আপনি জানেন তামার পাত্র ব্যবহারের কত উপকারিতা!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১১, ২০১৮

ভারতবর্ষ তথা এশিয়া উপমহাদেশের বহু দেশেই তামার পাত্রের প্রচলন বহু যুগ ধরেই হয়ে আসছে। এর কারণ তামার গুণাগুণ। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও তামার পাত্রে রান্না বা তামার পাত্রে রাখা জল পান করার কথা বলা হয়েছে। এখনকার বিজ্ঞানও ঠিক সেটাই বলে।আজকাল নানা ধরনের কাঁচের এবং মেটালের বাসন পত্র,ফ্লাস্ক ইত্যাদির প্রচলনের জন্য তামার ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে অনেকটাই কম। তার কারণ কাঁচ বা স্টীল বা পোর্সেলিন ব্যবহার এবং পরিষ্কার রাখা সহজ,এবং নানা ধরনের ডিজাইনে এবং আকৃতিতে পাওয়া যায়। কিন্তু তামার পাত্রের গুণাগুণ তাতে নেই। কী হয় তামার পাত্র থেকে জল পান করলে? তামার পাত্রে সারারাত বা ৮ ঘন্টা জল ঢেলে রাখলে জলে খুব অল্প পরিমাণ তামার আয়ন জলে গিয়ে মেশে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় অলিগোডাইন্যামিক এফেক্ট যার নানা ধরনের মাইক্রোবস,মোল্ড বা ফাঙ্গি কে নষ্ট করে দেয় এবং শরীর ঠিক রাখে। তামা,একটি ট্রেস মিনারেল যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখতে সাহায্য করে জিঙ্ক,পোটাশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের মতন অন্যান্য ট্রেস মিনেরালের সাথে। তামা শরীরের ভিটামিন এবং আমাইনো অ্যাসিডগুলিকে কার্যকর করতে সাহায্য করে এবং শরীর এর বাকি সব কাজকর্ম ঠিক রাখে।শরীরে তামার অভাব থেকে নানা ধরনের রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলে, তাম্র জল, বা তামার পাত্রে রাখা জল সেবন করলে শরীরের তিনটি দোষ,যথা বাত,পিত্ত ও কফ এই তিনটিকে ব্যালেন্স করা যায়।এছাড়াও :

১) তামার পাত্রে রাখা জল পান করলে নানা ধরনের জলবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

২) তামা থাইরয়েড-এর জন্য খুব উপকারী।তামা থাইরয়েড ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং হাইপো বা হাইপার থাইরয়েডিসম-এর জন্য খুব কার্যকর।  

৩) শরীরের তামার পরিমাণ কম হলে কিছু এনজাইম যা তামার ওপর নির্ভর এবং শরীরের আয়রনগুলিকে রক্তকণিকায় পৌঁছে দেয় তাতে ঘাটতি হয়। ফলে শরীরের অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ তামা তাই অ্যানিমিয়ার হাত থেকে বাঁচায়।

৪) তামা হার্ট এর পক্ষে উপকারী এবং ব্রেনের স্টিমুলেশন এর জন্য ও খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।

৫) তামা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আমাদের শরীরের ফ্রী র‍্যাডিকলগুলির বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে যার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ অনেক দেরীতে পড়ে।এছাড়াও তামা প্রোটিন ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে, যেটি ত্বক চুল এবং মাসলের ক্ষতিপূরণে খুব কার্যকর। তামা কপার পেপ্টাইড নামক এক যৌগ তৈরি করে যা এই প্রোটিনগুলি কে পৌঁছে দেয় জায়গা মতন। তামা কোলাজেন তৈরিতেও সাহায্য করে যা ত্বকের যৌবন ধরে রাখে এবং বলিরেখা দূর করে।   

৬) তামা আমাদের ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

৭) পর্যাপ্ত পরিমাণ তামা আমাদের চুল,ত্বকের স্বাভাবিক রঙ এবং টেক্সচার ধরে রাখতে সাহায্য করে। তামা মেলানিন নামক পিগমেন্ট তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের স্বাভাবিক খয়েরী রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। মেলানিন আমাদের নানা ধরনের চর্ম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

কিন্তু তামার পাত্রে জল পান করা যেমন একদিক থেকে ভাল,তেমনি সারাদিন তামার পাত্র থেকে জলপান করা কখনই উচিত নয়। শরীরে তামার আধিক্য হলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাহলে কীভাবে তামার পাত্রে জল সেবন করা উচিত?আয়ুর্বেদ অনুসারে,তামার পাত্রে রাখা জল দিনে দু’বারের বেশি সেবন করা উচিত নয়। একদম সকালে ঘুম থেকে উঠেই একবার এবং সন্ধেবেলায় একবার,এই হওয়া উচিত পরিমাণ। এই ভাবে টানা তিন মাস পান করার পরে এক মাস বিরতি দেওয়া উচিত। আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় যদি শরীরের তামার আধিক্য হয়ে থাকে তবে তা বের করে ফেলতে সক্ষম হয়। অতএব, ওই এক মাসের বিরতি দেওয়াটা প্রয়োজনীয়

তথ্য এবং ছবিঃ গুগল 

Leave a Comment