ক্রিপটিক প্রেগনেন্সি হয় যে কারণে

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ৯, ২০১৮

আচ্ছা, এমন কি হয়েছে কখনো যে, কোন মহিলা পাকস্থলীর ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গেছেন, কিন্তু ফিরেছেন কোলে সন্তান নিয়ে! ব্যাপারটা খুবই অস্বাভাবিক না? অস্বাভাবিক হলেও সত্য যে, প্রতি ৪৫০ জন মহিলার মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে। চিকিৎসাশাস্ত্রে  রয়েছে এর একটি যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা। এই ধরনের প্রেগনেন্সিকে ‘ক্রিপটিক প্রেগনেন্সি’ বলা হয়। এই ধরনের ঘটনায় সাধারণত, কোন মহিলা ২০ সপ্তাহের আগে বুঝতে পারেন না যে তিনি গর্ভবতী।

যে সকল মহিলাদের শরীরে এইচসিজি (হিউম্যান ক্রনিক গোনাডোট্রোপিন) হরমোন অত্যন্ত কম পরিমাণে থাকে তাদের ক্রিপটিক প্রেগনেন্সি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একজন মহিলা গর্ভবতী কি না তা, ডাক্তাররা এইচসিজি হরমোনের সাহায্যেই পরীক্ষা করে দেখেন। যার ফলে ঘরোয়া প্রেগনেন্সি টেস্ট, রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, এবং আল্ট্রাসোনোগ্রাফি টেস্টেও কোন মহিলা গর্ভবতী কি না তা ধরা পড়ে না। ক্রিপটিক প্রেগনেন্সি অনেকগুলি কারণে হতে পারে । এখানে তেমনই কিছু কারণ সম্বন্ধে আলোচনা করা হল –

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম : পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমের প্রভাবে মহিলাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা প্রভাবিত হয়। ডিম্বাশয়ে অনেক ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় ফলে শরীরে বেশি মাত্রায় হরমোন নির্গত হতে থাকে। এবং তার ফলে ডিম্বাশয়ের আকৃতিও বেড়ে যেতে পারে । যদিও এটি খুব বেশি ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু এর ফলে শরীরে হরমোনের মাত্রার তারতম্য ঘটে।

সাম্প্রতিক প্রেগনেন্সি : যদি আপনি খুব সাম্প্রতিক কালে প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকেন, তবে সম্ভবত এখনও আপনার শরীরে হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল হয়নি। প্রেগনেন্সির পরে শরীরে হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল হতে একটু সময় লাগে। এই সময়ে হরমোনের মাত্রার হেরফের ঘটতে পারে। এই সময়ে সাধারণত, শরীরে এইচসিজির মাত্রা কম থাকে, তাই এই সময়ে অরক্ষিত যৌন মিলনের কারণে ক্রিপটিক প্রেগনেন্সির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শরীরে কম ফ্যাট : শরীরে কম ফ্যাটের কারণেও হরমোনের মাত্রার তারতম্য ঘটতে পারে। শরীরে ফ্যাটের পরিমান একেবারে কম হয়ে গেলে, ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের উৎপাদন কমে যায় । ইস্ট্রোজেন হরমোন প্রেগনেন্সির লক্ষণগুলিকে ফুটিয়ে তোলে যেমন স্তনের বৃদ্ধি, প্রাতঃকালীন অসুস্থতা বা ‘মর্নিং সিকনেস’ ইত্যাদি। তা ছাড়াও এটি এইচসিজি হরমোন উৎপাদনের প্রক্রিয়াটিকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি : কিছু জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি যেমন ডিপ্রোভেরা, নরপ্লান্ট, বস মিরেনা কয়েল থেকে এমন কিছু হরমোন নির্গত হয় যা শরীরের সাধারণ প্রেগনেন্সি হরমোনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । এতে প্রেগনেন্সির সম্ভাবনা বেড়ে যায় । কিছু বড়িতে আবার প্রোজেস্টেরন এর মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বেশি থাকে, যা উত্তেজিত করার মাধ্যমে জরায়ুকে প্রেগনেন্সির জন্য তৈরি করে । বাচ্চা জন্মানোর পর, না জেনে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি নিয়মিত খেতে থাকলে, ক্রিপটিক প্রেগনেন্সির সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

স্ট্রেস :  মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে স্ট্রেসে ভুগলে, শরীরে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাবে। এর ফলে আপনার শরীরে হরমোনের মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং প্রেগনেন্সির লক্ষণগুলি কমে যেতে পারে বা গোপন থেকে যেতে পারে। নিজের সন্তানের জন্য নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত রাখা প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য। অত্যাধিক স্ট্রেসের কারনে ‘মিসক্যারেজ’ বা অকাল গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু, ক্রিপটিক প্রেগনেন্সি ভ্রূণের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। 

Leave a Comment