ভালোবাসা দিবসের প্রয়োজন আছে কি?

  • রেজবুল ইসলাম 
  • ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ভালোবাসা দিবস বলে তেমন কিছু ছিল না। ছিল না বলতে বেশির ভাগ মানুষ এটা জানতো না। দু'একজন কে দেখা যেতো লাল গোলাপ হাতে রাস্তায় হেটে বেড়াচ্ছে। সে সময় তাদেরকে মানুষ এলিয়েন মনে করতো। সবাই দুচোখ করে তাকিয়ে থাকতো। ভালোবাসা দিবস নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আদৌও ভালোবাসা দিবসের প্রয়োজন আছে কিনা এই নিয়ে চলে তুমুল সমালোচনা। আসলেও ভালোবাসার আলাদা কোন দিবসের  প্রয়োজন নেই কিন্তু দরকার আছে ভালোবাসা দিবসের। কারণ পৃথিবী প্রেম,  ভালোবাসার বিপক্ষে। 

পত্রিকা খুললে সেখানে কোন ভালোবাসার কথা লেখা থাকেনা। প্রেমিক যুগলের ছবি থাকেনা। শুধু থাকে খুন ধর্ষণ আর দুর্নীতির খবর।  বাংলাদেশে প্রথম ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৩ সালের দিকে। যায় যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের ছোঁয়া নিয়ে দেশে এসে লন্ডনী সংস্কৃতির প্র্যাকটিস শুরু করেন। তিনি প্রথম যায় যায় দিন পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্ব ভালবাসা দিবস বাংলাদেশীদের কাছে তুলে ধরেন। তেজগাঁওয়ে তার পত্রিকা অফিসে কেউ চাকরী নিতে গেলে না কি সাথে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যেতে হতো। প্রেমের যুগললবন্দী কপোত-কপোতীকে দেখে ওনি না কি খুব খুশী হতেন। অভিধা প্রথম ব্যবহার করেন শফিক রেহমান। এজন্য শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের জনক বলা হয়।

পৃথিবী সব সময়ই প্রেমের বিপক্ষে। বিশেষ করে ধর্মীয় মতবাদ প্রেমকে সমর্থন করে না বলেই প্রেমিক যুগল মানুষের চক্ষুশূল। যদিও পৃথিবীতে ধর্মীয় মতবাদ গুলোই সব চেয়ে বেশি ঠুনকো। যা মানুষ গ্রহণ করছেনা। বেশিরভাগ ধর্ম ও সমাজ প্রেম ভালোবাসাকে নষ্টামির সংগে তুলনা করে। ব্যপারটা এমন যে, প্রকাশ্যে খুন করে যাবিন পাওয়া যায় কিন্তু প্রকাশ্যে চুমু খেয়ে নয়। যদি এমন হতো বাংলাদেশে কোন বখাটে নেই। একটি এলাকা কল্পনা করুণ যেখানে কোন বখাটে নেই। আছে কয়েকটি প্রেমিক যুগল। যারা হাত ধরে বসে আছে, হেটে বেড়াচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে আছে বখাটে যারা প্রেম করতে শেখেনি, শিখেছে ধর্ষণ করতে। 

ভালবাসা অবশ্যই একদিনের জন্যে নয়, তা সারা জীবনের। আলাদাভাবে ভালবাসা প্রকাশ করবার জন্যে, স্বরনীয় করে রাখবার মত কিছু স্মৃতি তৈরী করবার জন্যে, নতুন করে ভালবাসাকে আর ভালবাসার মানুষকে উপলব্ধি করবার জন্যে আলাদা করাকে খারাপ বলেও মনে করিনা।
যেকোন বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার অন্যতম একটি উপায় হল বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে স্মরণ/উদযাপন করা। দিবসের ধারণাটা কিন্তু তাই। পৃথিবীতে বহু দিবস আছে বছরব্যাপী এবং উদ্দেশ্য বিশেষভাবে স্মরণ/উদযাপন করা। 'দিবস' থাকার মানে এই নয় যে অন্য কোন দিনে এর ভূমিকা কেউ খাটো করে দেখবে। বিশ্ব এইডস দিবস মানে দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণ/উদযাপন করা। এর মানে এই নয় যে বিষয়টা অন্য 'সাধারণ' দিনে গুরুত্ব বহন করেনা। একই কথা প্রযোজ্য মা দিবস, বাবা দিবস, শিক্ষক দিবস এমন অনেক দিবসের ক্ষেত্রে। ভালবাসা দিবসও এমন এক দিন, বিশেষভাবে স্মরণ/পালনের দিন। সারা বছরের ভালবাসাকে বিশেষভাবে স্মরণ/উদযাপন করা।

মনের হিংসাত্বক সত্তাকে দমিয়ে রেখে ভালোবাসতে শিখুন। কারণ প্রেমকে সমর্থন করে কোন সমাজ বা গোষ্ঠি ধ্বংস হয়নি। ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা রইলো সবার জন্য।

Leave a Comment