গর্ভাবস্থায় ত্বকের যত্ন নিচ্ছেন তো?  

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • অক্টোবর ১০, ২০১৮

গর্ভাবস্থায় অনেকেই অনাগত সন্তানের প্রতি এতটাই দুর্বল থাকেন যে, নিজের শরীরের যত্ন নিতেই ভুলে যান। কিন্তু এই সময় থাকতে হবে সদা প্রফুল্ল। তাই রুপচর্চার বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা চাকরি করেন বা বিশেষ কোন পেশার সাথে যুক্ত আছেন তাদের এই সময় রূপচর্চাকে মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না। যেভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন :

১ .গর্ভাবস্থায় রিলাক্স করার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় বের করে নিন। এতে আপনার রূপ ও লাবণ্য দুটোই বাড়বে।

২. নাক দিয়ে খুব গভীরভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং মনে মনে চার পর্যন্ত গুণুন। এটা ১০ মিনিট করুন। আপনার মর্নিং সিকনেস কাটিয়ে উঠতে এটি সাহায্য করবে।

৩. চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসুন। কোন কথা বা কোন স্মৃতি যদি অবচেতন মনে আপনাকে প্রশান্তি দেয় তবে সেটি ভাবুন। এবার আস্তে আস্তে পা থেকে শুরু করে পেট, পিঠ, ঘাড়, গলা ও মুখের মাসলগুলো শিথিল করে ছেড়ে দিন। শুধু নাক দিয়ে নিশ্বাস নিন আর ছাড়ুন। এভাবে প্রতিদিন ৫-৭ মিনিট করুন।

৪. গর্ভাবস্থায় মায়েদের পেটে চামড়ায় টান পড়ার ফলে দাগ বা স্ট্রেচ মার্কের সৃষ্টি হয়। এই দাগ সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়না, তবে সন্তান জন্মের পর আস্তে আস্তে দাগগুলো ফেড হয়ে যায়। তবে ২০ সপ্তাহের পর থেকে গোসলের আগে ও রাতে শুতে যাবার সময় ভিটামিন ই যুক্ত যে কোন ক্রিম হালকা করে তলপেটে ম্যাসাজ করুন। এতে জায়গাগুলোতে চুলকাবে না।

৫. গর্ভবস্থায় আরেকটি সমস্যা হল পিগমেন্টেশন। যার ফলে গালে আর কপালে এক ধরনের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। এই দাগ শিশু জন্মের পরেই চলে যায়। তবে এ জন্য কোন ব্লিচ ব্যবহার না করাই ভালো।

৬. এ সময় চড়া মেকাপ এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়া উঁচু হিল একেবারে এড়িয়ে চলুন। দিনের বেলায় বের হওয়ার সময় হালকা কমপ্যাক্ট বা ফেস পাউডার বুলিয়ে নিন। কন্সিলার দিয়ে দাগ ছোপ ঢেকে নিন। অবশ্যই সান প্রোটেক্ট সানস্ক্রিম লাগিয়ে বের হবেন। অনুষ্ঠানে গেলে হালকা মেকাপ করুন। লাল, কমলা, মেরুন এর বদলে গোলাপি শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করুন। এই সময় স্বাভাবিক সৌন্দর্যটাই ফুটে উঠতে দিন।

৭. গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে চুলের বৃদ্ধি অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি হয়। তাই ২ মাস অন্তর চুলে ট্রিম করিয়ে নিন। একদিন পর পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন ও সপ্তাহে অন্তত ১দিন কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। গোসলের পর বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কারলার, রোলার, আয়রন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

৮. এই সময় শরীর ও ত্বকের ময়েশ্চার এর ঘাটতি হয়। প্রতিদিন গোসলের পর ও রাতে ঘুমাতে যাবার আগে অবশ্রই মুখে, হাতে, পায়ে ও পেটে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তারপর ঘুমাবেন। শুরু থেকেই এটি করলে ত্বকের কালচে ভাব অনেকটাই কমে যাবে।

৯. ফ্রুট ফেসিয়ালের জন্য মাসে অন্তত একবার পার্লারে যেতে পারেন। তবে সেখানে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ফেসিয়াল করার সময় ঝুকে কখনও স্টিম নেবেন না। হট টাওয়েল দিয়ে স্টিম নেবেন। ক্লান্তি দূর করার জন্য হাত-পা মাসাজ করাতে পারেন।

প্রতিদিনের যত্ন:

১ .একটা ছোট গাজর কুড়িয়ে তাতে আধা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিযে ১৫ মিনিট রাখুন। গাজরের বিটা ক্যারোটিন আপনার ত্বকে পুষ্টি জোগাবে। প্রতিদিন একটা গাজর খেলেও একই কাজ করবে।

২. ২ টেবিল চামচ শশার রস আর মুলতানি মাটির পেস্ট তৈরী করুন। ত্বকের যেসব জায়গায় কালো ছোপ পড়েছে সেখানে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে এক মগ পানিতে একটি লেবুর রস চেপে সেই পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৩. সপ্তাহে অন্তত একদিন ভালো করে চুলে অলিভ অয়েল মাসাজ করুন। আরাম পাবেন। চাইলে ১০ মিনিট হট টাওয়েল দিতে পারেন।

সতর্কীকরণ:

১ .তবে এ সময় শরীরের কোন অংশে ব্লিচ করবেন না। কারণ ব্লিচে যে সল্ট ব্যবহার করা হয় তা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।

২. ভেজ পিল, গ্যালভানিক, ওজোন এসব ট্রিটমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন। যেহেতু এগুলো ইলেক্ট্রিকে চলে তাই দুর্ঘটনাবশত শক লেগে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। মোট কথা ইলেক্ট্রিক সার্ভিস ব্যবহার করা হয় এমন কোন পার্লার সার্ভিস না নেওয়াই ভালো।

৩. মাথায় মেহেদি দিলে ১ ঘন্টার বেশি রাখবেন না। দীর্ঘ সময় লাগলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

৪. চুলে কালার করাবেন না। কারণ এতে যে ডেভেলপার ব্যবহার করা হয় তা মাথার ত্বক ভেদ করে রক্তে মিশে গিয়ে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া চুল রিবন্ডিং করা থেকেও বিরত থাকুন। এর কড়া ক্যামিকের শিশুর জন্য ক্ষতিকারক।

৫. ফুল বডি মাসাজ করাবেন না। অসাবধানতায় পিঠে বা পেটে আঘাত লেগে যেতে পারে। প্রয়োজন মনে হলে শুধু হাত-পা করাবেন।

উপরোক্ত নিয়মগুলো ঠিকমতো মেনে চললেই আপনি এই সময়টাতেও থাকবেন আত্মবিশ্বাসী, লাবণ্যময়ী আর হয়ে উঠবেন অপরূপা সুন্দরী এক মা।

সূত্র : গুগল 

Leave a Comment