মাসিক পূর্ববর্তী মানসিক বিষণ্ণতা

  • তাশফিয়া আমিন 
  • অক্টোবর ৩১, ২০১৮

PMDD হলো প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রোম বা PMS (Premenstrual Dysphoric Disorder) এর তীব্র রুপ। PMS হলো মাসিকের আগের বিভিন্ন লক্ষন। PMDD অবস্থায় PMS-এর লক্ষণগুলো এত বেশি তীব্র আকার ধারন করে যে এটি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং আশেপাশের মানুষের সাথে আপনার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই অবস্থায় আপনি মাসিক শুরুর আগে প্রচন্ড বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় ভুগতে পারেন বা অল্পতেই রেগে উঠতে পারেন। এর উপসর্গগুলো মাসিক শুরুর ৭-১০ দিন আগে শুরু হয় এবং মাসিক শুরুর ঠিক আগে আগে বা শুরু হয়ে গেলে আর থাকে না।

PMS-এর মতই PMDD-র কারনও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, তবে মাসিক চক্রের শেষ সপ্তাহে এস্ট্রোজেন (oestrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (progesterone)-এর মাত্রা কমে যাওয়াটা এতে একটি ভুমিকা রাখে। যেসব নারীর বিষাদজনিত বিভিন্ন সমস্যা (depressive disorders) রয়েছে বা বাচ্চা জন্মদানের পরবর্তী সময়ে বিষণ্ণতায় ভুগে থাকেন, তাদের এই সমস্যাটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্য যে কয়টি জিনিসের জন্য PMDD-তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সেগুলো হল মদ্যপান করলে, মোটা হলে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় পান করলে, ব্যায়াম না করলে এবং আপনার মায়েরও একই সমস্যা থাকলে।

আপনি PMDD-তে আক্রান্ত কিনা তা বুঝবেন কি করে?

শারীরিক লক্ষনঃ

-পেট ফুলে যাওয়া (bloating), কোষ্ঠকাঠিন্য/ডাইরিয়া, স্তনে টনটনে বোধ, মাথাব্যাথা, গিঁটে বা মাংসপেশিতে ব্যাথা।

-অতিরিক্ত ক্ষুধা বা অপরিমিত খাওয়া।

-প্রাত্যহিক কাজকর্ম বা মানুষজনের সাথে সম্পর্কগুলোতে কোন আগ্রহ না পাওয়া।

-ক্লান্তি বোধ বা শক্তিহীনতা।

-নিরাশা বা দুঃখবোধ, কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।

-দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ বোধ করা।

-নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।

-দ্রুত মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়া এবং মাঝে মধ্যে কান্নাকাটি করা।

-হঠাৎ প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হওয়া (Panic attacks)।

-দ্রুত বিরক্ত হওয়া বা রেগে যাওয়া, যাতে অন্যরাও প্রভাবিত হতে পারে।

-ঘুমের সমস্যা।

-কোন কিছুতে মনঃসংযোগ করতে সমস্যা হওয়া।

আপনার PMDD আছে এটা নিশ্চিত হওয়া গেলে এর চিকিৎসা করাটা খুবই সহজ, চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে, জীবন যাত্রায় প্রচুর পরিবর্তন এবং, কারো সমস্যা খুব বেশি হলে, ওষুধ এবং কাউন্সেলিং।

জীবন যাপনের ধরন দিয়ে শুরু করা যাক, প্রথমেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হন। পুরো দানার শস্য (whole grains), শাকসবজি এবং ফলমূল খান। লবণ, চিনি, মদ এবং ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন। এরপর আলস্য ঝেড়ে ফেলে বেশ বেশি অ্যারোবিক এক্সারসাইজগুলো করুন। এগুলো শুধু মাসিক শুরুর আগের কয়দিন নয়, পুরো মাস জুড়ে করুন। পুরো মাস জুড়ে এগুলো করতে থাকলে মাসিক চক্রের শেষ কয়দিনে আপনার উপসর্গগুলো কম তীব্র হবে।

রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসা শুরু হলে এর উপসর্গগুলো দূর হয়ে যায় বা সহনীয় মাত্রার মধ্যে চলে আসে। চিকিৎসা বা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এই উপসর্গগুলো আরও তীব্র আকার ধারন করে প্রাত্যহিক জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। বিষাদে আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো মাসের শেষ অর্ধেকের সময় আরও তীব্র আকার ধারন করতে পারে এবং তাদের জন্য ঔষুধ বদলে দিতে হতে পারে।

Leave a Comment