শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে করণীয়

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ৫, ২০১৮

শীতের এই সময় শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলোবালি, ঝরা পাতার গুঁড়া উড়তে থাকে, পাশাপাশি রোগজীবাণুর সংক্রমণও বেড়ে যায়। আর এ কারণে এ সময়টাতে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, অ্যাজমাসহ শ্বাসকষ্টজনিত নানা অসুখে আক্রান্ত হয়। তবে সঠিক যত্ন নিলে শীতেও শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

অ্যাজমা বা হাঁপানি : অ্যাজমা বা হাঁপানি শিশুর শ্বাসনালির এক ধরনের অ্যালার্জি। মা-বাবার অ্যাজমা থাকলে শিশুও অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া পরিবেশগত কারণেও শিশুর অ্যাজমা হতে পারে। তবে অ্যাজমা ছোঁয়াচে নয়। অ্যাজমায় আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ খেলে কিংবা মায়ের সংস্পর্শে এলে শিশুর অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। শিশুর সামনে ধূমপান, ভাইরাস আক্রমণ, রান্নার চুলার ধোঁয়া, বাতাসে ধুলোবালি, ফুলের রেণু, কার্পেটের ধুলা প্রভৃতি কারণে শিশু অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারে।

অ্যাজমায় আক্রান্ত শিশুর বুকের ভেতর বাঁশির মতো শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়, কাশি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে। শিশুর অ্যাজমা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া ঘরে অতিরিক্ত আসবাবপত্র, কার্পেট, পালকযুক্ত পোশাক ও খেলনা রাখা উচিত নয়। এসময় কুয়াশায় শিশুকে কানটুপি পরাতে হবে, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ধোঁয়া, ধুলা, ফুলের রেণু আছে এমন স্থানে শিশুকে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শে ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে।

ব্রংকিউলাইটিস : এটি শিশুদের ফুসফুসের একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। সাধারণত দুই বছরের কম বয়সী শিশু এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। মায়ের বুকের দুধ পান না করলে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকলে, জন্মের সময় কম ওজন হওয়া শিশুরাই বেশি ব্রংকিউলাইটিসে আক্রান্ত হয়। ব্রংকিউলাইটিসের মাত্রা বেড়ে গেলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ব্রংকিউলাইটিসে আক্রান্ত শিশুর নাক দিয়ে পানি পড়ে, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে বাঁশির মতো আওয়াজ হয়। এক্ষেত্রে শিশুর নাক সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। বারবার শিশুকে বুকের দুধ, যথেষ্ট পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

নিউমোনিয়া : শীতকালে শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হচ্ছে নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়া হল ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ফুসফুসের সংক্রমণ। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া বেশি প্রাণঘাতি। যে কোনো বয়সের শিশুই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ঠাণ্ডা পানি ও আইসক্রিম খেলে, গরম কাপড় না পরলে শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশুর জ্বর অনেক বেশি থাকে, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়, শিশু খেতে পারে না, শ্বাস নেয়ার সময় বুকের পাঁজর দেবে যায়, জিহ্বা ও ঠোঁট নীল বর্ণের হয়, শিশু বুকের দুধ পান করতে পারে না, বমি করে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে সাবধানে রাখতে হবে যেন সর্দি-কাশি ও ভাইরাস জ্বর না হয়। ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে, কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে আর গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে।

ইনহেলার ও নেবুলাইজার ব্যবহার : শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের চিকিৎসায় ইনহেলার ও নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক অভিভাবকই শিশুকে ইনহেলার ব্যবহার করাতে ভয় পান। যদিও ইনহেলার ব্যবহারে ভয়ের কিছু নেই। কারণ ইনহেলারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে স্টোরয়েড ইনহেলার ব্যবহারের পর শিশুর মুখ কুলকুচি কিংবা রাতে ব্যবহারের পর দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিতে হবে। নয়তো জিভে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে।

নেবুলাইজার একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের তরল ওষুধের মিশ্রণকে সিস্ট বা কুয়াশার মতো অ্যারোসোল হিসেবে সরাসরি ফুসফুসে ইনহেলা বা টেনে নেয়া হয়। সেজন্য এটি যে কোনো ওষুধ থেকে বেশি কার্যকর। ইনহেলারের মতো নেবুলাইজার ব্যবহারেও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে নেবুলাইজার ও ইনহেলার সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা উচিত।

Leave a Comment