ছোটখাট অপরাধকে অনেকেই অপরাধ মনে করে না, বাহাদূরী মনে করে : জিকো

  • ফারজানা আক্তার
  • ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮

রাসয়াত রহমান জিকো পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনান্স থেকে এমবিএ (ইভিনিং) করেছেন। পেশার পাশাপাশি নেশা হিসাবে লেখালেখি করেন। রাসয়াত রহমান জিকোকে একজন সমাজ সচেতন নাগরিকও বলা যায়। ফেইসবুকে তিনি সমাজের নানা অসংগতি তুলে আনেন। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বই তিনি লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - খলিল ও ভূত রাজকন্যা চম্পাবতী, যে প্রহরে নেই আমি, পিকু, কলম, বেকায়দা ইত্যাদি। কিংবদন্তী হুমায়ূন বইটি সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। এবারের বইমেলায়ও পাঠকদের জন্য রয়েছে তার পক্ষ থেকে চমক।  বিটিভিতে ধারাবাহিক নাটক ‘রাজুর সাগর দেখা’ ২ পর্ব প্রচারিত হয়েছে, নাটকটি মোট ১৬ পর্বের। এই নাটকটি তার লেখা। ওমেন্সকর্নারের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তার জীবনের নানা গল্প তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার। 

ওমেন্সকর্নার : প্রথমেই শুনবো আপনার সাহিত্য চর্চার শুরুটা কিভাবে ?

জিকো : শুরু তো পড়ার মাধ্যমে। একসময় প্রচুর বই পড়তাম। পড়তে পড়তেই একদিন লেখার ইচ্ছা জাগলো। কারণ মনে হল বলার অত অনেক গল্প তো আমারও আছে। তবে সাহিত্যের অবস্থান এইসব ভাবাভাবি থেকে অনেক উপরে। কিছু একটা লিখলাম আর সেটাকেই সাহিত্য বললাম তাতে সাহিত্যের কিছু যায় না। আসলেই নিজের মধ্যে হীনমন্যতাবোধ কাজ করে । 

ওমেন্সকর্নার : কারো অনুপ্রেরণায় কি  সাহিত্য চর্চাটা শুরু ?

জিকো : ঐযে বললাম, মনে হল আমার বলার মত গল্প আছে। আশেপাশে তাকিয়ে মানুষের জীবন দেখে মনে হল এই ঘটনাগুলো এভাবে না ঘটে অন্যভাবে ঘটলেই তো একটি চমৎকার গল্প হয়ে যায়। শুরু এখানেই।  
 
ওমেন্সকর্নার : ২০১৮ সালের বইমেলায় পাঠকরা আপনার কোন বইটি পাচ্ছে ?

জিকো : ২০১৮ সালের বইমেলায় আমার প্রকাশিত বই হচ্ছে ইমোশনাল সুপারহিরো। চৈতন্য প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে। বইমেলায় তাদের স্টল নং ৬০৪,৬০৫। 

ওমেন্সকর্নার : নতুন বইটি নিয়ে কিছু বলুন। 

জিকো : এই বইটি দুই জেনারেশনের দুটি মানুষের ডায়েরীতে তাদের জীবনের গল্পের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে। গল্পের মূল চরিত্র সিয়ামের সাথে একদিন ট্রেনে হাসান স্যারের দেখা হয়। হাসান স্যার ট্রেনে তাঁর ডায়েরী ফেলে যায়। ব্যস্ততম নগরীতে থাকা ব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত সিয়াম সেই ডায়েরী পরে একদিন মনে করে তার জীবনে কিছু ভুল আছে যেগুলার সমাধান হয়ত এই ডায়েরীতে আছে। কয়েক বছর পর আবার সেই হাসান স্যারের দেখা পায় সিয়াম। ইতিমধ্যে সে ডায়েরী পড়ে জেনে গেছে হাসান স্যারেরও কিছু নিজস্ব গল্প আছে যা সাধারণের কাছে পরিচিত না। 

ওমেন্সকর্নার : ভালো লেখকদের বই পাওয়ার জন্য পাঠকরা  সবসময় অপেক্ষা করে। কিন্তু লেখকরা বই মেলা ছাড়া, অন্য সময়গুলোকে বই প্রকাশ করতে চায় না। আপনিও ভালো লেখকের একজন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই প্রশ্নটা আপনাকেই করছি , মেলা ছাড়া অন্য সময় বই প্রকাশ করেন না কেন ?  

জিকো :  বই প্রকাশ ব্যাপারটা এখন বইমেলা কেন্দ্রিক হওয়ার দায় লেখক, প্রকাশক, পাঠক সকলের। স্মার্ট ফোনের আবির্ভাবে সারাবছর বই কেনার ট্রেন্ডে পরিবর্তন এসেছে। এর একটা সমাধান হতে পারে সারা বছর বইমেলার আয়োজন। ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকায় হওয়ার পর বাকী ১১ মাস বিভিন্ন জেলা শহরে আয়োজন করা যেতে পারে। সারাদেশের পাঠকদের কাছে বইটি সবসময় সহজযোগ্য করার কোন বিকল্প নাই।

ওমেন্সকর্নার : আপনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, বই লিখছেন, কবিতা লিখছেন,কলাম লিখছেন, নাটক লিখছেন এবং ফেইসবুকেও একটিভ। এতোসবের সাথে আর অন্য কিছু কি করছেন ? প্রাধান্য দিচ্ছেন কোনটাকে বেশি ?

জিকো : ব্যাংকের চাকরী করি জীবনের তাগিদে, অন্য সবকিছু মনের তাগিদে। আমার জীবনটা বাইসাইকেলের মত, একটা প্যাডেল হল জীবনের রাগিদ, আরেকটা প্যাডেল মনের তাগিদ, এখন দুই প্যাডেলে ব্যালেন্স না রাখলে তো জীবন চলবে না। সবকিছুকেই সময় অনুযায়ী প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করি। যখন যা ঠিক মনে হয়। তবে আমি কবিতা লিখি না। কবিতা লেখার ব্যাপারে আমার ধারণা বা দক্ষতা কম। 

ওমেন্সকর্নার : আপনার মতো যারা হতে চায় তাদের উদেশ্য কিছু বলুন। 

জিকো :  আমার মত ব্যাংকে চাকরী করতে চায় না লেখক হতে চায়? আমার মত আলাদা ভাবে হওয়ার কিছু নেই। যে যার জায়গা যার ইচ্ছানুযায়ী চললেই হবে। অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হওয়ার মত তেমন কিছু এখনও করা হয় নি। 

ওমেন্সকর্নার : আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আপনি কি ভীত, শংকিত কিংবা আনন্দিত ?

জিকো :  সময় সবসময় একরকম থাকে না। আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কোন ভর্তি পরীক্ষা দেননি, আমাকে দিতে হয়েছে। কিন্তু যার যার সময়ে যার যার সংগ্রাম ঠিকই করতে হয়েছে। তিনি স্কুলে যেতেন খালি পায়ে খাল বিল মাঠ ঘাট পেরিয়ে। আমি স্কুলে যেতাম তার সরকারী চাকুরীর সুবাদে পাওয়া সরকারী গাড়িতে। তবে আমার মনে হয় বর্তমানে আমাদের মধ্যে অস্থিরতা অনেক বেশি, সব কিছুতেই মূল্যবোধ কমে গিয়েছে, ছোট খাট অপরাধকে বা নিয়ম ভাঙ্গাকে এখন অনেকেই অপরাধ মনে করে না, বাহাদূরী মনে করে। 

ওমেন্সকর্নার : আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে তরুণদের কিছু বলতে চান ?

জিকো : তরুনদের থেকে সব থেকে বেশি দরকার সঠিক নেতৃত্ব। সেই নেতৃত্ব হতে হবে, সৎ, দূর দৃষ্টিসম্পন্ন। পরের জেনারেশনকে ঠিক ভাবে গড়ে তোলা খুব জরুরী।

ওমেন্সকর্নার : লেখালেখি নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা কি ?

জিকো : নিজের লেখায় অনেক উন্নতি ঘটাতে চাই। সে জন্য প্রচুর সময় প্রয়োজন। ইদানিং পড়ার তেমন সময় পাই না। অথচ পড়ার কোন বিকল্প নাই। গল্পের আইডিয়াই সবকিছু না, প্লট খুঁজে পেতে আমার সমস্যা হয় না, কিন্তু প্লট ডেভেলপ করার একটা ব্যাপার আছে, সে ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক রাত জাগা স্বপ্ন আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে বসে আছি একদিন হয়ত মনমত কোন লেখা বের হবে।  


পরিবারের সাথে জিকো  

ওমেন্সকর্নার : আজকালকার ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া, চাকরি -বাকরির থেকে ফেইসবুকে সেলেব্রেটি হওয়াটাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আপনি এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন ? তাদের উদেশ্য কিছু বলুন। 

জিকো : দেখুন যে কোন কিছু অর্জনের জন্য শক্ত ভীত দরকার আছে। ফেসবুক একটা মাধ্যম যেখানে পরিচিত পাওয়া হয়ত সহজ। আগে একটা লেখা লিখে পত্রিকায় ছাপানোর জন্য যে মহাসংগ্রাম সেটা এখন একটি ক্লিকেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ফেসবুক কোন বেঞ্চমার্ক না। একটা বিল্ডিং শক্ত ভীতের উপর না বানালে সামান্য ভূমিকম্পেই ভেঙ্গে যাবে। কেউ যদি লেখক হতে চায়, তাকে লেখালেখির কলা কৌশল রপ্ত করতেই হবে। ফেসবুকের জনপ্রিয়তায় আপনার ১-২ টা বই বিক্রী হবে। কিন্তু পাঠক এক্সময় বিরক্ত হবেই। পাঠক তো বোকা না। 

ওমেন্সকর্নার :  আপনার এতো মূল্যবান সময় থেকে ওমেন্সকর্নারকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য এবং আপনার সৃষ্ট বই, কলাম, নাটকের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।  

জিকো : আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করি। 
 

Leave a Comment