যে ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে নিরাপদ গর্ভধারণ
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
- এপ্রিল ১৮, ২০১৯
সুস্থ-সবল শিশুর জন্ম নিশ্চিত করতে হলে গর্ভধারিণীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা জরুরি। গর্ভধারণের পূর্বপ্রস্তুতি থাকলেই কেবল এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা সম্ভব। গর্ভধারণ-পূর্ব পরামর্শ তাই অনেক বেশি প্রয়োজন। অধিকাংশ দম্পতি জানেন না যে, শুধু গর্ভধারণের পরই নয়, এমন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে যেগুলো গর্ভধারণের পূর্বেই করা প্রয়োজন। এসব প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা হবু মায়ের জন্য গর্ভাবস্থাকে সহজ ও নিরাপদ করতে পারে।
কোনো ধরনের নেশা থাকলে পরিহার করুন: যদি সিগারেট বা কোনো মাদকে আসক্ত থাকেন, তবে তা বন্ধ করার এখনই সময়। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে, এসব অভ্যাসের ফলে গর্ভপাত, সময়ের আগে প্রসব, বাচ্চার ওজন কম থাকা ইত্যাদির সম্ভাবনা থাকে। এমনকি পরোক্ষ ধূমপানের ফলেও গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ক্যাফেইন গ্রহণে সতর্ক হোন: বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যেসব মহিলা কনসিভ করার চিন্তা করছেন তাদের বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ বেশকিছু গবেষণায় অতিরিক্ত ক্যাফেইনের সঙ্গে গর্ভপাতের সম্পর্ক দেখা গেছে। ক্যাফেইন মানেই শুধু চা, কফি নয়। সোডা, ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি এবং বিভিন্ন ব্যথার ওষুধেও ক্যাফেইন থাকে। তাই কিছু খাওয়ার আগে লেবেল চেক করুন।
দরকার বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম: অতিরিক্ত স্ট্রেস এবং ঘুমের অভাব দুটোই ইনফার্টিলিটির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং চাপমুক্ত থাকুন। যদিও স্ট্রেস সরাসরি ইনফার্টিলিটির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তবু এর ফলে এমন কিছু হয় যা কনসিভ করতে বাধার সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা: গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার সঙ্গে সঙ্গেই একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সে ব্যাপারে আলোচনা করে নিন এবং প্রি-কনসেপশন চেকআপ করিয়ে নিন। এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার নিজের এবং পরিবারের মেডিকেল হিস্ট্রি, বর্তমান স্বাস্থ্য চেক করবেন। এ সময় ডাক্তারের দেওয়া ডায়েট ও ব্যায়াম নিয়মিত ফলো করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কিছু টেস্ট করিয়ে নিতে হবে এ সময়েই। এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যাবে জরায়ু এবং গর্ভাশয় সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুত কি না। কেননা একটি সার্থক প্রসব সুস্থ জরায়ু ও গর্ভাশয়ের ওপর নির্ভর করে।
জেনেটিক টেস্ট করিয়ে নিন: স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই জেনেটিক টেস্ট আগেই করিয়ে নেওয়া ভালো। এতে করে দুজনের মধ্যে কেউ কোনো জটিল বংশগত রোগের বাহক কি না তা নির্ণয় করা সম্ভব। যদি দুজনই এসব কোনো না কোনো রোগের বাহক হয়ে থাকেন তবে শিশুর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। এসব বংশগত রোগে শিশুরা তখনই আক্রান্ত হয়, যখন সে বাবা-মা দুজনের কাছ থেকেই একটি করে ত্রুটিপূর্ণ জিন পায়।
ফলিক অ্যাসিড নেওয়া শুরু করুন: গর্ভধারণের আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণের অন্তত এক মাস আগে থেকে শুরু করে প্রথম ট্রাইমেস্টারে যদি প্রতিদিন নিয়মিত ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা হয়, তবে গর্ভের শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্ট যেমন- স্পাইনা বিফিডা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৭০ ভাগ কমে যায়। ফলিক অ্যাসিড আরো অনেক জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সুষম খাবারের অভ্যাস: শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন, যাতে সুস্থ গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি আপনার শরীরে সঞ্চিত হতে থাকে। প্রচুর শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করুন। জাঙ্ক ফুড বাদ দিন। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন- দুধ, দই, বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন- শিম, মটরশুঁটি, বাদাম, মাংস ইত্যাদি খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। গর্ভধারণের আগে থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: সঠিক ওজন কনসিভ করার জন্য সহায়ক। কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে ওজন কম বা বেশি হলে গর্ভধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ওজন ঠিক থাকা গর্ভকালীন সময়েও অনেক দরকার। ওজন বেশি হলে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় অনেক জটিলতা দেখা দেয়। এ ছাড়াও যাদের ওজন কম থাকে এবং গর্ভাবস্থায়ও ওজন ঠিক মতো বাড়ে না তাদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় কম ওজনের বাচ্চা প্রসব করতে দেখা গেছে। ওজন যতই হোক দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস করে তুলুন। এই অভ্যাস আপনার শরীরকে ঝরঝরে ও সুস্থ সবল রাখবে, আপনি থাকবেন নীরোগ।
সজাগ হোন মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও: গর্ভধারণের জন্য প্রফুল্ল মানসিক অবস্থা খুবই জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা বিষণ্নতায় ভোগেন গর্ভধারণে বেশি সমস্যা তাদের। যদি বিষণ্নতার কোনো লক্ষণ থাকে, যেমন- কোনো কিছুতে উৎসাহ বোধ না করা বা আনন্দ না পাওয়া, খাবারে অরুচি, ঘুমের সমস্যা, সারাক্ষণ নিরাশ থাকা। তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে আগেই। কেননা গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা শিশুর বিকাশে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
টি/আ