ঘরের গাছের পরিচর্যা : ইন্ডোর প্লান্টের যত্নআত্তির আদ্যোপান্ত

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • এপ্রিল ২৪, ২০১৯

ঘরের গাছের পরিচর্যা করতে অনেকেই অনেক পদ্ধতির অনুসরণ করেন। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা পদ্ধতির অভাবে প্রায়ই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায় শখের ইন্ডোর প্লান্টের। মূলকথা হলো আবহাওয়া, গাছের প্রকৃতি ও প্রজাতির ভিন্নতার সাথে সাথে এর পরিচর্যার পদ্ধতিও ভিন্ন হয়। সঠিক ভাবে জেনে বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে ঘরের গাছের পরিচর্যা করতে আপনাকে খুব একটা বেগ পেতে হবেনা। এখানে ইন্ডোর প্লান্টের যত্নআত্তির আদ্যোপান্ত উপস্থাপন করা হলো যা আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দিবে সঠিক ভাবে এগুলোর যত্ন নিতে। এবং কিভাবে ঘরের গাছের পরিচর্যা করলে তা থেকে বেশি পরিমানে ফুল ও ফল পাওয়া যাবে সেই সাথে সৌন্দর্যেরও কোন ঘাটতি হবেনা।

গাছকে জানুন: আপনার ঘরের গাছ বা ইনডোর প্লান্ট এর সঠিক যত্ন নিতে হলে প্রথমে আপনাকে গাছের প্রকৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আসলে সব গাছেরই বাচার জন্য খাবার, পানি ও সূর্যের আলো প্রয়োজন তবে তা একেক গাছের ক্ষেত্রে একেক পরিমানের। আর তাই আগে ভালোভাবে জানতে হবে কোন গাছে জন্য কি উপাদান কি পরিমানে সর্বরাহ করতে হবে।

নতুন গাছ নিরীক্ষণ: যখনই কোন নতুন চারা বা গাছ আপনার শখের বাগানে যুক্ত করবেন তখন ভালোভাবে তার পাতা, কান্ড ও গোঁড়া পরিক্ষা করতে ভুলবেন না যেন। কারন নতুন গাছে পোকা বা ছত্রাকের সংক্রমণ থাকলে তা খুব দ্রুত অন্যসব গাছে ছড়িয়ে পরবে যা কোনভাবেই আপনার ইন্ডোর প্লান্টের জন্য সুখকর নয়।

সঠিক জায়গা নির্বাচন: সঠিক জায়গায় ইন্ডোর প্লান্ট স্থাপন খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত জায়গায় আপনার ঘরের গাছগুলো নিরাপদে বেড়ে উঠতে অনুকূল পরিবেশ পাবে। তাই খুব উত্তপ্ত বস্তুর নিকট, এয়ারকন্ডিশনের কাছাকাছি স্থান, টেলিভিশনের উপর বা পর্দার মাঝামাঝি জায়গা পরিহার করাই উত্তম।

সঠিক মাত্রার আলো: সূর্যের আলো সকল গাছের জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই যে গাছের জন্য বেশি আলো প্রয়োজন সেটিকে দক্ষিণ দিকের জানালার কাছে স্থাপন করুন কেননা ঘরে দক্ষিণ মুখী জানালতেই বেশি রোদ আসবে। আর পূর্ব ও পশ্চিম মুখী জানালায় মাঝারি এবং উত্তর দিকে অপেক্ষাকৃত কম আলো পরে। তাই গাছের আলোর প্রয়োজন অনুসারে জানালার কাছাকাছি স্থান নির্বাচনও জরুরী।

বিশুদ্ধ মাটি ব্যবহার: সবসময় ঘরের গাছের জন্য টবে মাটি ভর্তি করার পূর্বে টব ও মাটি বিশুদ্ধ করে নিবেন। পরিস্কার ও বিশুদ্ধ মাটি সুস্থ গাছের জন্য অপরিহার্য। এতে করে মাটির ফাংগাস ও অন্যান্য মাটি দ্ধারা ছড়ানো রোগসমূহ থেকে আপনার গাছ নিরাপদে থাকবে।

পোকা দমনে রাখা: ঘরের গাছকে পোকা আক্রমন করার আগেই নিতে হবে কিছু পদক্ষেপ। আর যেহেতু তা একেবারে আপনার ঘরের ভিতরে সেজন্য অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিই আপনার জন্য বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে আপনি নিমের তেল, এন্টি-ইন্সেক্টিসাইড সাবান, ফ্লাই লাইট, স্টিকি বোর্ড, সেক্স ফেরোমেন ট্র্যাপ ইত্যাদি যেকোন একটা পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।

পানির পরিমিত প্রয়োগ: আসলে সকল ইন্ডোর প্লান্টের সমান পানির প্রয়োজন হয়না। যেমন, ফুলের গাছ, মাটির ছোট পাত্রের গাছ, সরাসরি সূর্যের আলোতে স্থাপিত, বড় ও পাতলা পাতাযুক্ত এবং স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার গাছের জন্য বেশি পানি দরকার। অন্যদিকে সদ্য পাত্র পরিবর্তিত গাছ, অধিক আদ্রতায় বেড়ে উঠা গাছ, অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ঘরে রাখা, মোটা পাতাযুক্ত এবং বিশেষ করে কম ছিদ্রযুক্ত টবে রাখা গাছের পানির প্রয়োজনীয়তা অনেক কম।

পরিমিত সার প্রয়োগ: ইন্ডোর প্লান্টেরও বেড়ে উঠার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত সঠিক মাত্রায় সার। কোন গাছের কি সার কি পরিমান প্রয়োজন তা জেনে বুঝে নিয়মত প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। তবে সাধারণত প্রায় সকল ইন্ডোর প্লান্টের জন্যই জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সারের চাহিদা বেশি থাকে।

পাতা পরিস্কার করা: ঘরের গাছের পাতায় ধুলো বালি লেগে থাকা শুধু এর সৌন্দর্য নষ্ট করে তাই নয় বরং এই অবস্থা গাছের জন্যও ক্ষতির কারন। আর তাই বছরে কয়েকবার নরম কাপড় বা তুলো ভিজিয়ে গাছের পাতা পরিস্কার করে দিন। বেশি ভালো হয় যদি আপনি পাতা পরিস্কার করার সময় অল্প নিমের তেল বা এন্টি-ইন্সেক্টিসাইড সাবান ব্যবহার করেন।

পাত্র পরিবর্তন: যখন আপনার টবের গাছ বড় হয়ে যাবে বা শিকড় বৃদ্ধি পাবে তখন বুঝে শুনে পাত্র পরিবর্তন করাই উত্তম। পাত্র পরিবর্তনের সময় টবের নিচের দিকে এক টুকরো ফোম বা স্পঞ্জ দিয়ে দিলে তা অল্প পরিমানে পানি ধরে রাখবে যা টবের গাছেড় জন্য সুফল বয়ে আনবে।

মৃত ডাল কাটা: অনেক সময় ইন্ডোর প্লান্টের ডাল, ফুল ও শিকড় মরে যায়। সেগুলো গাছের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে যায়। সময় মত সেগুলো কেটে বাদ দিতে হবে। তাহলে টবের গাছ আরো বেশি ফুল ও ফল দিতে সক্ষম হবে।

টি/আ

Leave a Comment