শীতে ঘাড় ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • জানুয়ারি ১৯, ২০১৯

শীতে সর্দি, জ্বর একটি সাধারণ সমস্যা। এই সর্দি এবং ফ্লু ভাইরাস ঘাড়ের মাংসপেশিকে টাইট এবং স্পাজম করে দেয়। ফলে  ঘাড় ব্যথা হয়। এছাড়া ঘাড়ে অনেক লিম্ফ নোড বা গ্ল্যান্ড আছে যা শীতে ফুলে যায়। এই ফুলে যাওয়া লিম্ফনোডগুলো ঘাড়কে স্টিফ করে ফেলে এবং ব্যথা সৃষ্টি করে।

শীতকালে বায়োমেট্রিক প্রেসার অর্থাৎ বাতাসের চাপ কমে যায়। এতে আামাদের শরীরের টিস্যুগুলো ফুলতে থাকে এবং এই ফুলা নিজের জায়গা থেকে অল্প অল্প ছড়াতে থাকে এবং নার্ভে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করে। কারণ, এসময় এদের সারফেস এরিয়া বেড়ে যায়। নার্ভে  চাপ পড়ার ফলে আমাদের ব্যথা হয়।

এছাড়াও শীতে আমরা এক কাতে শুয়ে থাকি ফলে ঘাড়ের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হয়। শীতে হতাশা এবং ডিপ্রেশনের মাত্রা বেড়ে যায়, মাসেল টাইট হয় ফলে সার্ভিকোজেনিক হেডেকের মাত্রাও বেড়ে যায়। আসুন জেনে নেই শীতে ঘাড় ব্যথা থেকে পরিত্রাণের উপায়-

১. একই ভঙ্গিতে বেশী সময় কাজ করা যাবে না। কিছুক্ষণ পর পর ভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে । আমরা প্রতিদিন ৫ ঘণ্টারও বেশী সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি। তখন আমাদের ঘাড়ের ভঙ্গি ঠিক থাকে না। এ ধরণের ভঙ্গি আমাদের ঘাড়ের ওপর অনেক প্রেসার তৈরি করে। কেননা, তখন আমাদের ঘাড় বাড়তি ওজন বহন করে।

২. স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের ঘাড় ১০-১২ পাউন্ড ওজন বহন করে। কিন্তু যখনই আমাদের মাথা সামনের দিকে ১৫ ডিগ্রি চলে আসে তখন ২৭ পাউন্ড ওজন বহন করে। অর্থাৎ আমাদের মাথা সামনের দিকে যত আসবে আমাদের ঘাড়ের ওপর তত অতিরিক্ত ওজন পড়বে এবং ডিক্স হারনিয়েটেড হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে এবং মাংস অসুস্থ হবে।

৩. এজন্য অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন বেশী সময় ধরে ঘাড় সামনের দিকে বাঁকা করে ফোন ব্যবহার না করি। আমাদের সঠিক নিয়মে ঘুমাতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা ঘাড়ের ব্যথা সৃষ্টি করে। ঘাড় এক পাশে ঘুরিয়ে পেটের উপর ভর করে বা উপুড় হয়ে ঘুমানো যাবে না। কোমরের উপর ভর দিয়ে বা চিত এবং কাত হয়ে সঠিক ভঙ্গিতে ঘুমাতে হবে।

৪. বছরের প্রত্যেক ঋতুতেই ড্রিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমনকি শীতেও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। সুতরাং শীতকালেও প্রচুর পানি পান করতে হবে। কেননা আমাদের ডিক্স অধিকাংশই পানি দিয়ে তৈরি। এজন্য মেরুদণ্ড সুস্থ রাখতে হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত জরুরী। প্রচুর পানি পান করার সঙ্গে আমাদের মেরুদণ্ড যেমন সুস্থ থাকে তেমনি আামাদের ঘাড়ের ইনজুরি প্রতিরোধ করে।

৫. শীতকালে খুব সহজে ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্ত থাকার প্রধান উপায় হল প্রতিদিন এক্সারসাইজ করা। রেগুলার এক্সারসাইজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘাড় ব্যথার জন্য বিভিন্ন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করতে হবে।

৬. ফিজিওথেরাপি ইজ মেডিসিন ফর টুডে এন্ড টুমরো। ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন যুগান্তকারী আধুনিক চিকিৎসা। ঘাড় ব্যথা বেশী হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ মাস্কুলোস্কেলিটাল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে, যিনি ঘাড় ব্যথা চিকিৎসায় পারদর্শী।

৭. নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন (প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট)। এক্সারসাইজ আপনার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যা ঘাড় ব্যথা কমায়। নিয়মিত এক্সারসাইজ হাড়ের ডেনসিটি বাড়িয়ে জয়েন্ট রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও ডিপ্রেশন কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। সুতরাং নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন, সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন এবং এই শীতে ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্ত থাকুন।

টি/আ

Leave a Comment