যেভাবে মাছ খেলে হবে ক্ষতি

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

বাঙালি মানেই মাছ-ভাত। নানা রকমের মাছ ও মাছের নানা রান্না বাঙালিকে ভোজনপ্রিয় করে তোলে। কিন্তু প্রতিদিন যে মাছ আমরা খাই তাতে কতখানি নিয়ম মানছি। কী মাছ কতটা খাবেন, আর কী ভাবে খাবেন তার উপরই নির্ভর করবে শরীরের উপকার বা ক্ষতি।

বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, সপ্তাহে একাধিক বার ফিশফ্রাই খেলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৪৫–৪৮ শতাংশ বাড়ে। মাঝে মধ্যে খেলে স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে প্রায় ৪৪ শতাংশ। এছাড়া ফিশ ফ্রাই করলে তাতে হার্টের জন্য উপকারি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কমে যায়। আর খুব তেল মসলা দিয়ে রান্না করলে ওমেগা থ্রি কমার পাশাপাশি আরো কিছু ক্যালোরিও বাড়ে।

তার সাথে উচ্চ তাপে তেল ভেঙে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয়। আর ব্যবহার করা তেল দিয়ে ভাজলে শরীরে প্রচুর কোলেস্টেরল বাড়ে। তাই প্রথমেই মাছ ভাজা বন্ধ করতে হবে এবং মাছ বেক, গ্রিল বা ব্রয়েল (আগুনে ঝলসে) খেতে পারেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন সপ্তাহে পাঁচ বার এভাবে খেলে বিপদের আশঙ্কা ৩০ শতাংশ কমে। আর যদি ভাজে খেতেই হয় তবে বাড়িতে অল্প তেলে সতে করে খান।

মাসের মধ্যে দুই-এক বার ডুবো তেলে মাছ ভাজলে তাকে জড়িয়ে রাখুন ব্লটিং পেপারে। এতে বাড়তি তেল শুষে যাবে। পাতুরি বা ভাপা মাছ খেতে পারবেন যেকোনো সময়ে তাতে মাছের উপকার অটুট থাকে। কিন্তু সব মাছ আবার এভাবে খাওয়া যায় না।

তৈলাক্ত মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ সঠিক ভাবে রান্না করে খেলে ওজন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, সুগার, সব কিছুই ভাল থাকে। এছাড়া হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কাও অনেক কমে যায়।

একটি গবেষণার পর আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, যে নারীরা সপ্তাহে অন্তত একবার মাছ খান, তাদের তুলনায়, যারা ছয় মাসে খান তাদের হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়।

উপকার: সামুদ্রিক, পুকুর ও নদীর কিছু তৈলাক্ত মাছে ডিএইচএ এবং ইপিএ পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে। ফলে নিয়মিত খেলে হার্টও ভাল থাকে।

মাছে ভাল জাতের প্রোটিন প্রচুর থাকে বলে পেট অনেক সময়ে ভরা থাকে। রক্তে চর্বির মাত্রা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক কমাতেও ভাল এটি।

ওমেগা থ্রি মানসিক চাপ–উদ্বেগ কমায় এমনকি ডিপ্রেশনের রোগীদের মাছ খাওয়া উচিত।

তৈলাক্ত মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছকে বলে ব্রেন ফুড। সপ্তাহে মাত্র একদিন খেলেই স্মৃতিশক্তি, নতুন কিছু শেখা ও চিন্তা–ভাবনার দক্ষতা বাড়ে।

যারা নিয়মিত বেকড বা ব্রয়েল্ড মাছ খান, তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। ফলে বয়সের সঙ্গে অ্যালঝাইমা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

বাচ্চাদের সামুদ্রিক মাছ খাওয়ানোর আগে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিয়মিত পুকুর বা নদীর মাছ খাওয়ানোর পাশাপাশি সপ্তাহে এক–দুই দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়াতে পারেন।

ত্বক–চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ওমেগা থ্রি ভাল। তাই ত্বকের অসুখ কমাতে ওষুধের সাথে তৈলাক্ত মাছ খেতে বলা হয়৷

৩ আউন্সের এক পিস স্যামন খেলেই ভিটামিন ডি–এর যা চাহিদার ৭৫ শতাংশ পূরণ হয় ও হাড় সুস্থ থাকে।

সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দুইবার তৈলাক্ত মাছ খেলে শুক্রাণুর মান ভাল হয়।

কোন মাছ কতখানি খাবেন: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ-এর বিজ্ঞানীদের মতে, দিনে ৪ গ্রামের মতো ওমেগা থ্রি খেতে হবে। হার্ট রক্ষায় সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন বার ৩.৫ আউন্সের মতো তৈলাক্ত মাছ খান। ব্যায়াম করলে ক্যালোরির কোনো সমস্যা হয় না। হৃদরোগ কমাতে কালচে রঙের মাছ খান যেমন, স্যামন, ম্যাকারেল, ব্লু ফিশ, রুই-কাতলা, মৃগেলও উপকারি।

মাছ ভাজার নিয়ম: ফ্রাইপ্যানে ভাজুন মাছ। অল্প তেল দিয়ে ম্যারিনেট করা মাছ দিন। কম আঁচে আস্তে আস্তে এ–পিঠ ও–পিঠ করে ভাজুন।

ইলেকট্রনিক চুলায় সতে করে রান্না করলে সবচেয়ে ভাল। কারণ, তাতে তাপমাত্রা নির্দিষ্ট থাকে। তেল গরম হয়ে ধোঁয়া বের হলে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমান বেড়ে গিয়ে বাড়ে ক্ষতির পরিমান।

অলিভ অয়েল দিয়ে ফ্রাইপ্যান বা সতে করতে পারেন। ভাজার পর সেই তেল দিয়ে অন্য রান্না না করে ফেলে দিন। এতে হাই কোলেস্টেরল ও ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়বে।

টি/আ

Leave a Comment