সমাজের সব জায়গায় নিজেকে কবি দাবী করে চলাও দায়! : সাব্বির 

  • ফারজানা আক্তার
  • ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮

সাব্বির নাইম একজন তরুণ উদীয়মান কবি। তার নামের পাশে ছোট্ট করে ব্র্যাকেট দিয়ে লেখা দুঃখ বালক। একজন কবি যে কিনা সুন্দর সুন্দর কবিতার মাধ্যমে অন্যের দুঃখ সরিয়ে দেয়, তার নামের পাশে কেন দুঃখ বালক লেখা সেটা আজ আমরা জানবো। ওমেন্স কর্নারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তার নামের রহস্য সহ আরো নানাবিধ গল্প করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার। 

ওমেন্সকর্নার :   'সাব্বির নাইম' নামটাকে যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলি তাহলে হয় 'সাব্বির' 'নাইম' । দুইটায় সুন্দর এবং পূর্ণাঙ্গ নাম। তাহলে পাশে "দুঃখ বালক " কেন ?

সাব্বির নাইম : আমার সম্পূর্ন নাম হচ্ছে সাব্বির হোসেন নাইম। নামটা আমার বাবা রেখেছিলেন। লেখালেখি যখন শুরু করি  তখন আমার মনে হলো এত বড় নাম যাচ্ছে না। তাই নামটা ভেঙ্গে সাব্বির নাইম রেখে দিই। এছাড়া দুঃখ বালক সম্পর্কে যা জানতে চান সেটা আমার মনের কোথাও লুকিয়ে থাকা গভীর বেদনার কারনও বলতে পারেন। আমার এক বন্ধু ছিলো, অনু নাম। কোনোদিন দেখা হয়নি। মাঝেমাঝে কথা হতো। এই দুঃখ বালক নামটা ওরই দেয়া। বন্ধুটা হারিয়ে গেছে। নামটা রেখে দিয়েছি। বুকের গভীর দুঃখের সাথে কিছু স্মৃতি থাকা ভালো। 

ওমেন্সকর্নার : আপনি কবিতা না লিখলে অন্য কি কাজ করতেন ?

সাব্বির নাইম : কবিতা না লিখলে কী করতাম সত্যিই জানি না। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। হয়তো আর সবার মতোই পড়াশুনা শেষ করে চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটতাম। আসলে  কবিতা  ছাড়া আর কিছু তো আমি পারি না, তাই সে বিষয় নিয়ে ভাবিও নি কখনো। 

ওমেন্সকর্নার : জীবনে কখনো কবিতার বই উপহার পেয়েছেন ? সেই বইটির নাম কি ?

সাব্বির নাইম : প্রথম যে কবিতার বই উপহার পেয়েছিলাম সেটার নাম ছিলো ‘ স্বপ্ন জাল চোখে ’। বইটা লিখেছিলেন লিটন বঙ্গবাসী। ছোট ছিলাম, বই সম্পর্কে তখন তেমন বুঝতাম না। বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে মুগ্ধ হয়ে বড় বোনকে বলেছিলাম বইটা আমাকে কিনে দিতে । বাসায় এনে বইটা পড়ার পর মাত্র  চারটি কবিতা পড়তে পেরেছিলাম। আমার বয়সের তুলনায় কবিতাগুলো এডাল্ট ছিলো তখন। ঐ বই পরে আর পড়া হয় নি কখনো। এছাড়া সুনীল, নির্মলেন্দু, মহাদেব, শক্তি, জীবনানন্দের অনেক কবিতার বই উপহার দিয়েছিলো আমার প্রাক্তন প্রেমিকা। 

ওমেন্সকর্নার : কোন কবির কবিতা আপনাকে বেশি টানে ?

সাব্বির নাইম : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আমি সুনীল দা বলি সবসময়। আমার যখন লেখার হাত অসার হয়ে যায়, চিন্তার পথ থমকে যায়, ভাবনার গন্ডি থেকে বেরুতে পারিনা তখনই আমি সুনীল’দার কবিতার বই হাতে তুলে নিই। আমার মন ভালো হয়ে যায়। নতুন করে ভাবতে পারি, লিখতে পারি। এছাড়া হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান ,শক্তি চট্টোপাধ্যায় সহ আরো অনেকের কবিতাই ভালো লাগে। নতুনদের মধ্যে আখতারুজ্জামান আজাদ, চৌধুরি ফাহাদ, কালপুরুষ, সাদাত হোসাইন অনেকেই ভালো লিখছে, ভাল লাগে পড়তে। 

ওমেন্সকর্নার : বর্তমানে কি করছেন ? পড়াশোনা , চাকরি কিংবা লেখালেখি ?

সাব্বির নাইম :  বর্তমানে চাকরি করছি। শুধুমাত্র লেখালেখি করেতো এই যুগে এসে পেট চালানো কঠিন। প্রকাশকরা টাকা দিতে চায় না ঠিক করে। সমাজের সব জায়গায় নিজেকে কবি দাবী করে চলাও দায়! মানুষের চোখের টিপ্পনি কাটার স্বভাব তো কখনো শেষ হবে না। তাই লেখালেখিকে এখনো পেশা হিসেবে নিতে পারিনি। তবে একদিন সব পিছুটান ছেড়ে দিয়ে লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে নেবো। এমনটাই স্বপ্ন আমার।

ওমেন্সকর্নার : বিদেশে বসে দেশের জন্য কেমন টান অনুভব করেন ?

সাব্বির নাইম : আসলে এই অনুভূতির কথা বলে বোঝানো সম্ভব না। কেউ বিদেশে না আসলে বা দীর্ঘদিন না থাকলে সেটা বোঝানো খুব কঠিন। দেশের মাটির ঘ্রান, বৃষ্টির ঘ্রান, ধূলোবালি, সমাজ ব্যবস্থা, ঈদ, পূজা, বইমেলা, বৈশাখ, শীতের দিনে বন্ধুদের সাথে ব্যাডমিন্টন, এলাকার মাঠে ক্রিকেট , মায়ের হাতের রান্না, বন্ধুদের সাথে আড্ডা কোন কিছুই তো বিদেশে সেভাবে পাওয়া হয় না, তাই খারাপই লাগে অনেক। দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সবসময়ই বুকে হাহাকার জেগে উঠে। 

ওমেন্সকর্নার : এবারের বই মেলায় পাঠক আপনার কোন বইটি পাচ্ছে ?

সাব্বির নাইম : অনেকগুলো বই-ই থাকছে। কেভিন ব্রুক্সের লেখা  ‘ জনি ডিলগাডো : প্রাইভেট ডিটেকটিভ ‘ বইটির অনুবাদ করেছি আমি। এটা থাকছে আদিত্য অনীক প্রকাশনীতে। এছাড়া ‘ নীল খামে বন্দি নামে ‘ চিঠি ও কবিতার বইয়ের সংমিশ্রনে একটি যৌথভাবে বই থাকছে আমার। বইটিতে আমার সাথে লিখেছেন জনপ্রিয় লেখক এম.কে. ইসলাম। বইটি প্রকাশ করছে এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী। এছাড়া  ‘চেনাগলি চোরাবালি :তৃতীয় পাঠ’ ও ‘চেনাগলি চোরাবালি : দ্বিতীয় পাঠ’ নামে দুটি বইয়ে আমার লেখা কিছু কবিতা আছে। এই দুটি বইয়ের সম্পাদনা করেছেন আহসান আল আজাদ ভাই। বই দুটি পাওয়া যাবে বাংলার প্রকাশনে। 

ওমেন্সকর্নার : বিদেশে রয়েছেন তাই বই মেলায় যেতে পারছেন না। বই মেলায় যেতে না পারার দুঃখটা কিভাবে অনুভব করছেন ?

সাব্বির নাইম : ২০১০ ও ২০১১ সালে বইমেলায় গিয়েছিলাম। আর কখনো যাওয়া হয়নি। না যেতে পারার কষ্টটা অনেকটা সন্তান জন্ম দিয়ে তাকে দেখতে যেতে না পারার কষ্টের মতোই। খারাপ লাগে। তবে মেনে নিয়েছি। একসময় যাবো। অন্যের বই কেনার জন্য যাবো, নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে যাবো, এসব ভেবে ভালো লাগে। 

ওমেন্সকর্নার : লেখালেখি নিয়ে অদূর ভবিৎষতের চিন্তা ভাবনা কি ?

সাব্বির নাইম : ভবিষ্যত তো সৃষ্টি করবে বর্তমান। তাই আমি বর্তমানটা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে চাই। আরো ভালো ভালো কবিতা লিখে যেতে চাই। বর্তমানের প্রতিটি সময়ই আমার কাছে মূল্যবান। এই সময়গুলোর সফল প্রচেষ্টাই একসময় আমার সুন্দর ভবিষ্য হবে বলে বিশ্বাস করি। এছাড়া সমসাময়িক যারা লেখালেখি করছি, তারা সবাই মিলে বাংলা সাহিত্যকে আরো অনেক দূর নিয়ে যাবো এটাই ভাবনা।

ওমেন্সকর্নার : বিদেশে রয়েছেন তাই তাদের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানেন। যেহেতু আপনি বাংলাদেশী তাই বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাও জানেন।  দুই দেশের সমাজ ব্যবস্থার উন্নতি এবং অবনতি নিয়ে আপনার চিন্তা ভাবনা থেকে কিছু বলেন। 

সাব্বির নাইম : আসলে ব্যাপারটা খুব আপেক্ষিক। মানুষতো সভ্যতার দিকেই এগুচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেভাবেই হয়তো উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশের কথা বলি, ট্রাফিক, নোংরা রাজনীতি, দূর্নীতি, ঘুষ এই সবকিছু মিলিয়েই অবনতি হচ্ছে দেশের। আবার উন্নতি হচ্ছে না, তাও না। সবাই স্বপ্ন দেখছে বড় বড়। দেশের মানুষ শুধু বিদেশের দিকে না ঝুকে দেশেই ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তির দিক দিয়ে এগুচ্ছে । সব মিলিয়ে খারাপ না।

আর ইংল্যান্ডের সমাজ ব্যবস্থার কথা যদি বলি, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে তারা একটু ঝামেলায় পড়বে। ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো ওদের যেটার ইফেক্ট এই দেশের সমাজ ব্যবস্থার উপর পড়ছে প্রতিনিয়ত। একটা সময় হয়তো কাটিয়ে উঠবে। তবে অনেক দেরী হয়ে যাবে তখন। 

ওমেন্সকর্নার : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য এবং আপনার বইয়ের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।  

সাব্বির নাইম : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। 

Leave a Comment