নারী কোটাও চাইনা, লড়াই হবে সমানে সমানে!

  • তানজিলা আক্তার 
  • ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮

কিছুদিন ধরে নিউজফিডে কোটা উঠিয়ে দেয়া নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। যখন থেকে বুঝ হয়েছে তখন থেকেই দেখছি যে কোটা নিয়ে তর্কবিতর্ক লেগেই আছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, নানারকম কোটা আছে। এখন মূল কথায় আসি, কোটা ব্যবস্থা থাকা উচিত শুধুমাত্র দুর্বলদের জন্যে। প্রতিবন্ধীদের কোটা সুবিধা দেয়া উচিত কারন তারা দুর্বল। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে অনেক লেখা আছে। অনেকেই লিখেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা যদি কোটা সুবিধা পায়, তবে রাজাকারের সন্তানাদি কেনো শাস্তি পাবে না? তারা যুক্তি খাটাতে এমন অনেক কিছুই লিখেছে। যাই হোক নারীদের কোটা সুবিধা নিয়ে বলি। আমরা নারীরা সবসময়ে সমঅধিকার চাইছি। কিন্তু আমরা ভুলে কেনো যাই সমঅধিকার কখন আসবে? যখন আমরা সমান যোগ্য।

আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। বাংলা কোচিং শেষে একটা শিট নিবো বলে দাঁড়িয়ে আছি। আমি, আমার এক বন্ধু, আরেক বান্ধবী। শিট ছিলো দুইটা, আমাদের দুই বান্ধবীকে দিয়ে দিলো, বন্ধুকে বললো, "তুমি পরে বিকেলে এসে নিয়ে যেও, ওরা তো মেয়ে তাই দিয়ে দিলাম, পরে আর বের হবেনা। ও হাসতে হাসতে বললো, "আজ ছেলে বলে শিট পরে নিতে হবে।" তখন কথাটা না বুঝলেও আজ আমি ওর কথাটা বুঝি, কথাটা জানায় দেয়, "নারী কোটা দিয়ে তুমি শিটটা নিয়ে নিলে।"  পড়ালেখা ও চাকরী, এসব নিয়ে বলতে হলে, প্রথমেই কিছু প্রশ্ন আসে, আচ্ছা পড়া কি ছেলেমেয়ের জন্যে আলাদা? কর্মক্ষেত্রে কাজ কি নারীপুরুষ ভেদে আলাদা? 

তাহলে বলুন একই চাকরীতে কেনো নারী মাধ্যমিক পাশ আর পুরুষকে স্নাতক পাশ করতে হয়? জ্বী, আমি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের কথা বলছি। একটা মেয়েকে অধিকার দিতে গিয়ে আমরা একটা ছেলের প্রতি অবিচার করছি না তো? অথবা একটা নারীকে অধিকার দেয়ার নামে তাকে আবার একবার জানান দিচ্ছি না তো যে সে দুর্বল? তাই তাকে এই সুবিধা দিচ্ছি। কর্মক্ষেত্রে কাজ এক, চাকরি পরীক্ষার প্রশ্নও এক, তবে কেনো এই কোটা সুবিধা? কোটা সুবিধা দিয়ে কেনো একজন পুরুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? আর একজন নারীকে কেনো আবার বোঝানো হচ্ছে তুমি দুর্বল তাই তোমায় এই আলাদা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আমি সমানে সমানে লড়াই করে হেরে এসে বলতে পারবো যে আমি যুদ্ধ করতে জানি, আমার একটা আত্মবিশ্বাস থাকবে। কিন্তু কোটার দয়ায় পাওয়া সেই চাকরিতে আমাকে আবার জানানো হয়, "মেয়ে তুমি দুর্বল, তোমার আত্মবিশ্বাস নাই, তুমি কম পড়ো, তুমি চাকরির যোগ্য না, তাই চাকরিতে কোটা দিয়ে তোমাদের মেয়েদের চাকরি দিচ্ছি।" এসব কারনে অনেক ছেলেরা আজকাল মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলে না। 

আমরা মেয়েরা কোটা নিয়ে চাকরি নিয়ে আবার প্রমাণ করছি আমরা দুর্বল। সমঅধিকারের প্রথম ধাপে আমাকে কেনো কোটা সুবিধা দিয়ে জানান দিচ্ছে নারী তুমি দুর্বল, তাই কোটা সুবিধায় তোমাকে চাকরি দিলাম। আর কোটা সুবিধা নিয়ে চাকরির পর আমার পুরুষ সহকর্মী আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলবে, "কোটা সুবিধা নিয়ে চাকরি।" কোটা ছাড়াও এদেশের মেয়েরা বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রথম হচ্ছে। তারা চাকরি করছে। সমঅধিকার শব্দের সাথে নারীদের মাথায় সমযুদ্ধ, সমদায়ও ঢুকানো উচিত। তবেই প্রকৃতি ভারসাম্য পাবে। নয়তো এর ভবিষ্যৎ দায় কে নেবে? একজন নারীকে মানসিক ভাবেও প্রস্তুতি নিতে হবে এর জন্যে। একজন নারীর চাকরি না হলেও কোনো সমস্যা আমি দেখছি না, সে উদ্যোক্তা হবে। আরো অনেক কিছু করার মতো আছে, আমি যদি কিছু করতে চাই, পৃথিবী আমাকে অনেক সুযোগ দিবে। আমার অধিকার আমিই আনবো, কারো দয়ায় নয়। আমি নারী, আমি শক্তি। আমার এই পরিচয় যেনো কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। পুরুষও আমাদের জন্যে এগিয়ে আসবে, আমার অধিকার নিয়ে কথা বলবে। অতঃপর আমি সমানে সমানে লড়াই করে হেরে আসবো, কিন্তু কোটা সুবিধার চাকরি নিয়ে আমি আমার মেরুদণ্ড, আমার যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবো না। লেখায় ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।

Leave a Comment