ওটা মহিলা সিট না, ওটা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত সিট

  • আহমেদ ফয়সাল
  • মার্চ ৮, ২০১৮

বাসে বসে আছি। পাশে দাড়িয়ে আছে একটা মেয়ে, অপরিচিত। মেয়েটাকে ঘিরে কয়েকটা পুরুষ। ইচ্ছা না করে হলেও বাসের গতি আর ব্রেকের কারণে একটু পরপর কারো না কারে শরীরের সাথে মেয়েটার শরীর লাগছে। একটা অপরাধবোধ আমাকে গ্রাস করছে। উঠে মেয়েটাকে বললাম, আপু বসেন।

মেয়েটা: আমি সামনেই নেমে যাবো।

আমি: নামার আগ পর্যন্ত এখানে বসুন, নামার সময় আমাকে বসতে দিলেই হবে।

অফিস টাইম আর ভার্সিটি টাইম একই সাথে হওয়ায় বাসে ভিড়ের পরিমানটা একটু বেশিই ছিলো। সামনে দিকে একটু ঝগড়ার মত। এক ভদ্রলোক মহিলা সিটে বসে আছেন। পাশে দাড়িয়ে আছে এক মহিলা। ভদ্রলোককে বারবার বলার পরও তিনি যুক্তি দেখাচ্ছিলেন-
পুরুষ সিটে যদি মহিলা বসতে পারে, তাহলে মহিলা সিটে কেন পুরুষ বসতে পারবে না। ভদ্রলোককে আমিও একটা যুক্তি দিলাম, তবে যুক্তি দেয়ার আগে বললাম- স্যার, ওটা মহিলা সিট না, ওটা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত সিট। আর বাকীগুলো পুরুষ সিট না, সবার জন্য উন্মুক্ত সিট। আপনি চাইলেই এম.পি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, কিন্তু মহিলা এম.পি হিসাবে না। কিন্তু আপনার স্ত্রী কিন্তু এম.পি এবং মহিলা এম.পি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এর কারণ হচ্ছে এম.পি পদটা হচ্ছে নারী পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত, কিন্তু মহিলা এম.পি হচ্ছে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।

এখনকার সমাজে নির্ধারিত দিবসগুলো ঘটা/আয়োজন করে পালন করতে হয়। ১লা বৈশাখ ছাড়া আমরা নিজেকে বাঙ্গালী অনুভব করতে পারি না, ২১শে ফেব্রুয়ারী ছাড়া ভাষা শহীদদের মনে রাখতে পারি না। বন রক্ষার আন্দোলন আমরা একমাত্র বন দিবসেই করি। আর মা দিবসেই মনে করে বৃদ্ধিশ্রমে রেখে আসা মা কে দেখতে যাওয়া হয়। অক্টোবরের ১৫ তারিখ আসলে ঘটা করে হাত ধোয়া দিবস পালন করি, যেন বছরে এই একটা দিনই আমাদের হাত ধোয়া উচিত। আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে একটা লেখা দেখছিলাম, পুরোটা মনে নেই। লেখাটা এমন-
সারারাত ধর্ষন করে প্যান্টের চেইন লাগাতে লাগাতেও পুরুষটা পোষ্ট দেয়, "সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা, নারী মানেই মা, নারীর সম্মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব"।

বিশ্বাস করুন, আমাদের সমাজের নারীরা মু্ক্ত না। নারী মুক্তির আবার সমস্যাও আছে, কিছু নারীরা আবার অতিরিক্ত মুক্তি চায়। একজন পুরুষ রাস্তার পাশে দাড়িয়ে হিসু করতে পারে বলে একটা মেয়েও ওমনটা করতে চাইবে তা হতে পারে না। সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। নারী স্বাধীনতা মানে নারীকে প্রাপ্য সম্মান থেকে বহিষ্কার না করা। অতিরিক্ত স্বাধীনতা যদি তার কথায় তার স্বামী উঠবে বসবে অবস্থা হয়, সেটাও ক্ষতিকর।একজন নারী, নারী হিসাবে তার প্রাপ্য সম্মানটা চায়। বেশি কিছু তো চায় নি। সে একটু নিরাপত্তা চায়। তার নিরাপত্তার জন্য তো আপনাকে টাকাও খরচ করতে হবে না, বেশি কষ্টও করতে হবে না। বাসে মহিলা আসনটা তাকে ছেড়ে দিন। রাস্তায় তার দিকে নোংরা দৃষ্টি দেয়া বন্ধ করুন, তাকে বিরক্ত করা বন্ধ করুন, মাল বা পণ্য মনে করে আপনার মুখ থেকে অশ্লীল বাক্য বলা বন্ধ করুন। ব্যাস, আর কিছু লাগবে না। আপনার এইটুকু পরিবর্তন কিংবা সচেতনতাই একটা নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে সক্ষম হবে। আরেকটা কথা, আজ আপনার বউকে যখন নির্যাতন করছেন, তখন ভাবুন-

"আপনার বোনকে তার জামাই নির্যাতন করছে,
আপনার মা কে তার জামাই (আপনার বাবা) নির্যাতন করছে,
আপনার মেয়েকে তার জামাই নির্যাতন করছে,"
জাষ্ট এই ৩টা লাইন মনে করুন, এবার পারলে বউকে নির্যাতন করুন। দেখি, আপনি কতটা নির্যাতন করতে পারেন।

নারীর সম্মানের জন্য নারী দিবসের দরকার হয় না, দরকার পারিবারিক ভাবে চিন্তা করা। নারীকে নারী মনে না করে একজন বোন ভাবুন, একজন মা ভাবুন, একজন মেয়ে ভাবুন, একজন স্ত্রী ভাবুন, আর ভাবুন ওই নারী আপনার পরিবারের একজন সদস্য।

Leave a Comment