অন্ধবিশ্বাসে নারী করছো কি নিজের সর্বনাশ?

  • রীপা চক্রবর্তী
  • ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮

প্রকাশ ও অদ্রি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই খুব ভাল বন্ধু। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম,অবশেষে পরিণয়ডোরে পরিনতি। ৫ বছরের সংসার। শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, দেবর-ননদে পরিপূর্ণ। কিন্তু কখনই তা সুখময় ছিলোনা। প্রকাশ পরনারী আসক্ত। পরিবারের কেউ অদ্রি কে আজো মেনে নেয়নি। 

আর উপায় না পেয়ে কাকাতো বোনের কথায় গেল এক সাধুর কাছে। সে যে সে কেউ নয়,অনেক ভাঙ্গা  সংসার উনি ঠিক করেছেন,এমন কাজ করবেন পুরো শ্বশুরবাড়ী অদ্রি কে ছাড়া আর কিছু বুঝবেনা। তার কথামত সবকিছুই করা হলো। উনি নাকি তান্ত্রিক,সিধ্বিপ্রাপ্ত,তাই অবশেষে অদ্রির মন জয় করে ওর শরীরটাকেও বাগে নিয়ে নিলেন। অদ্রিই বা কি করবে! দেখলো তো নিজে সুন্দরী, শিক্ষিত হয়েও পারলো কি প্রকাশ কে বাহুডোরে বেধে রাখতে?কিন্তু সাধুর টোটকায়ে কেমন সব আবার ঠিক হয়ে গেল। সাধুর কথায় তান্ত্রিক নিয়ম মতে বস্ত্রবিহীন সাধনায় কোন অন্যায় তো সে করেনি!

লেখিকা

অদ্রি সন্তান সম্ভবা,কিন্তু প্রকাশের নয়। অন্ধবিশ্বাসের বলি অদ্রি মেরে ফেলে দিলো অনাগত সন্তান টিকে,লোকচক্ষুর অন্তরালে! সাধুর কথা,সাধনায় ভালোবাসা থাকা দোষের নয়। কিন্তু বাধা আস্তে দেয়া যাবেনা। অদ্রির বোন ও যে এভাবেই সন্তান লাভ করেছে। জামাইবাবু বিদেশেই রয়ে গেল কিনা! এভাবেই তো সেবা করতে হয়,নাহলে এমন সুখ ত আগে জোটেনি! সবাই তাই তো করে! এভাবেই প্রতিনিয়ত তথাকথিত সুখের আশায় অদ্রিরা পাপ করে চলছে,আর সাধুবাবারা পুণ্য করে ফিরছে। নারী,তুমি আজো সেকেলে-বুদ্ধিহীন রয়ে গেলে! তোমারি বা কি দোষ দেব,তুমি তো অসহায় ও নির্যাতিত রয়ে গিয়েছ আজো,পেরে উঠোনা শক্তিশালী পুরুষতন্ত্রের কাছে,আজো হলোনা তোমার জীবনে ভোর! মনে করতাম বিয়ে হলেই নারী তুমি সামাজিকভাবে সুরক্ষা পায়,তাই তো আজো বাপের বাড়ী থেকে শ্বশুর বাড়িই তোমার আসল জায়গা!

খুব মন:কষ্টে আছি,কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা স্বামীর মনে পরম আরাধ্য স্থান টিকে ধরে রাখতে অথবা দুর্বল হয়ে যাওয়া দাম্পত্যকে টিকিয়ে রাখতে কিংবা শ্বশুরবাড়িকে আপন করে নেয়ার সবচেস্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে নিজেকে অপাত্রে দান করে,কুমন্ত্রনার সাহায্য নিয়ে যুদ্বং দেহি মনোভাব তোমাকে এতটাই অলক্ষী,এতোটাই ভীরু বানিয়ে দেবে নারী! কেনো গেলে ওই পথে?ভন্ড পাষন্ডদের সেবা করে,মুল্যবান অর্থ-সময় সর্বপরি নিজের সতীত্ত্ব কেনো বিলিয়ে দিলে অসাধ্য সাধনের লোভে? যে সংসারে তোমার মুল্য নেই,যে স্বামী তুমি থাকা সত্ত্বেও পরনারীভোগী,যে শ্বশুরবাড়ি তোমার স্বর্বস্ব কেড়ে নিলো,নাই বা ফিরে গেলে তাদের কাছে,হলোই না হয় বিচেছদ!

তাবিজ-কবচ,কবিরাজ-ওঝা-হুজুর,পীর-ফকির কেউ কি পারলো তোমায় কিছু ফিরিয়ে দিতে? আজ তুমি ধর্ষিতা কিন্তু তুমি পারবেনা এর প্রতিকার করতে,পারবে কি কোনভাবে?কেউ কি বিশ্বাস করবে তোমায়?অন্ধবিশ্বাস এর শক্তি যে বড়ই তীব্র! আইন?কোথায়?নারী তুমিযে তোমার সীমা অতিক্রম করে আজ সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে!কে থাকবে তোমার পাশে? এই ঘটনাটি একজন সল্পশিক্ষিত নারীর তথাকথিত মুর্খতার প্রকাশ,তাই আজ বিচারের মুখোমুখি সে নিজে,অন্ধবিশ্বাস আজ তাকে নিস্ব করে দিয়েছে এবং ঘটনাটি সত্য। 

কিন্তু খুব দু:খের বিষয় শিক্ষিত নারীদের মাঝেও এই সর্বনাশারোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে নির্যাতিত হয়েও ভালকিছু হবে  অথবা সব বুঝেও শাস্তির ভয়ে মুখ বুজে এই ভয়ংকর প্রথাকে বেড়ে উঠার স্পর্ধা দিয়ে যাচ্ছে! এর শেষ কি কখোনোই হবেনা?ভালোবাসার শক্তি কি তবে এতই ঠুনকো?

 

Leave a Comment