অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে ও পরে করণীয় (প্রতিরোধ ও প্রতিকার)

  • সাজু 
  • এপ্রিল ১, ২০১৯

আগুনের অপর নাম সর্বভুক। অর্থাৎ যে সবকিছু খায়।তার মানে আগুন তার সামনে যা কিছু পায় তার সবই পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ঢাকা শহরে সম্প্রতি  বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন।আর যেন কোনো  প্রাণ এভাবে ঝড়ে না যায় তাই আমরা আজ এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার যেনে নিবো।

প্রতিরোধঃ 

১) নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকার কর্তৃক যে বিল্ডিং কোড দেয়া হয় তা মেনে চলতে হবে

২) ভবনে যাওয়ার প্রধান রাস্তাটি কমপক্ষে ১৫ মিটার প্রশস্ত হতে হবে

৩) ওয়্যারিং এর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ইলেক্ট্রিশিয়ান ও উন্নতমানের ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে যেন শর্ট সার্কিট হবার সম্ভাবনা না থাকে

৪) ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফায়ার  এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে এবং তার ব্যবহার জানতে হবে

৫) প্রধান এক্সিটের পাশাপাশি প্রশস্ত ইমারজেন্সী এক্সিট থাকতে হবে এবং তার অবস্থান সবার জানা থাকতে হবে

৬) অটো ফায়ার এলার্মিং এর ব্যবস্থা থাকতে হবে যেনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা  ঘটলে সাথে সাথেই সবাই সতর্ক হতে পারে

৭) ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে নির্গমন পথ প্রদর্শক চিহ্ন থাকতে হবে যেন তা অন্ধকারেও দেখা যায়

৮) বাসার গ্যাসের চুলা প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ রাখুন।সতর্কতার জন্য চুলা জ্বালানোর কিছুক্ষণ আগে ঘরের দরজা জানালা খুলে ভিতরের গ্যাস বের করে দিন

৯) জ্বলন্ত ম্যাচ কাঠি, সিগারেট যেখানে সেখানে ফেলা হতে বিরত থাকুন এবং সম্পূর্ণ নিভে যাওয়া নিশ্চিত করুন।কয়েল ও মোমবাতি জ্বালানোর জন্য নিরাপদ জায়গা নির্বাচন করুন।

প্রতিকারঃ  এতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়ার পরেও যদি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেই যায় তাহলে আগুনের সাথে নিজেও গরম না হয়ে  যথাসম্ভব ঠান্ডা মাথায় মোকাবেলা করতে হবে।এসময় আমরা স্বাভাবিক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলি বলে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই বিঘ্নিত করে ফেলি।তাড়াহুড়া করে ভবন ত্যাগ করতে অনেকে আগুন লাগার আগেই পদদলিত হয়ে মারা যায়। আমাদের বুঝতে হবে যে আগুন লাগার সাথে সাথেই তা সবজায়গাতে ছড়িয়ে পড়েনা,মোটামুটি সময় লাগে।সে সময়ে ভাগ্য ভাল হলে সেখান থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

আগুন লাগলে প্রথমেই বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলে তা ব্যবহার করে আগুনের উৎস বের করে প্রাথমিক পর্যায়েই আগুন নিভিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।ব্যর্থ হলে নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস অফিসকে অবহিত  করতে হবে।ভবন ত্যাগের ক্ষেত্রে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে,কোনভাবেই লিফট ব্যবহার করা যাবেনা।কেননা লিফট চলা বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে আটকে নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করতে হবে। কোন কক্ষ থেকে বের হওয়া সম্ভব না হলে তার দরজা বন্ধ করে নিচের ফাঁকা জায়গা ভেজা কাপড় বা কাঁথা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে যেন বাইরের ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস ভিতরে না আসে এবং জানালা খুলে বাইরে সাহায্য চাইতে হবে।

আগুনের ধর্ম উপরের দিকে উঠা।কোনো ভবনে আগুন লাগলে তা সাধারণত সিঁড়ির ফাঁকা জায়গা দিয়ে উপরে উঠে।তাই সিঁড়ি বেয়ে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ভবনের ছাদ নিরাপদ আশ্রয় হতে পারে।তবে সেক্ষেত্রে ছাদের দরজা তালাবন্ধ কিনা সে বিষয়ে আগে থেকেই অবগত থাকতে হবে।নয়তো আগের অবস্থানে ফিরে আসাও কঠিন হয়ে যাবে। গায়ে আগুন লাগলে দৌড়াদৌড়ি না করে মাটিতে গড়াগড়ি করতে হবে যাতে আগুন নিভে যায়।দৌড়ালে অক্সিজেন পেয়ে আগুনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া এড়াতে হামাগুড়ি দিয়ে সামনের দিকে আগাতে হবে।কারণ এসময় বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া উপরের দিকে এবং অক্সিজেন নিচের দিকে অবস্থান করে।

বলা হয়ে থাকে যে,আগুনের একটাই গুণ আর তা হল এটি সবকিছুই জ্বালিয়ে দিতে পারে।তাই কোথাও আগুন লাগলে মনোবল না হারিয়ে সাহস নিয়ে নেভানোর চেষ্টা করতে হবে। আগুন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।চাইলেও একে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়।কিন্তু আমরা একটু সতর্ক হলেই এর  থেকে সৃষ্ট বিপদ এড়াতে পারি।

Leave a Comment