আমি স্বপ্নবিরোধী একজন মানুষ : ইশতিয়াক অাহমেদ

  • ফারজানা আক্তার
  • মার্চ ১, ২০১৮

"আমরা জীবনভর প্রচুর অভাব নিয়ে ঘুরি। প্রাচুর্য্য বা টাকা পয়সা কখনওই আমাদের সকল অভাব দূর করতে পারেনি। সম্ভবও না..." 

উপরের লেখাটি জনপ্রিয় লেখক ইশতিয়াক অাহমেদের একটি স্ট্যাটাসের অংশ। ফেসবুকের কল্যানে আমরা জাত যেকয়জন লেখককে চিনতে পেরেছি, জানতে পেরেছি তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিনই আমাদের জীবনে, আমাদের সমাজে , বিশ্বে নানা অসঙ্গতি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। সেই ঘটনাগুলো পাঠকের সামনে কয়েক লাইনে তুলে পাঠকের মনকে ছুঁয়ে আসার মতো যেকয়জন মানুষ আমাদের সমাজে রয়েছেন , তিনি তাদেরও একজন। ওমেন্স কর্নারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জনপ্রিয় এবং খুব অল্প সময়ে পাঠকের মন ছুঁয়ে দেওয়া এই লেখক তার জীবনের নানা গল্প বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার। 

ওমেন্সকর্নার : প্রথমেই শুনবো বর্তমানে কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন ?

ইশতিয়াক অাহমেদ : আমি অনেকগুলো কাজ করি তো। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা চলছে। একটা ডকুমেন্টারির কাজ করছি। গান লিখছি। আর দুটো শর্টফিল্ম শুট করেছি। সেটার শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। ডাবিং, মিউজিক কালার গ্রেড অন্যান্য।

ওমেন্সকর্নার : ২০১৮ সালের বইমেলায় আপনার বই "ল্যান্ডফোন" পাঠকের মন কতটা ছুঁতে পেরেছে বলে আপনি মনে করছেন ? 

ইশতিয়াক অাহমেদ : আমার এ যাবৎ যত বই এসেছে, এটাতে আমি সবচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি। মেলাতেই পঞ্চম মুদ্রণ এসেছে। যা প্রথমবারের মতো ঘটেছে। পাঠক সবে কিনে নিয়ে গেছে। পড়ে পাঠ প্রতিক্রীয়া জানালে হয়তো জানা যাবে কতটা ছুঁয়ে গেছে। তবে এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাও উল্লেখ করার মতোই। প্রচুর রিভিউ আসছে উপন্যাস শেষ হওয়ার পরও তারা চরিত্রগুলোর কাছ থেকে বের হতে পারছেননা। যা একজন লেখকের জন্য খুবই আনন্দদায়ক এবং সুখকর বিষয়।

ওমেন্সকর্নার : নিজের সৃষ্টি দিয়ে কারো মন ছুঁয়ে তাকে কাঁদাচ্ছেন, হাসাচ্ছেন, ভালো লাগার কিছু অনুভূতি দিচ্ছেন। এই ব্যাপারটা আপনাকে  কতটা রোমাঞ্চিত করে ? 

ইশতিয়াক অাহমেদ : একজন সৃজনশীল মানুষের এটাই মূলত পাওয়া। আমি আমার কাজের বিপরীতে অনুভূতি জানানো ভালোবাসাময় প্রতিটি অক্ষরে রোমাঞ্চিত হই। প্রতিটি শব্দের কাছে ঋণগ্রস্থ হই।

ওমেন্সকর্নার : বর্তমানের ইশতিয়াক অাহমেদ কি ছোটবেলা ভাবতে পেরেছিলো অচেনা অজানা মানুষের এতো ভালোবাসা পাবে?

ইশতিয়াক অাহমেদ : হাহা। না। তবে আমি আমার স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞ কারণ, মানুষের ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা কেবল তিনিই দেন। 
 
ওমেন্সকর্নার : কবে থেকে লেখালেখির শুরুটা করেছিলেন ? 

ইশতিয়াক অাহমেদ :১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাসে।

ওমেন্সকর্নার : আপনাকে নিয়ে আপনার বাবা - মা'র স্বপ্ন কি ছিলো ? তারা তাদের ছেলেকে কোন প্রফেশনে দেখতে চেয়েছিলেন ? 

ইশতিয়াক অাহমেদ : তারা অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন, অনেকগুলো পেশায়ও দেখতে চেয়েছিলেন। কারণ তাদের স্বপ্ন বারবার ভেঙেছে, কিন্তু স্বপ্নের পিছু ছাড়েননি। ছোটবেলায় ভেবেছিলেন, ছেলে ডাক্তার হবে। যখন সেটা হলো না। তখন স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন, ছেলে বিচারক হবে। তাও একসময় হলো না। তারপর চেয়েছিলো বাবার পেশা আইনজীবী হবে হয়তো। তাও হয়নি। আসলে তাদের কোনও স্বপ্নই আমার পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

ওমেন্সকর্নার : লেখালেখির জগৎতে সবথেকে রোমাঞ্চকর এবং বিব্রতকর দুইটি ঘটনা শুনবো আপনার নিজের অভিজ্ঞতটা থেকে। 

ইশতিয়াক অাহমেদ : প্রথম সবই রোমাঞ্চকর। সেটা প্রচুর আছে। একই সাথে একটা রোমাঞ্চকর এবং বিব্রতকর ঘটনা বলি, ২০১৩’র দিকে তরুণী ফেসবুকে নক করলেন, তিনি কানাডায় থাকেন। তিনি আমার লেখা খুব পছন্দ করেন। লেখা পড়ে বুঝতে পারছেন আমি খুব ভালো টাইপের মানুষ। সম্প্রতি দেশে আসছেন। মা বাবা তাকে বিয়ে করতে চাপ দিচ্ছেন। তিনি বেশ কদিন আমার প্রোফাইল ঘেটে এবং দুয়েকজনের সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তিনি আমাকে বিয়ে করতে চান এবং সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। বিষয়টাই আমি খুব মজা পেলাম।
তিনি বিষয়টায় যত সিরিয়াস, আমি ততটাই বিষয়টা নিয়ে হেয়ালী করছি। বললাম, আমি ইংরেজি পারিনা, বয়সও কম, বিদেশ যাইনি কখনও, হারিয়ে গেলে কী হবে? তিনি নানাভাবে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তিনি আমার সকল প্রকার টেককেয়ার করবেন। আমি তাকে আরও নানাভাবে উদাসিনতা দেখিয়ে বিরক্ত করে ফেললাম। ফলাফল তিনি আমাকে বিয়ের আগেই ডিভোর্স দিয়ে ব্লক করে দিলেন।

ওমেন্সকর্নার : আমরা সাংবাদিক এবং লেখক ইশতিয়াক অাহমেদকে চিনি। যে ইশতিয়াক অাহমেদকে পাঠক সমাজ চিনে না! অচেনা সেই ইশতিয়াক অাহমেদকে নিয়ে কিছু বলুন। 

ইশতিয়াক অাহমেদ : সেখানে ইশতিয়াক আহমেদ অতি বাধ্যগত একজন চাকুরিজীবী। দ্বায়িত্বে শতভাগ সচেতন মানুষ। 

ওমেন্সকর্নার : ফেসবুকের কল্যাণে আমরা সবাই নিজের চিন্তা ভাবনাকে খুব সহজেই প্রকাশ করতে পারছি। কোনো একটি ভালো সংবাদ কিংবা খারাপ সংবাদ নিয়েও নিজের মতামত সবাইকে খুব সহজে জানাতে পারছি। 

আপনি নিজেই সমসাময়িক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিষয় নিয়ে খুব সহজেই ছোট খাটো স্ট্যাটাসগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে লিখে ফেলেন। আপনার লেখাগুলোতে কিছুটা প্রতিবাদের ভাষা থাকে, কিছুটা প্রতিরোধের ভাষা থাকে। ভার্চুয়াল জগৎতে সমস্যাগুলোর কথা তো জানানো হলো। আমাদের সমাজের উপর কিংবা তরুণ সমাজের উপর আপনার এই প্রতিবাদের ভাষা অথবা প্রতিরোধের ভাষার প্রভাব কতটুকু পরে? 

ইশতিয়াক অাহমেদ : অবশ্যই পারে হয়েছেও। গণজাগরণ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

ওমেন্সকর্নার : আপনি আপনার নিজের চিন্তা ভাবনা থেকে বলুন, একটু সচেতন হলে আমাদের দেশটা কেমন হতে পারতো!  একটু সচেতনেতার অভাবে আমাদের দেশটা কেমন হয়ে যাচ্ছে! 

ইশতিয়াক অাহমেদ : এটা আমরা সকলেই বুঝছি। কিন্তু কেউ কিছু করছি না। আমি অনেকবার বলেছি, আমরা একই সাথে দেশপ্রেমিক এবং স্বার্থপর। ধরেন, আমরা কোনও লাইনে দাঁড়াবো সেখানে অন্য কেউ নিয়ম ভেঙ্গে ঢুকে গেলে আমরা দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠি। এই দেশের কিছু হবেনা। আইন মানেনা। কিন্তু যখন আমরা কোনও সুযোগ পাই, তখন আবার এটাকে জায়েজ করার জন্য অনেক কিছু বলি। ব্যাখা দেই, সুযোগ পেয়েছি দাড়াবো না কেনো? তো এই দ্বৈতচরিত্রের কারণে আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি।

ওমেন্সকর্নার : ইশতিয়াক অাহমেদের স্বপ্নে এই বাংলাদেশটাকে দেখতে কতটা রঙিন লাগে ? 

ইশতিয়াক অাহমেদ : আমি স্বপ্ন দেখিনা। স্বপ্নবিরোধী একজন মানুষ। আমার স্বপ্ন নেই, চাওয়া আছে। আমি চাই আমার বাংলাদেশ তার মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের পথ ধরে হেঁটে যাক বহুদূর। মুক্তিযুদ্ধ এ জাতির প্রধান পরিচয় হোক। 

ওমেন্সকর্নার : আপনার জন্য এবং আপনার সৃষ্টিশীল প্রতিটা কাজের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।  আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ইশতিয়াক অাহমেদ :আপনাদেরও ধন্যবাদ।
 

Leave a Comment