গল্প : হরেক রকম বড়া ( শেষ পর্ব )

  • ফারজানা আক্তার 
  • ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০

গল্প : হরেক রকম বড়া ( শেষ পর্ব )


কবির হাসান ভেবেছিলো একমাত্র মেয়ে ভুল করেছে। বাবা মা আজ হোক কাল হোক মেয়েকে স্বামীসহ মেনে নিবেন। কিন্তু রাবেয়ার বাবা আকবর খান মেয়ের জন্য পুরো অন্ধ ছিলেন।

সেই মেয়ে যখন তার বাবা মাকে ভুলে দুইদিনের পরিচিত কোন যুবকের হাত ধরে ঘর ছাড়ে সেই অকৃতজ্ঞ মেয়েকে তিনি ঘরে তুলতে নারাজ।

রাবেয়ার মায়ের অনেক কান্নাকাটির পর আকবর খানের মন কিছুটা নরম হয়। তখন তিনি এক কঠিন শর্ত দেন। যদি কবির হাসানকে ছেড়ে রাবেয়া আসতে পারে তাহলে তিনি মেয়েকে ঘরে তুলবেন। কবির হাসান বোকা পাত্র না।

তিনি সম্পত্তির লোভে রাবেয়াকে বিয়ে করেছে। এই সম্পত্তি এতো সহজে হাত ছাড়া করা যাবে না। বিয়ের ১৫দিন পর থেকে শারীরিক মানসিক নানানভাবে রাবেয়াকে অত্যাচার করা শুরু করে কবির হাসান।

কবির হাসান ভাবে মেয়ের এতো অত্যাচার নিশ্চয় কোন মেয়ের বাবা মা মেনে নিবে না। তখন মেয়ের জামাইসহ মেয়েকে মেনে নিবে।

রাবেয়া নিজের অত্যাচারের কথা নিজের বাবা মাকে বলতেও পারছে না। সে মুখ তো সে রাখে নি। অন্যদিকে দিন দিনকে কবিরের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিলো।

আকবর খান বুঝতে পেরেছিলেন কবির সম্পত্তির লোভে তাকে মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু তার বোকা মেয়েটা সত্যি সত্যি লোভী কবিরকে ভালোবেসেছে।

লোভী আকবরকে তিনি তার সম্পত্তি ভোগ করতে দিতে আগ্রহী না তাই তিনি রাবেয়াকে কোনভাবেই মেনে নিচ্ছেন না।

কবির অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলো সে বাচ্চা নিবে। বাচ্চার মুখ দেখে তার নানা নানী ঠিক মেনে নিবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। রাবেয়া বাচ্চা নিতে রাজি হচ্ছিলো না।

কিন্তু কবিরের অত্যাচারের কাছে পরে হার মেনে রাবেয়া কনসিভ করলো। রাবেয়ার তখন তিনমাস চলছে। একদিন রাবেয়ার মা লুকিয়ে রাবেয়ার সাথে দেখা করতে আসে।

সেদিন সকাল থেকে আকাশের অবস্থা খুব খারাপ। এইদিকে কবির রাবেয়াকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে রাবেয়া যেন তার বাবাকে ফোন করে টাকার কথা বলে। রাবেয়াকে টাকা ততদিনে শেষ হয়ে এসেছে।

কবির কোন কাজে জয়েন করে নি ততদিন পর্যন্ত। রাবেয়া তার বাবাকে ফোন করে টাকা চাইতে রাজি হচ্ছিলো না। কবির রাবেয়াকে মারতে মারতে বের করে দেওয়ার জন্য দরজার কাছে নিয়ে গেলো। রাবেয়া কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলছিলো এই বৃষ্টির মধ্যে তাকে বের করে না দিতে , তাকে আর না মারতে। কে শুনে কার কথা!

রাবেয়া ঘর থেকে বাহির হতে না চাইলে কবির তার পেটে একটা লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়। দরজার বাহিরে পড়ে রাবেয়া অজ্ঞান হয়ে যায়। সাথে সাথে ব্লিডিংও শুরু হয়।

বৃষ্টির পানি আর রাবেয়ার রক্ত সেদিন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কবির রাবেয়ার এই অবস্থা থেকে সেদিন পালিয়ে যায়। কবির ভেবেছিলো রাবেয়া হয়তো মারা গেছে বা যাবে।

রাবেয়ার মা সেদিন লুকিয়ে মেয়েকে দেখতে গিয়ে দেখে মেয়ে তার ঘরের সামনে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তিনি পাগলের মতো তখন চিৎকার করতে থাকেন।

ড্রাইভারের সহায়তায় মেয়েকে তাড়াতাড়ি তিনি হাসপাতালে নিয়ে যান। ভাগ্যক্রমে সেদিন রাবেয়া বেঁচে গিয়েছিলো কিন্তু মা হওয়ার ক্ষমতা চিরদিনের জন্য হারিয়েছিলো।

'একি! তুমি আমার চিংড়ির বড়ার একই হাল করেছো, রাবু? মনটা আজকে কোথায় তোমার, হ্যাঁ ? পুড়ে গেলো তো সব' রফিক সাহেব রান্নাঘরে এসে তাড়া দিলো রাবেয়াকে।

'ওহ! সরি সরি! এখনই তুলে দিচ্ছি। পরেরবার আর এমন হবে না। তুমি ফ্রেস হয়ে বসো। আমি নিয়ে আসছি। ' রাবেয়া বললো

'তাড়াতাড়ি আসো। ছোটবেলায় একবার পালং শাকের বড়া নিয়ে বড় ভাইয়ার সাথে কি যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছিলাম। সেই গল্প শুনাবো আজকে তোমায়। ' রফিক সাহেব হাসি হাসি মুখে বললেন।

'এই বড়া ছাড়া তোমার জীবনে আর কোন গল্প নেই গো?'

'বড়া'ই জীবন আর জীবনই বড়া। সবার জীবন নানান রঙে সাজানো আর আমার জীবন হরেক রকম বড়া'র গল্পে ভরপুর '

রফিক সাহেব আর রাবেয়া দম্পতির প্রতিটি দিন এভাবে হরেক রকম বড়া বানাতে আর গল্প গল্প করতে করতে কেটে যাচ্ছে। সুখেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।

চলবে...

গল্প : হরেক_রকম_বড়া

Leave a Comment