। পুরোপুরি না সারলেও ওষুধ ও পরিবেশ এবং বাবা-মা ও শিক্ষকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অভাবনীয় উপকার পেতে পারেন।

বাবা-মায়ের জন্য পালনীয় বিষয় :

- যখন সে ভাল কাজ করবে তখন তাকে প্রশংসা করুণ। প্রশংসা তাকে অভাবনীয়ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। 

- তাকে বকা যাবে না, মারা যাবে না। তাতে আরও খারাপ হবে। বার বার ভালবাসার সঙ্গে তাকে সংশোধন করুন। 

- যেখানে ছেলেটাকে বেশিক্ষণ বসে থাকতে হবে সে জায়গাটা তার জন্য পরিত্যাগ করাই ভাল। 

- পরিষ্কার কিছু পজিটিভ নিয়ম বেঁধে দিন সেখানে আপনার মনোভাব সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। 

- সকালবেলাতে শারীরিক কসরত করান। 

- কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ দিন ওকে। 

- চেষ্টা করুণ তাকে দিয়ে জোরে জোরে পড়বার, নোট করবে সে। 

- পড়াশোনা এমন একটা শান্ত পরিবেশে করবে যেখানে আসবে না কোন ফোনের রিং টোন। 

- টিভি দেখা কমিয়ে দিতে হবে। 

- যোগ আসন আপনার বাচ্চার মস্তিষককে শান্ত করবে। 

- প্রার্থনারও আছে আলৌকিক শান্ত করার ক্ষমতা। 

- আপনার ডাক্তারের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ অব্যাহত রাখুন। শিক্ষকেরও ভূমিকা অনেক বেশি। তাকেও একটা পজিটিভ সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে

সূত্র : গুগল 
 

Leave a Comment