সিজারিয়ান কত বার করা যাবে?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ১১, ২০১৮

সিজারিয়ান সেকশন কতবার করা যাবে তা জরায়ুর অবস্থা, মূত্রাশয়ের অবস্থা, জরায়ুর আশপাশের অর্গানগুলোর সঙ্গে জরায়ু কতটা জড়িয়েছে এর ওপর নির্ভর করে। তবে তিনটির বেশি সিজারিয়ান নিরাপদ নয়। একই মহিলার সর্বাধিক পাঁচটি সিজারিয়ান করা হয়েছে। শরীরে বারবার কাটাছেঁড়া হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক। বারবার সিজারিয়ান এর কিছু জটিলতা সম্পর্কে জানুনঃ

প্রসবে জটিলতা : প্রতিটি সিজারিয়ান ডেলিভারিতে প্রসবে জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রসবে জটিলতা বলতে বোঝানো হয়েছে প্রসব করাতে কত সময় লাগতে পারে। প্রতিবার সিজারিয়ান করার সময় এর আগের বারের চাইতে বেশী সময় লাগতে পারে কারণ সিজারিয়ান করা হলে মায়ের উদরে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এভাবে বেশ কয়াকবার সিজার করা হলে ক্ষতের কারণে অপারেশনের সময় ঘণ্টা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এভাবে প্রতিটি সিজারিয়ানের সাথে সাথে ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

অতিরিক্ত সার্জারি : সিজার করা হলে এর সাথে সাথে অতিরিক্ত অপারেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে এবং এর ঝুঁকির মাত্রা প্রতিটি সিজারিয়ানের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। অনেক কারণে অতিরিক্ত সার্জারি করার প্রয়োজন পড়তে পারে। প্রতিবার সিজারিয়ানের সাথে সাথে মায়ের জরায়ুতে ক্ষতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কোন কোন সময় এসব ক্ষত শরীরের অন্য অঙ্গের সাথে লেগে যেতে পারে। যার ফলে সিজারের সময় সেই অঙ্গের কাটা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে আবার সার্জারি করার প্রয়োজন পড়তে পারে। অন্য সার্জারি গুলো হতে পারে- অন্ত্রের সার্জারি, হিস্টারেক্টমি, কোন সংক্রমণ থাকলে তা পরিষ্কার করা বা অতিরক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করা ইত্যাদি।

সুস্থ হতে দেরি হওয়া : সাধারণভাবেই সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে সেড়ে উঠতে স্বাভাবিক প্রসবের চাইতে বেশী সময় লাগে। সিজারের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এই সেড়ে ওঠার সময় ও বাড়তে থাকে। একাধিকবার সিজার করা হলে তা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে এবং সুস্থ হয়ে উঠতে আরও বেশী সময় লাগে।

মূত্রথলীর ক্ষতি : সিজারিয়ানের আরেকটি কমন ঝুঁকি হলো মূত্রথলীর ক্ষতি বা ব্লাডার ইনজুরি। ব্লাডার ইনজুরি প্রথম সিজারের ক্ষেত্রেও হতে পারে তবে এর সম্ভাবনা খুব কম। তবে প্রতিবার সিজার করার সাথে সাথে এর ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

রক্ত জমাট বাঁধা : সিজারিয়ানের একটি সাধারণ ঝুঁকি হলো রক্ত জমাট বাঁধা। এটাই সম্ভবত সবচাইতে ভয়ের কারণ এটি উন্নত দেশগুলোতে মাতৃমৃত্যুর সবচাইতে বড় কারণ। সাধারণত পায়ে এবং পেলভিক এরিয়াতে রক্ত জমাট বাঁধে। এই জমাট বাঁধা রক্ত ভেঙ্গে যেতে পারে এবং ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে যা পালমোনারি এম্বোলিজম নামে পরিচিত। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে পা ফুলে যেতে পারে এবং ব্যথা হতে পারে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রধান কারণ হলো দীর্ঘ অপারেশন এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য বেড রেস্টে থাকা। যেহেতু একের অধিক সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে সার্জারির সময় এবং রিকোভারির সময়, দুটোই দীর্ঘায়ীত হয় তাই এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও বৃদ্ধি পায়।

প্লাসেন্টার (গর্ভ ফুল) সমস্যা : সিজারিয়ানের কারণে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্লাসেন্টা অ্যাক্রিটা এবং প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন এর সমস্যাগুলো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং সিজারের সংখ্যা যত বাড়তে থাকে এসব সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা সে সাথে বাড়তে থাকে।

অতিরিক্ত রক্তপাত : যেকোনো সিজারিয়ানেই নরমাল ডেলিভারির চাইতে রক্তপাত বেশী হয়। কিন্তু সিজারিয়ানের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এর ঝুঁকি বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে ৩.৩ ভাগ মায়ের এবং তৃতীয় সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে তা বেড়ে ৭.৯ ভাগ মায়ের হতে পারে।

Leave a Comment