কোটামুক্ত কোটায় কি কল্যাণ নিহীত?
- রেজবুল ইসলাম
- ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
একজন ব্যাটসম্যান যখন ফিফটি করে ফেলে তার আত্মবিশ্বাস চরমে পৌঁছায় এবং সে চেষ্টা করে সামনের দিকে আগানোর। বাংলাদেশের কোটা পদ্ধতির স্কোর এখন ৫৪ আর কিছুদূর গেলেই কোটা পদ্ধতি ১০০ করবে। বাংলাদেশের মত এতো দীর্ঘ সময় ধরে কোন দেশে কোটা পদ্ধতি কোনদিন ছিল না। আমেরিকা আমাদের জন্য #ডিভি নামক যে কোটা চালু করেছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে বাঙালি বেশি হয়ে যাওয়াতে। ভারতে কোটা আছে তবে তা পিছিয়ে পড়া কিছু অঞ্চলের জন্য।
নারীদের জন্য যে প্রথা রয়েছে তার আদৌও কোন প্রয়োজন আছে কিনা এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। এখন আসে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। মুক্তিযোদ্ধারা যে আমাদের সূর্যসন্তান এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা যে দেশকে রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে তাদের নাম করে এ দেশের কিছু মিথ্যাবাদী, ঠক, বাটপার লোক গুলো দেশের ক্ষতি করে চলেছে। আদতে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা কোনদিনই সনদের জন্য করেনি। এমন খুব কম মানুষ আছে যারা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে এসে সনদের জন্য লাইন ধরেছে। এখন আসে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে তারাও সনদ পেয়েছে।
রাজাকার আর গুটিকয়েক লোক বাদে ৭১ এ পুরো বাংলাদেশই তো স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। গ্রামেগঞ্জে প্রচুর মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাহলে তারা কেন কোটার সুবিধা পাবে না? তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম এ দেশের ৩০ লাখ শহীদের কারও কী মুক্তিযোদ্ধা সনদ আছে? কয় লাখ ধর্ষিতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ আছে? বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কতোজন সনদ নিয়েছেন? তার মানে আপনারা যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা চাইছেন তারা আসলে সনদধারীদের জন্য কোটা চাইছেন তাই তো।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা এইদেশে অসংখ্য সুবিধাভোগী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত। প্রতিটি সরকার বার বার গেজেট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাড়িয়েছে এবংকি মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও পরিবর্তন করেছে। কোটি মেধাবী যুবকের রাত জাগা পরিশ্রম এবং স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে কোটা-পদ্ধতি। পৃথিবীর সব দেশেই মুক্তিযোদ্ধা আছে, কিন্তু কোটা কোথাও নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরন করার এবং সম্মান করার অনেক উপায় আছে। তাই বলে তাদের নাতিপুতিদের জন্য আকাশচুম্বী কোটা সংরক্ষন করে, বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানকে রাজনীতির একটি অংশ বানাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাসির পাত্র বানাচ্ছে। চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নিয়ামক ছিল। অথচ সেই মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরীরা যখন ৩০% চাকরি দখল করে, তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং উদ্দেশ্য নিয়েই তরুন সমাজ দ্বিধান্বিত হয়। যে দেশে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলে চায়ের দোকানে পানি টানে, সেই দেশে শুধু কোটা সুবিধা পেতে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি কি স্বাধীনতার সাথে তামাশা নয়…??
সর্বোপরি নারীরা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানগন এবং উপজাতিরা বাংলাদেশের ১৭কোটি মানুষের চেয়ে এতই পিছিয়ে পড়ে নেই যে, বছরের পর বছর তাদের জন্য কোটা রেখে দিতে হবে। শুধু রেখে দিচ্ছেই না, প্রতিটি সরকার কোটা সুবিধা বাড়িয়েই চলেছে। সুপ্রিমকোর্ট চুপ, সুশীল সমাজ চুপ এবংকি সাংবাদিক সমাজও চুপ। অথচ পিছিয়ে পড়া মেধাবীদের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি কোটা প্রয়োজন।