শরীরের ক্ষুধা ফেসবুকের কমেন্টস বক্সে মিটানোর নতুন মাধ্যম নাকি?

  • ফারজানা আক্তার
  • ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮

বর্তমানে ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের বিরাট একটি মাধ্যম। আমরা খুব সহজেই একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। হয়তো যাদের সাথে জীবনেও দেখা হতো না, বন্ধু কিংবা আত্মীয় হওয়া তো অনেক দূরের কথা! তাদের সাথেও খুব ভালো বন্ধুত্ব হচ্ছে, কেউ কেউ তো পরিবারের একজনও হয়ে যাচ্ছে। আবার, বাস্তব জীবনে আপনার মানসিকতার মানুষ কিন্তু ঠিকভাবে খুঁজে নিতে পারবেন না! ফেসবুকের কল্যাণে কিন্তু আপনি মোটামোটি আপনার মানসিকতার মানুষ সহজে চিনে নিতে পারছেন। আপনি হয়তো খুব ভালো কবিতা লিখেন কিংবা ভালো গল্প! আপনার গল্প কিংবা কবিতা মানুষ কিভাবে গ্রহণ করছে সেটাও কিন্তু আপনি খুব সহজে জেনে নিতে পারছেন। ফেসবুকের কল্যাণে পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি ছোটখাটো ব্যবসাও শুরু করতে পারছেন। ফেসবুকের উপকারিতা লিখতে গেলে আমার আজকের লেখা আর শেষ হবে না। আপনারা সবাই এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।

প্রত্যেকটা বিষয়-বস্তুর ভালো দিক, খারাপ দিক রয়েছে। বস্তু তো বস্তুই! সে তো আর জানে না মানুষ তাকে নিয়ে কি হেলাফেলা করছে। কিন্তু আমি আর আপনি মানুষ। আমরা ভালো কিছু করলে তার প্রশংসার যেমন দাবি করি, তেমনি খারাপ সবকিছুর দায়ভারও আমাদের নিতে হবে। ফেসবুক আমাদের ভালো কিছু দিচ্ছে আমরা সেটা নিচ্ছি, বিনিময়ে ফেসবুককে আমরা নোংরা করছি নাতো? কি বলছি বুঝতে পারছেন না, তাই তো? আমি বুঝিয়ে বলছি।

শাহিনা (ছদ্মনাম) ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের সাথে দিয়াবাড়ি ঘুরতে গিয়েছে। সবাই মিলে মজা-মাস্তি করেছে। সবার পছন্দের খাবার খেয়েছে, সবাই অনেক অনেক ছবি তুলেছে। শাহিনা তার বন্ধুদের তুলনায় একটু স্বাস্থ্যবান। কিন্তু শাহিনার এই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। শাহিনা নিজে যেমন, তেমনটা নিয়েই খুশি। নায়িকাদের মতো স্লিম হতে হবে, নিজেকে সুন্দর দেখাতে এক হাত পরিমান মেকআপ নিতে হবে এসব ভাবনা শাহিনা ভাবে না। শাহিনা স্বাধীন এবং নিজের মতো চলাফেরা করতেই পছন্দ করে। তো ঘুরাঘুরি শেষে শাহিনা ফেইসবুকে বন্ধুদের সাথে বেশ কয়েকটি ছবি আপলোড দিলো। সেই ছবিগুলোর মধ্যে ২টা ছবিতে শাহীনের সাথে তার ৩জন ছেলে বন্ধুর ছবি ছিলো। ছবিতে যারা যারা ছিল শাহিনা সবাইকে ট্যাগ করে দিলো। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে অনেক লাইক আর কমেন্টস আসতে শুরু করলো। শাহিনা খুশি খুশি মনে কমেন্টস পড়তে গেলো যেটা আমরা সবাই ছবি আপলোড করার পর করি। শাহিনার খুশি খুশি মুখটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয় নি! বলতে পারেন এর কারণ কি ?

কমেন্টস ১ : জীবনে এই প্রথম মানুষের মতো হাতির হাসিখুশি ছবি দেখলাম।

কমেন্টস ২ : কি মাল রে বাবা!

কমেন্টস ৩ : কি মাম্মা!!!! *****

অদ্ভুত অদ্ভুত আরো নানা বিশ্রী বিশ্রী কমেন্টস। শাহিনা মোটা, আর একটা মেয়ে মোটা মানেই কি ছেলেরা তাকে ** !! আসলেই? একটা মেয়ে মোটা, একটা মেয়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে তাই সে মাল! এটাই কি? কি বলেন আপনারা? আপনি একটা মানুষকে চিনেন না, জানেন না, কখনো সামনা সামনি দেখা হবে কিনা তাও জানেন না কিন্তু আপনি তাকে আঘাতের পর আঘাত করে যাচ্ছেন! তাকে না ছুঁয়েই মুখের হিংস্রতায় ভয়ংকর এক ট্রমায় ফেলে দিচ্ছেন। শরীরের ঝাঁজ মুখে পুষিয়ে নিচ্ছেন!

আরিফ (ছদ্মনাম) খুব ভালো লিখে। ফেসবুকে তার লেখার জন্য আলাদা একটা সুনাম রয়েছে। রোমান্টিক ধরণের গল্পই বেশি লেখে আরিফ, দেখতেও সুদর্শন। নারী ভক্তের সংখ্যাটাও তাই খুব বেশি আরিফের। আরিফ কিছু একটা লিখলেই লাইক আর কমেন্টসের বন্যা বয়ে যায়। ইনবক্সের কথা তো বাদই দিলাম। আরিফের সাথে তার বিশাল ফ্যানরা সবাই দেখা করতে চায়। ইনবক্সে সুন্দর সুন্দর মেয়েদের মেসেজের রিপ্লাই দেয় আরিফ । তারপর সেই নীল দুনিয়ার কথাবার্তা, কাজ -কর্ম করতে চায়। ফেসবুকে সবকিছু কেমন সস্তা বানিয়ে ফেলছে তথাকথিক কিছু সেলিব্রিটি মানুষ। আর কিছু কিছু মেয়ে আরিফের সেই ইশারায় সাড়াও দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে আরিফ তাদের প্রিয় লেখক বলে! নাকি আরিফের জনপ্রিয়তার ফ্যান্টাসির কারণে? বর্তমানের ছেলে -মেয়েরা ফ্যান্টাসির ফ্যান। আরিফের বিশাল নামডাক, বিশাল খ্যাতি। সবাই সেই খ্যাতির অংশীদার হতে চায় কিন্তু লুচ্চামির প্রতিবাদ কেউ করতে চায় না।

কয়টা উদারহণ দিবো, কয়টা ঘটনা লিখবো। নায়িকাদের পেইজে তো যাওয়ায় যায় না। নায়িকাদের এক একটা পোষ্টের কমেন্টস বক্স অশ্লীলতাকেও হার মানায়। কোনো ভদ্র মানুষের পক্ষে সেই কমেন্টস বক্স দেখার সাহস হয় না। অথচ বাস্তব জীবনে আপনি তাদের সামনে যাওয়ারও যোগ্যতা রাখেন না। তাহলে কেনো এমন নষ্টামী? শরীরের ক্ষুধা ফেসবুকের কমেন্টস বক্সে মিটানোর নতুন মাধ্যম নাকি? ছেলে হোক কিংবা মেয়ে তার পোষ্টে যেয়ে খারাপ কমেন্টস করার অধিকার আপনাকে কে দিলো? নিজের চরিত্রের এমন জ্বলন্ত প্রমাণ দেওয়ার আগে কি একবারও নিজের বউ, মা, বোন, মেয়ের কথা ভাবেন না? নাকি তার পোষ্টে যেয়েও !!!! আমি ভাবতেও পারছি না, লিখতেও পারছি না। শুধু বলবো ভালো হয়ে যান, এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান। প্রকৃতি খুব নিষ্ঠুর! আপনি আজকে অচেনা একটি মেয়েকে ভয়ংকর ট্রমায় ফেলে দিচ্ছেন, হয়তো এই মুহূর্তে অচেনা একটি ছেলে আপনার মা, বোন, মেয়ে কিংবা বউকেও একইভাবে ট্রমায় ফেলছে। কে জানে হয়তো সেটাই হচ্ছে!

Leave a Comment