নারী শুধু আপনার মা, বোন, বউ, প্রেমিকা নয় নারী ঈশ্বরও বটে!

  • আকরাম হোসাইন সজিব
  • মার্চ ১১, ২০১৮

দুপুরের তপ্ত রোদে কাজ করা ছেলেটি যখন বউয়ের খাবার নিয়ে আসা অপেক্ষা করে, আমি ভালবাসা খুঁজে পাই। ঠিক একটা মাও তার ছেলেদের জন্য খাবার নিয়ে মাঠে যায় আর ছেলেরা অপেক্ষা করে আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই। সমাজে সামাজিক কিছু বাজে দিক ছাড়া নারী, পুরুষ সমন্বয়ে যে ভালোবাসা পাই সেখানে চমৎকার কিছু প্রকাশ করতে দিন ফিক্সড করতে হয়না।তবে কিছু অবাধ্য ছেলেও আছে আর মেয়েও আছে যাদের আমি কখনো ভালোবাসার কাতারে নিয়ে আসিনা, আনিনা মানুষের কাতারে। এদের বিষয়টা বাদ দিয়ে দিলাম। আমরা জন্মগত মানুষ। মানুষের দুটি স্তর একটি নারী, একটি পুরুষ।আমরা ওখানেই ভুল করে ফেলি যে,নারী ও পুরুষ সমান সমান।তা কখনো নয়। নারী ও পুরুষ সমান নয়। একটি মানুষ যেমন আরেক জনের সমান নয়, তেমনি নারী পুরুষও তাই।নারী যেমন পুরুষের একটি অংশ, পুরুষও নারীর একটি অংশ। একটি আর একটির পরিপূরক। 

আমি নারী ও পুরুষের বৈষম্য খুঁজে পাইনা আমার বাবা ও মাকে দেখলে। ওনারা দুজন এতো সুন্দর করে জীবন যাপন করেন যা অতুলনীয়।মায়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ও অংশ বাবা। মা বাবাকে ছাড়া থাকতেই পারেনা।এমন করে প্রত্যেক বাবা ও মা সমান। হয়তো এর মাঝে আমরা দুই, একটা নষ্ট চরিত্রের লোক পেতে পারি, তারা কখনো বাবা ও মা হতে পারে না। এমন কি নারী ও পুরুষ না বা মানুষও না। একটা জিনিস খেয়াল করলে পাবেন। সমাজে শিক্ষিতরা নারীকে লাঞ্চিত করে বেশি। কখনো শুনেছেন কোনো কৃষক, সারা মাঠে কাজ করে তারা কোনো নারীকে লাঞ্চিত করেছে, শুনবেনও না। যদিও দুইএকটা শুনেন তাও তার পেছনে কোনো শিক্ষত মানুষের উসকানি পাবেন। এই নানা দিবসের নামে মেয়েদের লাঞ্চিত করা হয়। কারা করে? এসব কাজ করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেরা। কিংবা কোনো বড় চাকরি জীবিরা। আর একটা জিনিস খেয়াল করিয়ে দেই।নারী কার চোখে সবচেয়ে বেশি নিচু মানের জানেন? সেটা হলো সমাজে উচ্চ শিক্ষিত ব্যবসায়ীরা। তারা নারীকে টাকা দিয়ে কিনে পণ্যের মতো ব্যবহার করে।

এসব মাথা রেখে নিজ জায়গা থেকে সচেতন হোন। টাকা সব কিছু নয়, তুমি আপনি নেই হয়ে যান। আপনাকে আমাদেরকে বাঁচতে হবে। সম্মান বড় বিষয়। সমাজ ও দেশের বর্তমান অবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই নারীর সম-অধিকারের নামে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে কতটা নিচু ও অসম্মানীত করা হচ্ছে, নারী হারাচ্ছে তার মূল সম্মান। ভোগের বস্তুতে পরিনত হচ্ছে।বেড়ে যাচ্ছে সমাজে ধর্ষণ ও হত্যার পরিমান। এসব আমাদের শিক্ষিত-মূর্খ কিছু নারী ও পুরুষ আছে ওদের নারী ও পুরুষ বলা যায় না, কলাগাছ বলা শ্রেয় মনে করি। ওদের ফাজলামিতে নারীর আজ করুণ অবস্থা। যে নারী সকল ধর্মের কাছে সম্মানের সেখানে তারা নারীকে টেনে নিচ্ছে অসম্মানের তালিকায়। এমন কোন দেশ নেই যে নারী মূল্যায়ন নেই। নারী মানে একটি দেশ, নারী মানে পৃথিবী, নারী মানে সমাজ, ঘর সব কিছুই নারী। আর সেখানে কলাগাছের লাফালাফিতে নারী আজ ঘৃনার বস্তু।নারী পাশে থাকলে একটি দেশ জয় করা যায় নিমিষে, নারী যদি পুরুষে একটি হাত হয়ে যায় পরিবার সংসার এর চেয়ে ভালো ভাবে আর চলানো যায় না।কিন্তু আমরা সেই নারীর অধিকার নামক ফালতু একটা চিন্তা এনে করে দিচ্ছি পুরুষের সাথে বৈরী ভাব। 

এতে করে হচ্ছে বিশাল সমস্যা। যারা সমাজে নারীকে নিয়ে লাফায়, তারাই বেশি নারীকে জ্বালায়। আমাদের তা বুঝতে হবে।বাংলাদেশ ও ভারত উপমহাদেশে নারী নিয়ে যত লাফালাফি বিশ্বে আর এতো কমই আছে। মানুষ যখন শিক্ষার নামে কু-শিক্ষা নেয় তখনই নারীকে নিয়ে লাফায়। ভালোবাসা প্রকাশে যেমন দিন লাগেনা, লাগেনা কোন নিদিষ্ট সময়। ভালোবাসা প্রকাশে প্রতিটি সময়ই জরুরি। মা যখন অসুস্থ থাকে তাকে সেবা দেয়ার জন্য মা দিবসের অপেক্ষা করলে মাকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।তেমনই নিজের বউ, প্রেমিকার ক্ষেত্রে এমন দিন ক্ষণ বিচার করে চললে বউ,প্রেমিকা দরকার হবেনা, তাহলে ঘরে বসে কোলবালিশ চাপাই ভালো । যারা দিবস নিয়ে এতো লাফালাফি করেন তাদের ভেতর আজও এক ফোটা ভালোবাসা দেখলাম না, দেখলাম না সুন্দর করে সংসার, পরিবার চালাতে বরং তাদের সংসার সবচেয়ে বেহাল দশা। আপনারা যারা নিজেকে শিক্ষিত মাথা মনে করেন। তারা দেশ, সমাজে ও সব ক্ষেত্রে নারী, পুরুষের ভালোবাসাতে কিভাবে সুন্দর করে চলতে পারে তা শিখাতে পারেন।একটা নারীর চাহিদা কি থাকে, কি করলে সে সব সময় সুখি থাকবে তা বর্ণনা করতে পারেন, কিন্তু না বরং অধিকার অধিকার নামে শেষ করে দিচ্ছেন ভালোবাসার সকল মেরুদণ্ড। মাঝে মাঝে কষ্ট হয় খুব। 

কিছু অজ্ঞমূর্খের জন্য যেমন ঈশ্বর লাঞ্চিত হয়, তেমনি নারীও লাঞ্চিত হয়। পৃথিবীতে ঈশ্বরের পর সবচেয়ে বেশি লাঞ্চিত হয় নারীরা। আদি কাল থেকে চলে আসছে। এটা থেকে বের হতে হলে নিজ জায়গা থেকে লড়তে হবে। মনে রাখতে হবে দিন শেষ হলে আপনার ছায়াও আন্ধকারে মিশে যায়। আর মানুষ তো ক্ষনিকের সঙ্গি। অধিকার, দিবস বাদ দিয়ে কিভাবে নিজের চাহিদা গুলো পূরণ হয় সেদিকে হাটুন। নিজেকে শিক্ষিত করে তুলুন, পণ্য নয়। নারীর উপর অত্যাচার প্রকৃতিও স্বাভাবিক ভাবে নেয়। আজ আপনি একটা মেয়েকে লাঞ্চিত করলেন। কাল আপনার উপর গজব আসবে প্রকৃতি থেকে।নারীকে ভালোবাসুন। ভালো থাকতে দিন। নারীই কেবল ঈশ্বর হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আজ আমরা হারাচ্ছি প্রেম, ভালোবাসা ও সুন্দর করে চলার উপায়। হারিয়ে ফেলতেছি সমাজে উচ্চ মেধা অধিকারী বাচ্চা মেয়েদের, হারাচ্ছি, তনু, মনুর মতো হাজারো নারী। আপনাদের সকল প্রকার গুঁরামী থেকে বেরিয়ে আসুন। বুঝতে শিখুন মানুষের আসল দিক গুলো।এটা আমার আহ্বান।দিন বা দিবস বিবেচনা করে আবার নারী পুরুষ আলাদা করার চেষ্টা করবেন না, তাতে বরং সুখ নয় দুঃখই আসবে সমাজ ও দেশে। নারী কোন পণ্যের বক্স নয় খেয়ে ফেলে দেবেন, পুরুষ কোন পণ্যের বক্স নয় খেয়ে ফেলে দেবেন। নারী ও পুরুষ উভয় মানুষ। আমরা একে অন্যের অংশ হয়ে মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই। এটাই আজ থেকে শপথ করুণ। শুধু নারী দিবসে নয় বরং সব সময় নারীকে ভালোবাসতে শিখুন। সম্মান দিতে শিখুন। নারী শুধু আপনার মা, বোন, বউ, প্রেমিকা নয় নারী ঈশ্বরও বটে।


 

Leave a Comment