শিশুদের কিডনি রোগ

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • জানুয়ারি ১৯, ২০১৯

কিডনির সমস্যা যে শুধু বড়দের ক্ষেত্রেই হতে পারে, এ ধারণা একেবারে ঠিক নয়। মাতৃগর্ভ থেকেই নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে কিডনির সমস্যায়। আর তিন-চার বছরের শিশুও কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দুই থেকে আট বছর বয়সী বাচ্চাদের মূলত দুই ধরনের কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটি নেফ্রোটিক সিনড্রোম, অপরটি হলো অ্যাকিউট গ্লোমেরিউলো নেফ্রাইটিস বা এজিএন। নেফ্রোটিক সিনড্রোম হলে বাচ্চাদের প্রথমে চোখ ফোলাভাব দেখা যায়। এরপর পা এবং পুরো শরীরই ফুলে ওঠে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে আসে। এ রোগটি বারবার দেখা দিতে পারে। এজন্য রোগটি নিয়ে অভিভাবকরা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। আর নেফ্রাইটিস স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা দিয়ে থাকে।

শিশুর শরীরে খোশ-পাঁচড়া বা গলা ব্যথা অসুখের ১০ থেকে ২১ দিন পরে সাধারণভাবে এ রোগ প্রকাশ পায়। স্টেপটোকক্কাই নামে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এজন্য দায়ী। এ ছাড়া কিডনির আরও কিছু সমস্যা দেখা যায়। তবে দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই বেশি কিডনি বা মূত্রতন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। এমনই কিছু রোগের নাম উল্লেখ করা হলো।

পোস্টিরিওর ইউরেথ্রাল ভালব বা পিইউভি: এ সমস্যায় শুধু ছেলেশিশু আক্রান্ত হয়। এতে আক্রান্ত শিশু প্রস্রাব করার সময় কষ্ট অনুভব করে, প্রস্রাবের ধারা দুর্বল ও থেমে থেমে হয়, মাঝে মাঝে জ্বর হতে পারে, কারও কারও তলপেটে নাভির কাছটা ফুলেও যায়, শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে কিডনির বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

ইউটেরোসিলি: এ রোগে ছেলেশিশুর তুলনায় মেয়েশিশু বেশি আক্রান্ত হয়। কিডনির সঙ্গে মূত্রথলি ইউরেটর দিয়ে যুক্ত। ইউরেটর বেলুনের মতো ফুলে যায় ফলে প্রস্রাব আটকে যায়। এ অসুখে এন্ডোস্কোপিক সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। হাইপোস্পেডিয়াসিস, মিয়েটাল স্টেনসিস, ফাইমোসিস, হাইড্রোসিলি, আনডিসেন্ডেড টেস্টিস- অসুখগুলোতে ছেলেশিশু আক্রান্ত হয়। আনডিসেন্ডেড টেস্টিসে যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হলে সন্তান জন্মদান ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পেলভি-ইউরেটেরিক জাংশন অবস্ট্রাকশন: এতে ছেলেমেয়ে উভয় শিশুই আক্রান্ত হয়। রোগটি জন্মগত হলেও প্রকাশ পেতে সময় লাগে। তাই যথাসময়ে রোগ নির্ণয় খুব জরুরি।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়: পানি এবং পানিজাতীয় খাবার কম খাওয়ার কারণেই কিডনির সমস্যা বেশি হয়। আবার দীর্ঘদিন কোমল পানীয় বা বেভারিজ পানে প্রস্রাবের অম্লত্ব কমে আসে। ফলে ইউরিন ইনফেকশনের প্রবণতা বেড়ে যায়। সুতরাং এক্ষেত্রেও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের দেশে এখনও কবিরাজি চিকিৎসা আর ওষুধের ওপর অনেকেই নির্ভর করে থাকেন। আর এ ধরনের ওষুধে মার্কারির পরিমাণ থাকে বেশি। মার্কারি কিডনিকে ক্ষতি করে। আবার শিশুরা বাগানে বা মাঠে খেলতে গেলে অনেক সময় বোলতা বা মৌমাছি হুল ফুটিয়ে থাকে। পোকা-মাকড়ের হুলে এক ধরনের টক্সিন বা বিষ থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। শিশুদের কিডনি বা মূত্রতন্ত্রের সমস্যা প্রথম পর্যায়েই শনাক্ত করা গেলে সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমেই নিরাময় সম্ভব।

টি/আ

Leave a Comment