হিস্টিরিয়া শারিরীক নয়, মানসিক রোগ!

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • জুন ১৭, ২০১৯

হিস্টিরিয়া মানসিক রোগ এটা গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ জানেই না। মানুষের মধ্যে কুসংস্কার, অতীতের ভাবনায় বিশ্বাস, অপবিশ্বাস আর অতীতের অপরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারনে গ্রামে বা শহরে অহরহ হিস্টিরিয়া রোগের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর অস্বাভাবিক আচরণ তাদের কাছে জীন, ভূত, প্রেতের আছর! তাই তারা নিজেদের বিশ্বাসমত জীন, ভূত, প্রেতের আছর থেকে বাঁচানোর জন্য নানা রকম অপচিকিৎসা করে থাকে, যার ফলে হিতে বিপরীতই হয়। তারা ওঝা এনে ঝাড়ফুঁক করায়। কুসংস্কারাচ্ছন্ন এমন অপচিকিৎসায় রোগীর আরো বেশি ক্ষতি হয় এবং সঠিক চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। অথচ মানসিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সুচিকিৎসা করানো হলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি আবার আগের সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

মানসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, হিস্টিরিয়া বা মুর্ছা রোগের জন্য আধুনিক মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি বেশকিছু পদ্ধতি ব্যবহার করেন চিকিৎসকরা। হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে হিস্টিরিক্যাল উপসর্গের বিষয়ে সাহস জোগানো, ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এনে এবং বিভিন্ন পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেন চিকিৎসকরা। রোগীর সাথে সবসময় স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে এবং রোগীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় আশ্বস্ত করতে হবে যে, এটা কোন শারীরিক রোগ নয় বরং মানসিক রোগ। ঠিকঠাক চেষ্টা করলে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব এবং স্বাভাবিক জীবন লাভ করা যাবে। মানসিক বিশেষজ্ঞরা রোগীর সাথে কথা বলে মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ভয় জানার চেষ্টা করেন এবং মনের ভেতরে লুকানো ভয় দূর করানোর চেষ্টা করেন। চিকিৎসকরা রোগীকে এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন।

মেডিকেল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ভয়, দ্বন্দ্ব, মানসিক সংঘাত রয়েছে তা জানা যায়। এ চিকিৎসায় রোগী ঘুমের ঘোরে থাকে এবং অবচেতন মনের দ্বন্দ্বগুলো বেরিয়ে আসে। এমন অনেক বিষয় থাকে যা মানুষ চেতন মনে বলতে পারেনা কিন্তু অবচেতন মনে তা খুব সহজেই বলে দিতে পারে। মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা ভয়, কষ্ট, দ্বন্দ্ব বলে মনের ভার কমাতে পারে।

এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সাহস জোগাতে হবে। বিবাহিত মহিলার ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বামীকেও চিকিৎসা ব্যবস্থার আওয়াত আনতে হবে। প্রয়োজন হলে পরিবারেও কাউন্সিলিং করাতে হবে। হিস্টিরিয়া মানসিক রোগ, শারিরীক নয় এটা আগে জানা দরকার এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে খুব সহজেই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

কেএস/

Leave a Comment