যে ৬টি কারণে প্রসবকাল দীর্ঘ হয় 

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ৭, ২০১৮

প্রসব বেদনা শুরু হবার পর সন্তান জন্ম নিতে কত সময় লাগবে তা কখনোই আগে ভাগে বলা যায় না। তবে মোটামুটি ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রসবকালকে স্বাভাবিক ধরা হয়। এর বেশি সময় ধরে প্রসববেদনা থাকলে তা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ। নানা কারণে প্রসবকাল দীর্ঘ হতে পারে।

সারভিক্সের মুখ প্রসারিত হতে দেরি হওয়া : সারভিক্সের মুখের প্রসারণ প্রসবের প্রথম ধাপ। একে বলা হয় ডাইলেশন। এসময়ে জরায়ুর পেশীগুলো সংকুচিত হতে থাকে যা সারভিক্সের মুখ খুলে দেয় তথা ডাইলেশন ঘটায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সংকোচন ধীরে ধীরে শুরু হয় কিন্তু সময়ের সাথে বাড়তে থাকে। তবে প্রতিটি গর্ভ ও প্রসবকালীন অবস্থা একক ও ভিন্ন। অনেকের ক্ষেত্রে হয়ত কয়েক সেন্টিমিটার ডাইলেশন দিয়ে প্রসব শুরু হয়, কারও কারও ক্ষেত্রে আবার শুরুতেই বেশ অনেক খানি ডাইলেশন পাওয়া যায় শুরুতেই।

কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই আগেভাগে কিছু ভাবা সম্ভব নয় যে সারভিক্স কতক্ষণ পর পর প্রসারিত হবে বা আদৌ হবে কিনা। কারও কারও ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে প্রসারণ হয়, কেউ কেউ আবার ফলস পেইনে ভোগেন আর কয়েক সেন্টিমিটার ডাইলেশন হবার পরও সারভিক্সের মুখ আবার একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ধীর গতির ডাইলেশনের কারণে প্রসবকাল দীর্ঘ হয়। এসময় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলেও ডাইলেশনে দেরি হতে পারে। তাই এ সময়ে পানি পান করা ও তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও দ্রুত ডাইলেশন করানোর কিছু মেডিক্যাল পদ্ধতি রয়েছে যার একটি হল অগমেন্টেশন। এ পদ্ধতিতে সংকোচন বৃদ্ধি করার জন্য পানি ভেঙে দেয়া হয়।

প্রসবকালীন হরমোনের কারণে অযাচিত আবেগ সৃষ্টি : গর্ভবতী মায়ের সারভিক্স প্রসারিত হবার জন্য অক্সিটোসিন হরমোনটি নির্গত হয়। এই হরমোন যত বেশি নির্গত হবে ডাইলেশন তত দ্রুত হবে। আর এই হরমোনটি তখনই বেশি পরিমাণে নির্গত হয় যখন আশপাশের পরিবেশ শান্ত থাকে এবং মা প্রসবের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন পরিবেশে মায়েরা সন্তান জন্ম দেন যা অত্যন্ত কোলাহলপূর্ণ। ফলে মায়ের মনোযোগ নষ্ট হয় এবং মস্তিষ্ক যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিটোসিন হরমোন উৎপন্ন করতে পারে না।

এমনকি কোনো কারণে যদি মায়ের আগে থেকেই কোন উদ্বিগ্নতা বা চিন্তা থেকে থাকে তবে তা এই হরমোন উৎপাদনে বাধা দেয়। তাছাড়া মায়ের উদ্বিগ্নতা থেকে এড্রেনালিন হরমোন নির্গত হয় যা ডাইলেশন ও ইউটেরাসের সংকোচনকে আরও দীর্ঘ করে দেয়। পক্ষান্তরে যে মায়েরা শান্ত অ নিরিবিলি পরিবেশে সন্তান জন্ম দেন তাদের ক্ষেত্রে প্রসবকাল খুব অল্প সময়ের হয়ে থাকে। তাই এ সময়ে মায়ের সাথে থাকা ব্যক্তিদের মাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। মা যেন এই সময়ে যতটা সম্ভব ভাল অনুভব করেন সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

মায়ের গর্ভে শিশুর অবস্থান : গর্ভস্থ শিশু কি পজিশনে আছে তার উপর প্রসবকাল দীর্ঘ হবে না দ্রুত হবে তার অনেকটাই নির্ভর করে। শিশু যদি এন্টেরিওর পজিশনে থাকে অর্থ্যাৎ মায়ের পেছনদিকে মুখ করে মাথা নিচে ও পশ্চাৎভাগ অপরে থাকলে প্রসবকাল স্বল্প সময়ের হয়। এটাই প্রসবের জন্য শিশুর আদর্শ পজিশন। কিন্তু অন্য পজিশনে থাকলে প্রসবকাল দীর্ঘ হয়ে থাকে।

পোস্টেরিওর পজিশনে শিশুর মাথা নিচে থাকলেও শিশুর মুখ থাকে মায়ের সামনের দিকে বা পেট বরাবর। অর্থ্যাৎ শিশুটিকে ঘুরে তথা পিছন ফিরে তবে সারভিক্সের মুখের কাছে আসতে হবে। এটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার, এতে প্রসবকাল দীর্ঘ হয়ে থাকে। তাছাড়া মায়ের অনেক কোমর ব্যাথাও হয়। ব্যাথা কমানোর জন্য অনেকসময় এপিডুর‍্যাল এনেস্থেশিয়া ব্যবহার করা হয়। শিশুর থুতনি যদি বুকের সাথে লাগানো থাকে তবে এর ব্যাস সবচেয়ে কম হয় এবং মাথাটি সারভিক্স দিয়ে বের হতে সহজ হয়। কিন্তু থুটনি বুকের সাথে লাগানো থাকলে ব্যাস বড় হয় আর মাথা বের করতে সারভিক্সকেও বেশি প্রসারিত হতে হয় ফলে সময়ও বেশি লাগে।

মায়ের পেলভিসের আকার :

- মায়ের পেলভিসের আকার ৪ ধরনের হয়ে থাকে।

- গাইনিসয়েড (Gynecoid) – এক্ষেত্রে পেলভিসের প্রবেশ অংশ ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে আবার নিচের দিকও বেশ প্রশস্ত হয়ে থাকে।

- এনথ্রোপয়েড (Anthropoid)-এক্ষেত্রেও ডিম্বাকৃতির প্রবেশমুখ থাকলেও নিচের দিকটা গাইনিসয়েড পেলভিসের মত প্রশস্ত হয় না। এ ধরনের পেলভিস হয়ে থাকলে শিশু সাধারণত ব্রীচ পজিশনে থাকে।

- প্ল্যটিপয়েড( Platypoid) -এক্ষেত্রে মায়ের পেলভিসের প্রবেশ্মুখ ডিম্বাকৃতির হয় আর নিচের দিক গাইনিসয়েডের চেয়েও প্রশস্ত হয়। এরকম পেলভিসের ক্ষেত্রে শিশুরা বাম থেকে ডানে আড়াআড়িভাবে থাকে।

- এন্ডরয়েড (Android) – এক্ষেত্রে পেলভিসের প্রবেশমুখ হার্ট আকৃতির হয় আর নিচের দিকটি সরু হয়। এরকম পেলভিসের ক্ষেত্রে শিশু পোস্টেরিওর পজিশনে থাকে।

-গর্ভাবস্থায় কিছু থেরাপি যেমন ইয়োগা, ফিজিয়োথেরাপি, অস্টিওপ্যাথি ইত্যাদি করা থাকলে প্রসব সহজ হয়।

- যমজ শিশু জন্ম দিলে : যমজ দুই বা ততোধিক শিশুর জন্ম দিলে নরমাল ডেলিভারিতে সময় স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি লাগতে পারে।

ইন্টারভেনশন ব্যবহার করা : দীর্ঘ প্রসবকাল একটি ধীর গতির এবং কষ্টদায়ক প্রক্রিয়া। এতে মায়ের প্রকার শারীরিক শক্তি প্রয়োজন হয়। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক সময় মা শরীরের শক্তি ও মনোবল হারিয়ে ফেলেন। এসময়ে যদি তার প্রসব বেদনা কমানোর জন্য কোন পদ্ধতি যেমন এপিডারয়াল এনেস্থেসিয়া বা অন্য কোন ইন্টারভেনশন যেমন; অগমেন্টেশন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় তবে অনেক ক্ষেত্রে এগুলো প্রসবকাল আরও দীর্ঘ করে দিতে পারে যার কারণে অবশেষে সিজার করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

Leave a Comment